ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কারসাজি ॥ পেঁয়াজের দাম ফের বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সিন্ডিকেটের কারসাজি ॥ পেঁয়াজের দাম ফের বাড়ল

এম শাহজাহান ॥ আবার ঝাঁজ বাড়ল পেঁয়াজের। প্রতি কেজিতে দাম বাড়ল ৫-৮ টাকা পর্যন্ত। শীঘ্রই সরবরাহ না বাড়লে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ীরা। কোরবানি ঈদের পর সাধারণত মসলা জাতীয় এই পণ্যটির দাম কমে যায় কিন্তু এবার উল্টো মূল্য বেড়ে গেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৫০-৫৬ এবং এবং আমদানিকৃতটি ৩৫-৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে মানভেদে এসব পেঁয়াজ ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চাহিদা কমার পরও দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারক সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো বিষয় মাথায় রেখে ভোগ্যপণ্যের সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। দাম দ্বিগুণ হয়ে সেই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০-৬৫ টাকায়। সরকারী বিভিন্ন তৎপরতায় সেই পেঁয়াজের দামের নাগাল টেনে ধরা সম্ভব হয়। এখন আবার দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে যেসব জিনিসের দাম বেড়েছে সেসব পণ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য মনিটরিং টিম সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে। নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য শীঘ্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত একটি বৈঠক করা হবে। ঠিক কি কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। এছাড়া এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা, ঋণ সুবিধা এবং এলসি সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাবদ ব্যবসায়ীদের খরচ পড়েছে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২৫ টাকা। অথচ রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫৬ টাকা পর্যন্ত। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারি মূল্য বেশি হলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়বেই। আর সেটির প্রভাবও ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে। এদিকে, সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব (টিসিবি) বাংলাদেশের তথ্য মতে, বর্তমান ৩৫ থেকে ৫৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সংস্থাটির হিসেবে, গত এক মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর সারা বছরে দাম বাড়ার হার ৪৬ শতাশং পর্যন্ত। এদিকে, দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে ২ লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় উঠে সিন্ডিকেট চক্র। এবারের রমজানে পেঁয়াজ নিয়ে কোন কারসাজি না হলেও কোরবানি ঈদের আগে বাজার অস্থির করার কারসাজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসেবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়ার তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর শ্যামবাজারের একজন আমদানিকারক ও বড় আড়তদার জনকণ্ঠকে বলেন, পচনশীন কাঁচা পণ্যের বাজার চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে। বাজারে এখনও দেশীয় পেঁয়াজের জোগান আছে ঠিক, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলে এত তাড়াতাড়ি দাম বাড়ত না। তিনি বলেন, দেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে মজুদকৃত পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকের মোকামে পানি উঠে পণ্য দ্রব্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতায় ইতোমধ্যে খাতুনগঞ্জের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণেও এখন বাজার চড়া বলে তিনি জানান।
×