ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হলো ঢাকা ডকক্লাব

প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে বহুবিধ আয়োজন, ব্যতিক্রমী বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে বহুবিধ আয়োজন, ব্যতিক্রমী বাজার

মোরসালিন মিজান ॥ ডকুমেন্টারি ফিল্ম নিয়ে খুব চমৎকার এবং অর্থপূর্ণ একটি আয়োজন ঢাকা ডকক্লাব। গত ৮ সেপ্টেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছিল। শেষ হলো ১৩ সেপ্টেম্বর। একটু নীরবে শুরু। শেষও হলো নীরবে। তবে ঢাকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম নেটওয়ার্কের উদ্যোগ যে যথেষ্ট সফল হয়েছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছয় দিনের আয়োজনে দেশ-বিদেশের নামকরা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, টেলিভিশন সম্প্রচারক, চলচ্চিত্র পরিবেশক এবং সিনেমায় অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। চলে ‘প্রামাণ্যচিত্রের যৌথ প্রযোজনার কলাকৌশল ও যৌথ প্রযোজনার বাজার’ বিষয়ক কর্মশালা। দেশীয় নির্মাতাদের যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের কলাকৌশল শেখানো হয়। সব মিলিয়ে অন্যরকম আয়োজন বটে। কর্মশালার কথা আগে বলতে হয়। প্রথমে অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণে অংশ নেন। তিন দিন ধরে চলে প্রশিক্ষণ। দেশী-বিদেশী মেন্টররা বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় ভাগে ছিল যৌথ প্রযোজনা সংক্রান্ত পিচিং। বাছাইকৃত ১৩ জন অংশগ্রহণকারী ইতোমধ্যেই যেসব প্রকল্প মেন্টরিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন, দেশী-বিদেশী প্রযোজক টেলিভিশন সম্প্রচারক কমিশনিং এডিটর চলচ্চিত্র পরিবেশক চলচ্চিত্র বাজার বিশেষজ্ঞ এবং সিনেমায় অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সামনে পিচিংয়ের মাধ্যমে সেসব প্রকল্প উপস্থাপন করেন। প্রত্যেক নির্মাতা তার চলচ্চিত্র প্রকল্প উপস্থাপন ও প্রশ্নোত্তরের জন্য ১৫ মিনিট করে সময় পান। পরে সকলেই আগ্রহী টেলিভিশন সম্প্রচারক, চলচ্চিত্র পরিবেশক কিম্বা অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আরও বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। ডিসিশন মেকার হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলভিয়া বেডনার্জ, বোজানা ম্যারিক, ক্যামিলা নিয়েলসন, জেন রে এন. রাশেদ চৌধুরী, আমান আশরাফ ফয়েজ, আবু শাহেদ ইমন ও তমাল চক্রবর্তী। নির্বাচিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল- বাংলাদেশের হুমায়রা বিলকিসের ‘বিলকিস এ্যান্ড বিলকিস।’ ফরিদ আহমেদের ‘এ ট্রি ইজ লুকিং এ্যাট গড।’ সাইম জাহাঙ্গীরের ‘জল ঘর বসতি।’ সুমন দেলোয়ারের ‘মাই সিস্টার, মাই ফ্রেন্ড।’ ফাতেমা আমীনের ‘হোয়াট ইজ মাই ফল্ট?’ এবং তাসমীয়া আফরিন মৌয়ের ‘স্টোলেন উইংস।’ ভারতের অংশগ্রহণকারীদের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল তমাল চক্রবর্তীর ‘আই এ্যাম ফ্রম আফ্রিকা।’ ফারহা খাতুনের ‘কোহরান।’ অরুণ কার্তিকের ‘এ্যানিম্যাল ফার্ম।’ কবিতা বেহলের ‘সিঙ্কিং ফিলিং।’ শঙ্খরের ‘মেটামরফোসিস।’ বিশ্বজিৎ দাসের ‘ফিগারস এ্যান্ড কমেন্টস।’ এবং নন্দন সাক্সেনার ‘গুরু অব টি ফায়ার ইটারস।’ ঢাকা ডক ক্লাবের বিভিন্ন দিনে পাঠদান করেন চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নির্মাতা ও শিক্ষকরা। বিশেষ করে বলতে হয় মাস্টার ক্লাসটির কথা। ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এই পাঠদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাঠদান করেন কোরিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কিম ডং ওন। অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ডেনমার্কের চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্যারোলিনা লিডিন, ভারতের নিলোৎপল মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্রের অড্রিয়াস স্টোনিস, ইউরোপিয়ান ডকুমেন্টারি নেটওয়ার্কের পরিচালক পল পওয়েলস, পর্তুগালের পপ ফিল্মসের পরিচালক ও প্রযোজক গ্রাকা কাস্টানহেইরা এবং জাপানের রয়োতা কোতানি। ডক ক্লাবে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী দিন সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে দেখানো হয় কামরান আহমেদ সায়মন নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘আর ইউ লিসেনিং।’ দ্বিতীয় দিন দেখানো হয় কিম ডং ওন নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘রিপ্যাট্রিয়েশন।’ তৃতীয় দিন দেখানো হয় একই নির্মাতার ডকুফিল্ম ‘জুং ইল-উ, মাই ফ্রেন্ড।’ চতুর্থ দিন প্রদর্শিত হয় অড্রিয়াস স্টোনিজের ‘ওমেন এ্যান্ড দ্য গ্লেসিয়ার।’ পঞ্চম দিনে প্রদর্শিত হবে সিক্সটিনাইন মিনিটস অব এইটি সিক্স ডেইজ।’ ষষ্ঠদিন মিরোসøাভ জ্যানেকের ‘নরমাল অটিস্টিক ফিল্ম’ দেখিয়ে শেষ হয় প্রদর্শনী। শেষ দিন বুধবার ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে এদিন আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে নির্বাচিতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ডক ক্লাবের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সব মিলিয়ে কেমন হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একটা নতুন কিছু শুরু করতে চেয়েছিলাম। কাজটা সহজ ছিল না। যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। দেশী-বিদেশী নির্মাতা ও প্রযোজকদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছিল ঢাকা ডক ক্লাব। বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা এতে দারুণ উপকৃত হয়েছে। ভবিষ্যতে আয়োজনটি আরও বিশাল আকারে করার ইচ্ছা আছে বলে জানান তিনি।
×