ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ভারতের চাল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত

চাল আনতে এলসি পাঠানো ব্যবসায়ীদের কী হবে?

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চাল আনতে এলসি পাঠানো ব্যবসায়ীদের কী হবে?

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বাংলাদেশে চাল রফতানিতে ভারত সরকারের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পেট্রাপোল বন্দরে পৌঁছেছে। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বলবত হবে। চলবে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত। তবে ইতোমধ্যে যারা এলসি খুলেছেন, তারা চাল আনতে পারবেন কি-না, তা নিশ্চিত নয়। ফলে সংকটের সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল (নন বাসমতি) আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি চাল আসত। চলতি বছর প্রথম দফায় হাওড়াঞ্চলে বন্যা, দ্বিতীয় দফায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেশে চালের উৎপাদনে গুরুতর ক্ষতি করে। দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোর প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি চাল উৎপাদন করে। এই জেলার বড় অংশও (ভবদহ-সংলগ্ন) এবারের বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হয়। ফলে চালের উৎপাদন এখানেও কমেছে। সংকটের কারণে দেশে চালের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। সরকার ও ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির চেষ্টা করে চলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকার সে দেশে সংকটের অজুহাতে বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধের নির্দেশ দেয়ায় আরও বিপাকে পড়তে চলেছে বাংলাদেশ। সীমান্তের ওপারের রফতানিকারক ও সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত সরকার। নয়াদিল্লী থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন পেট্রাপোল কাস্টমস দফতরে এসে পৌঁছেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেন ট্রেড পলিসি ২০১৪-২০১৯ অনুযায়ী ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড অলোক চতুর্বেদী স্বাক্ষরিত নোটিফিকেশন নম্বর ৭১ (আরই-২০১৭)/২০১৪-২০১৯-এ আদেশ জারি করা হয় ১২ সেপ্টেম্বর। এই আদেশ আগামী ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চাল আমদানির জন্য বাংলাদেশী যে সব ব্যবসায়ী এর আগেই এলসি খুলেছেন, তাদের অর্ডার দেয়া চাল আসবে কি-না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পেট্রাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ভারত থেকে যে হারে চাল বাংলাদেশে রফতানি হচ্ছে, তাতে আমাদের দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাল রফতানি বন্ধ করতে একটি চিঠি পেট্রাপোল কাস্টমসে পাঠিয়েছে। বেনাপোলের চাল আমদানিকারক হাজী মুছা করিম এ্যান্ড সন্সের মালিক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ভারত সরকার খুব তাড়াতাড়ি চাল রফতানি বন্ধ করবে বলে লোকমুখে শুনেছি। ভারত থেকে এখনও কোন রফতানিকারক তাদের জানাননি। চাল আমদানি বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বেন।’বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারত সরকার প্রায়ই রফতানির ক্ষেত্রে এ রকম আচরণ করে থাকে। এর আগেও চাল, পেঁয়াজ, পাট নিয়ে একই কান্ড- ঘটিয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারের উচিত অন্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করা। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিম বলেন, ‘ভারত থেকে প্রচুর চাল আসছে। কিন্তু বন্ধের কোন খবর আমরা পাইনি। খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে চালভর্তি প্রায় ২০০ ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। গত ১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৯৯৯ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে।’ বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোঃ শওকাত হোসেন জানান, আমদানি করা চাল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত খালাস দেয়া হচ্ছে। ভারত থেকে চাল রফতানি বন্ধের কোন নির্দেশনা আমরা হাতে পাইনি। ফলে এ ব্যাপারে আমাদের বলারও কিছু নেই।
×