ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার কারণে চালের দাম বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চার কারণে চালের দাম বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চার কারণে চালের সঙ্কট বেড়েছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যা, মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চাল আমদানির অনুমতি দেয়া ও দেরিতে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তই চালের সঙ্কটকে তীব্রতর করেছে। এছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষকে ত্রাণ হিসেবে চাল দেয়া এবং বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কারণেও চালের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চের শেষে হাওড় অধ্যুষিত দেশের ৬ জেলায় পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মধ্য দিয়ে দেশে চাল সঙ্কট শুরু হয়। হাওড়ের বন্যাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেয়। হাওড়ের বন্যার পানি কমতে থাকলেও এরই মধ্যে শুরু হয় দেশের ৩২ জেলায় অকাল বন্যা। এই বন্যা চালের সঙ্কটকে ক্রমান্বয়ে তীব্রতর করেছে। এর ফলে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরের মোটা চালের দাম এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকায় উঠেছে। সরু চালের কেজি এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে কম পক্ষে ১০ লাখ টন বোরো ফসল পাওয়া যায়নি। অপরদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে সরকার মিলারদের কাছ থেকে ৮ লাখ টন চাল ও ৭ লাখ টন ধানসহ মোট ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও তা পাওয়া যায়নি। এরা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বোরো ধান ও চাল মজুদ করেছে। যা এখনও পর্যন্ত ওইসব মিলারদের গুদামেই রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কারসাজি করে সরকারকে ধান ও চাল না দেয়া এবং অবৈধ মজুদের অভিযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১৬শ’ ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এর পরও সুরাহা হয়নি। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অসৎ মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবৈধ মজুদকৃত চালও বাজারে চলে আসবে। আর তখনই চালের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। চালের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই দামও কমবে।’ বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরিতে চাল আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তটি এই সঙ্কটের জন্য দায়ী। সময় মতো শুরুতেই চাল আমদানির অনুমতি দিলে সঙ্কট এত ভয়াবহ হতো না। চালের আমদানি শুল্ক দেরিতে কমানোর সিদ্ধান্তটি চালের সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থতার আরেকটি কারণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা মনে করেন সরকার চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি দুই দফায় না নিয়ে যদি শুরুতেই এক দফায় নিত, তাহলে উপকার পাওয়া যেত। বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেক আগ থেকেই চাল আমদানির সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। সরকার তখন চাল আমদানির অনুমতি দেয়নি। আর যখন সরকার চাল আমদানির সুযোগ দিল তখন তা সুফল বয়ে আনল না। অর্থাৎ চালের দাম কমল না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে নিজামউদ্দিন বলেন, ‘যখন শুল্ক কমানো হলো তখন ভারত তার চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে শুল্ক কমানোর পরেও বেশি দামে চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারেনি।’
×