ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিআইএন রিপোর্টে তথ্য ॥ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা- প্রধানমন্ত্রী

দুবাইসহ ১২ দেশে জিয়া পরিবারের পাচার করা অর্থ ১২শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুবাইসহ ১২ দেশে জিয়া পরিবারের পাচার করা অর্থ ১২শ’ কোটি টাকা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া পরিবারের দুবাইসহ ১২ দেশে ১২শ’ কোটি টাকা পাচার-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের (জিআইএন) রিপোর্ট সরকারের হাতে এসেছে এবং এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে জিআইএনের রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণিত হলে যারা দেশের জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি এ বিষয়টি তুলে ধরতাম তখন বাংলাদেশে বহু লোক আছে মায়াকান্না কানবে আর বলবে আমরা নাকি হিংসাত্মক হয়ে পড়েছি। যেহেতু এটা বিরোধী দল থেকে এসেছে, তখন দেশের মানুষ সত্যিই এটা উপলব্ধি করতে পারবে জনগণের সম্পদ কীভাবে লুট করেছে। যার কারণে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মানি লন্ডারিং আইনে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই আমি সবকিছু বলব না, তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন করতে গিয়ে ফখরুল ইমাম জিআইএনের রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরেন। বলেন, জিআইএনের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া থেকে আরম্ভ করে তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে যে টাকা পাচার করেছে তার একটি তালিকা আছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা তা পড়ে শোনানোর জন্য সমম্বরে বলতে থাকেন। ফখরুল ইসলাম তার কাছে থাকা রিপোর্টের কিছু অংশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, জিআইএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু দুবাই নয়, অন্তত পক্ষে ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ আছে। যার প্রাক্কলিত মূল্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সৌদি আরবে আহমদ আল আসাদের নামে আল আরাবা শপিংমল রয়েছে। কিন্তু শপিংমলটির মালিকানা হলো বেগম জিয়ার। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ইকরা। এটির মালিকও বাংলাদেশী এবং এটার মালিকও উনি এবং তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের নামে পুরো মালিকানা দেখা যায়। তাছাড়া খালেদা জিয়ার ভাতিজা তুহিনের নামে কানাডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ সিঙ্গাপুরের হোটেল মেরেনডির ১৩ হাজার শেয়ারের মালিক। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের নামে লন্ডনে স্টেন্ডফোর্ড ও অলগেটিতে দুটি এ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। আরেকমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নামেও এ্যাপার্টমেন্ট আছে। বিএনপি আমলের মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ন্ত্রীর নামে দুবাইতে আছে বিলাসবহুল এ্যাপার্টমেন্ট। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস ও তার সন্তানদের নামে কিনেছেন দুটি এ্যাপান্টমেন্ট। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের নামে সিঙ্গাপুরে রয়েছে বিলাসবহুল এ্যাপার্টমেন্ট। এসব তথ্য জিআইএন প্রতিবেদন থেকে তুলে ধরলাম। এর জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে তখন নিশ্চয় আমাদের কাছে আছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এই তদন্তের মাধ্যমে এ তথ্য যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এ কথা তো সকলেই জানে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর একদিকে মানুষ হত্যা-খুন করেছে। আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। একদিকে সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ, অপরদিকে ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করা, অর্থ পাচার করা এ ধরনের বহু অভিযোগ তো জনগণ সব সময় করেছে এবং এটা সকলেই জানে। এ জন্য খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচারকৃত কিছু টাকা আমরা ফেরত এনেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে। বিষয়টি তোলার জন্য সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি বিষয়টি তুলে ধরতাম বাংলাদেশে বহু লোক আছে মায়াকান্না কানবে আর বলবে আমরা নাকি হিংসাত্মক হয়ে পড়েছি। যেহেতু এটা বিরোধী দল থেকে এসেছে, তখন দেশের মানুষ সত্যিই এটা উপলব্ধি করতে পারবে জনগণের সম্পদ কীভাবে লুট করেছে। যার কারণে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু তারা দেশের উন্নতি করতে পারেনি। বরং আর্থসামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। সরকারপ্রধান বলেন, জনগণের সম্পদ যারা লুটে নিয়েছে নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত করে যখনই আমরা সঠিক তথ্য পাব কোথায় কীভাবে রয়েছে নিশ্চয় আমরা ফেরত আনার পদক্ষেপ নেব। ইতোমধ্যে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত চলার স্বার্থে হয়তো সব আমি বলতে পারলাম না। তবে সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি শান্তিপ্রিয় দেশ গঠনে সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সব সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকগুলোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জঙ্গী কর্মকা- একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আমাদের মানুষ ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধ নয়। ফলে ইতোমধ্যে জঙ্গী দমনে আমাদের সফলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। জঙ্গী দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, জঙ্গীরা যেমন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কর্মকা- পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি তাদের অর্থের যোগানদাতা ও মদদদাতাগণও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিএনপি দুর্নীতির মহোৎসব করেছে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে তখনই দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছে। আর বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় গিয়ে দেশে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে দুর্নীতির মহোৎসব শুরু করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মাধ্যমে দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন আইন সংশোধন করে অধিকতর শক্তিশালী করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে। শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, দফতর/সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়সমূহের প্রধানের নেতৃত্বে নৈতিকতা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
×