ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে হতাশা

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ভেঙ্গেছে ডিএসই

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ভেঙ্গেছে ডিএসই

অপূর্ব কুমার ॥ দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (প্রশাসন থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ) সুফল পাচ্ছেন না সংস্থাটিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উল্টো ডিএসই প্রতিষ্ঠানটির ২০১০ সালের বেতন কাঠামোটি ভেঙ্গে দিয়ে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনটি ভঙ্গ করেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বেতনভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর প্রতিষ্ঠানটি বেতন কাঠামোসহ যাবতীয় কর্মকা- পরিবতর্নের কথা ছিল না। ডিএসইর চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ সালে সংস্থাটির কর পরবর্তী প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ১২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়ায় ০.৬৭ টাকা। আর ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়াবে ০.৬৬ টাকা। প্রস্তাবিত এই বাজেটে সংস্থাটি ১৩.৫৫ শতাংশ কম মুনাফার প্রাক্কলন করেছে। এদিকে সংস্থাটির ঢাকার নিকুঞ্জে নির্মিতব্য ভবনটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে। নিকুঞ্জের এই ভবনটির জন্য বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় ২৮.৩৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালে ভবনটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে ২০১৮ সালে তা ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এই ভবনটির জন্য ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বাড়ানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসইতে ২০১০ সালের প্রবর্তিত বেতন কাঠামো দিয়েই এতদিন চলে আসছিল। কিন্তু গত মে মাসে সর্বশেষ বেতন কাঠামো সংশোধন করে। কিন্তু পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এখনও প্রচলিত বেতন কাঠামোও নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কর্মরতরা গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ইনক্রিমেন্টসহ যাবতীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডিএসইর নির্ভরশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের ৮৬২তম সভায় স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সেখানে কর্মরত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক বেতনের ১৫ শতাংশ ১ মে থেকে বাড়ানোর সুপারিশ অনুমোদিত হয়। অধিকন্তু ১৫ শতাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগ্যতার ভিত্তিতে ৩১ মের মধ্যে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে যে, মানবসম্পদ বিভাগ যোগ্যতার মাপকাঠিতে এই বেতন কিভাবে বাড়ানো যাবে সেটি পর্যালোচনায় ভিত্তিতে সম্পন্ন করবে। ডিএসইর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসইতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭০। এর মধ্যে ৭০ জনকে শুধু ১৫ শতাংশই প্রদান করা হয়েছে। বাকি ১৫ শতাংশকে একেবারেই বঞ্চিত করা হয়েছে। বাকি ৩০০ জনের মধ্যে ২ থেকে ৩ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করলেও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সেটি অগ্রাহ্য করেছেন। অর্থাৎ তাদের মতে, কেউই যোগ্য ছিল না ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বর্ধিত বেতন পাওয়ার। এরপর জুলাই মাসের বেতনে কারো ইনক্রিমেন্ট হয়নি। আদৌ কবে হবে সেটিও কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। জানা গেছে, আগামী ২০১৯ সালের আগে আর বেতন ভাতাদি বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে কি আছে সেটি বড় বিষয় না। কারও তো বেতন কমানো হয়নি। আর পদোন্নতি ও বেতনভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কার কতটুকু সক্ষমতা আছে। এটা তো একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান তো নিজেদের ঠেকিয়ে তারপর সবকিছু করবে। এখানে সমস্যা কোথায়। তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে যাই থাকুক, প্রতিষ্ঠান চাইলে যে কোন বিষয় পরিবর্তন করতে পারে। আজকে যদি এই মার্কেট না টেকে, আমাদের যদি আয় না থাকে, তাহলে বেতন দেব কিভাবে। নিকুঞ্জ ভবনের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নিকুঞ্জ ভবনের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এত টাকা এই বিল্ডিংয়ের জন্য খরচ হবে কেন। আগেই বিল্ডিংয়ের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেই টাকাই তো খরচ হয়নি। এখন আবারও কেন বিল্ডিংয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
×