ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে মিয়ানমারের প্রতি চীনের জোরাল সমর্থন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মতপার্থক্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মতপার্থক্য

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরী বৈঠকের আগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। হত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মিয়ানমার ত্যাগের বিষয়ে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের ওই জরুরী বৈঠক হয়েছে। এর আগে চীন আবারও মিয়ানমার সরকারের সামরিক দমনাভিযানের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। একে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে বর্ণনা করেছে। এএফপি ও বিবিসি। মিয়ানমারে কয়েক সপ্তাহ ধরে সহিংসতায় ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়েছে। রাখাইন রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে কোন বিদেশী গণমাধ্যম কর্র্মীকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মুসলিম এবং তারা দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত নয়। ২৫ আগস্ট কিছু সশস্ত্র রোহিঙ্গার আকস্মিক হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু লোক হতাহত হওয়ার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে ৪ লাখের কাছাকাছি মানুষ শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব শরণার্থীর ৬০ শতাংশই শিশু বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি সেনা অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই তারা যা করার করছে। গণহত্যা ও নিপীড়নের নিন্দা না জানিয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডকে সমর্থন জানানোর জন্য সুচি এখন আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে আছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার সোমবার বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যা ঘটছে তা টেক্সটবুক এথনিক ক্লিনজিং’ বা আক্ষরিক অর্থেই জাতিগত নির্মূল অভিযান। বুধবার রাখাইনে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৫ আগস্ট বর্মার নিরাপত্তা পোস্টগুলোতে হামলার জের ধরে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আবারও নিন্দা জানাচ্ছি এসব হামলার যা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু তাদের আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ হওয়া ও তাদের ওপর নির্যাতন এটাই প্রমাণ করে যে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারছে না। এছাড়া হত্যা, নির্যাতন, গ্রাম পুড়িয়ে ও ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লংঘনের যে অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তাতেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিংসতা বন্ধ করে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানান হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগেরও প্রশংসা করেছে হোয়াইট হাউস। ব্রিটেন এবং সুইডেনের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠক আহবান করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের একটি যদি কোন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় তবে সেটি আটকে যায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকে তাই ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চীন এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। মঙ্গলবার চীন আবারও বলেছে, তারা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের পাশে আছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, মিয়ানমার সরকার জাতীয় উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যে চেষ্টা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তার পাশে থাকা। ধারণা করা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেন কোন নিন্দা প্রস্তাব আনা না হয় সেজন্যই চীন ওই বিবৃতি দিয়েছে। রাশিয়ার অবস্থানও মিয়ানমারের পক্ষে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা কোন প্রস্তাবে রাশিয়ার সমর্থন পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের আরেক স্থায়ী সদস্য অবশ্য রোহিঙ্গা সঙ্কটের ব্যাপারে তাদের দীর্ঘ নীরবতা ভেঙ্গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সহিংসতার মুখে রোহিঙ্গারা যেভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে তাতে বোঝা যায় সরকার বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
×