ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাশে আছি পাশে থাকব...

প্রকাশিত: ০৩:০২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পাশে আছি পাশে থাকব...

আর্ত মানবতার ডাকে নীরব থাকা বা তা উপেক্ষা করা সহজ নয়। তাই দেখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বহারা, অসহায় ও নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে সদর্পে বলতে পেরেছেন, ‘আমি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। প্রয়োজনে আমাকে আপনাদের পাশে পাবেন।’ বিভীষিকা ও বীভৎসতা ডিঙিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্বাসবাদী জানিয়েছেন যে, শরণার্থীদের পাশে আছেন তিনি। দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পাশেই থাকবেন। মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার কথা দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর মানবতাবাদী উদার রাষ্ট্রনায়কোচিত এই ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। গত মাস থেকে নতুন করে নাফ নদীর বানের মতো উত্তাল গতিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, নিধনযজ্ঞের মধ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এক নরক থেকে কোনভাবে পালাতে পেরেছেন সহায়-সম্পদ ফেলে এক বস্ত্রে। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী হারানো অনেক নারীই ধর্ষিত হয়েছে। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে খুন কিংবা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। সব কর্মকা-ই মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে পালিয়ে আসা নারীরা লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। শুনে শেখ হাসিনা কেঁদে ফেলেন। মানবতার এই অপমান তাকে ব্যথিত করেছে, তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, তবে অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করা হবে না। এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ সে দেশের জন্যও যে অপমানজনক সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। এই দৃঢ় সাহসী উচ্চারণ বাংলাদেশের পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশ সশস্ত্রযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদারদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীন করেছে। সেদিন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশ দখল করে নির্বিচারে গণহত্যা করেছে। সংখ্যালঘুসহ বাঙালীদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। তাই দেশত্যাগী শারণার্থী জীবনের কঠিন কঠোর মানবেতার জীবন সম্পর্কে ধারণা এ দেশবাসীর একাত্তরেই ঘটেছে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বজন হারানোর বেদনার ভার তিনিও বয়ে চলেন। স্বজন হারানো রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্ট বেদনাকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে শেখ হাসিনা তাদের সান্ত¡না দিয়েছেন। স্বজনহারারা শেখ হাসিনার মাতৃরূপ উপলব্ধি করতে পারে। মা মা বলে কেঁদেছেন। অশ্রুসজল নয়নে শেখ হাসিনা আদর করে এবং ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নারী ও শিশুদের। মিয়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার যেভাবে সংখ্যালঘু নিধন করে দেশত্যাগে বাধ্য করছে তেমনিভাবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট এ দেশে এথনিক ক্লিনজিংয়ের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালানোসহ দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। আজ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধনে সেই তারাই মায়াকান্না দেখাচ্ছেন। সামরিক জান্তা শাসক জিয়ার আমলে ১৯৭৮ সালে সেই যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু তা আজও চলছে। বিদেশী সাহায্য লাভের প্রত্যাশা ও রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার কাজটি তারই সময়ের। খালেদা-জামায়াত জোটের আমলেও তারা এসেছে। এখন তো চার লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আগের থেকেই রয়েছে। নিজ দেশে দীর্ঘদিন পরবাসী হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হতে হচ্ছে, কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব নেই। অনুপ্রবেশকারী বাঙালী হিসেবে সুচিও সন্ত্রাসী বাঙালী হিসেবে অভিহিত করছে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে সামরিক জান্তা শাসিত। তারা আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মানে না, মানতে চায় না। দীর্ঘদিন একঘরে হয়ে থাকার ফলে তারা বিশ্ব সভ্যতার অংশীদার হতে পারছে না। জাতিসংঘ তাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করুক। তাদের জন্মভূমিতে বসবাসের নিরাপদ ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনা ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বা ‘সেফজোন’ গড়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং কোফি আনানের সুপারিশে যে কথা বলা হয়েছে তার আলোকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান খুবই জরুরী। আমরা সবাই চাই তারা নিরাপদে নিজের দেশে, নিজ গৃহে ফিরে যাক।
×