ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাজারের খাদেমসহ দুই নারীকে গলা কেটে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মাজারের খাদেমসহ দুই নারীকে গলা কেটে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শহরের শীল মন্দিরে একটি মাজারে খাদেমসহ দুই নারীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সকালে সদরের ভিটি শীল মন্দিরের হযরত শাহ সোলায়মান লেংটার মাজার থেকে এই দুই নারীর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ লাশ দুটি মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে মাজারটির খাদেম আমেনা বেগম (৬০)। তার বাড়ি গজারিয়া উপজেলার ঝাপটা গ্রামে। অপর নারী তাইজুন খাতুন (৪৮)। তার বাড়ি বকচর গ্রামে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাজারের মালিক মাসুদ কোতয়াল (৫৫) এবং ওই এলাকার বাবু (২৫) নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতের যে কোন সময় তাদের জবাই হরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল থেকে মানিব্যাগসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। খাদেম দীর্ঘদিন ধরে এ মাজারে অবস্থান করছিলেন। হত্যাকারণ উদ্ঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সদর থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসাইন জানান, সেক্সচুয়াল বা জমি-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সেক্সচুয়াল আলামত পাওয়া গেছে। জমি-জমা, টাকা উত্তোলন এবং মাজারের নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না। এদিকে ঘটনাস্থলে খাদেমের স্বজনেদের আহাজারি ও মাজার ঘিরে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে বিশেষ এক পরিবেশ বিরাজ করছে। মাজারটি ক্ষেতের মাঝে বালু ভরাট করে তৈরি। টিনের একটি ছোট ঘরের এক পাশে মাজার আর একপাশে খাদেম আমেনা একা থাকতেন মাজারের আশপাশে বসতি ছিল কম। অল্প কিছুদিন ধরে কিছু বাড়িঘর এখানে তৈরি হয়েছে। নিহত তাইজুনের মেয়ে রূপজান জানান, তার মা মঙ্গলবার এখানে এসেছিল। এই মাজারের তিনি একজন ভক্ত। কেন এ ঘটনা ঘটল তিনি তা বলতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন তার মায়ের কোন শত্রু নেই। স্থানীয় ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসনে আরা জানান, মাজার প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিহত আমেনা খাতুন মাজারটির দেখভাল করছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে ভক্তরা আসে। জিগির হয়। গান-বাজনা হয়। আবার চলে যায়। প্রতি চৈত্র মাসে এখানে ওরসও হয়। এই মাজারে কারা আসে কারা যায় তা বলতে পারছেন না তিনি। মাজারের মালিক মাসুদ কোতয়াল জানান, বুধবার সকালে তার বাড়ি শীল মন্দির থেকে মাজারে গরুর জন্য ঘাস কাটতে আসেন তিনি। এসে দেখেন দরজা খোলা এবং গলা কাটা অবস্থায় লাশ দুটি পড়ে আছে। ঘর থেকে রক্ত গড়িয়ে পিড়ায় পড়ে আছে। এটা দেখে তিনি পুলিশে খরব দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর তিনি এই মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তার একটা অসুখ ছিল। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও তিনি ভাল হচ্ছিলেন না। পরে মাজারে শায়িত বারেক লেংটার উসিলায় তিনি ভাল হন। এরপর বারেক লেংটা মারা গেলে তিনি এখানে তার মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে তিনি এই মাজারের খেদমত করেন। মাসুদ জানান, তিনি গরু পালেন এবং দুধ বাজারে বিক্রি করেন। মাজারের আশপাশের স্থানীয়রা জানান, মাজারকে ঘিরে চারপাশে রীতিমতো মাদকের আড্ডা বসত। এর মধ্যে উঠতি বয়সের লোকজনদের সংখ্যাই বেশি ছিল। প্রতি বৃহ¯পতিবার এখানে গান-বাজনা হতো। এই মাজারে নারী-পুরুষ উভয় ভক্তই আসত। বারেক ল্যাংটার মাজারে ৩০ বছর ধরে আমেনা বেগম খাদেম হিসেবে নিয়োজিত ছিল। আমেনার ছেলে মোঃ জাবেদ জানান, আমেনার স্বামী খালেক মিজি মারা যাওয়ার পর থেকেই সে মাজারে খাদেম হিসেবে ছিলেন। গতকালও আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল মোবাইলে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানা নেই। তাইজুনের ছেলে কফিল উদ্দিন জানান, আমাদের বাড়ি সদর উপজেলার বকচর গ্রামে। তবে মা দুই ছেলের সঙ্গে ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় থাকত। মনের শান্তি পূরণের জন্য সে প্রায়ই আসত এখানে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে মাজারে আসে।
×