ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেলিনা জাহান

একটি সামাজিক ব্যাধি

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একটি সামাজিক ব্যাধি

ধর্ষণ ব্যাপারটা আজকাল অনেকটা যেন ছেলের হাতের মোয়ার মতো সুলভ একটি কাজে পরিণত হয়েছে। হাতের কাছে পেলাম আর টুপ করে তার সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। রোগটি আস্তে আস্তে আমাদের সমাজে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ব্যাপারটা নিয়ে চারদিকে এত লেখালেখি, শোরগোলের কারণে এ যেন একটা মহোৎসবে পরিণত হয়েছে! আসলে আমাদের মতো গরিব একটা দেশে, যে দেশে অশিক্ষা আর কুশিক্ষার দারুণ ছড়াছড়ি সেখানে এ সব কা- খুব একটা বিরল হবার কথাও নয়। বস্তিতে, রাস্তায়, এখানে-সেখানে বেড়ে উঠা বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই কোনদিন স্কুলের চেহারা পর্যন্ত দেখিনি। অনেকেই খিদের খাবার খেতে চেয়ে হয়ত বেদম প্রহার খেয়েই বড় হয়েছে। তাই কিছুটা বড় হবার পরই হয় বাসের কন্ডাক্টর, গ্যারেজের সাহায্যকারী নয়ত বাজারের মিনতি অথবা বিভিন্ন দোকানপাটের সাধারণ কাজ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এদের কাছ থেকে খুব একটা স্বাভাবিক আচরণ আশা করা যায় কি? অথচ এই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাতেই লেখাপড়া করার সঙ্গতি আছে যাদের, তাদের পৃথিবীর সমস্ত পড়া পড়িয়ে, সাংঘাতিক প-িত জাতীয় কিছু তৈরি করার জন্য সারাদিন স্কুল- কলেজ আর কোচিংয়ের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করানো হয়। এভাবে সমাজে একটা বড় বৈষম্য সৃষ্টি হয়। লেখাপড়া শিখে বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই সাধারণ খেটে খাওয়া অশিক্ষিত ছেলেমেয়েকে খুব একটা মানুষ বলে মনে করে না। আর এভাবেই মানুষে মানুষে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। একই দেশের ছেলেমেয়ে আকাশ পাতাল ফারাক মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। একই দেশের ছেলেমেয়ে হয়েও সহমর্মিতা থাকে না। সম্মানবোধ থাকে না। আর এভাবেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মনে তৈরি হয় নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা। আর অন্যদের প্রতি তৈরি হয় জিঘাংসার প্রবণতা। তাই সুযোগ পেলেই এরা ছিনতাই, রাহাজানি খুন-খারাবি ধর্ষণ কোন কিছু থেকেই পিছপা হয় না। তাছাড়া এখন নেশার বস্তুও তো সহজলভ্য, এগুলো সেবনেও মানুষ হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক বিচার-বৃদ্ধি। এছাড়া গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আমাদের দেশে আরেকটি অন্যরকম সমস্যা আছে। আর সেটি হচ্ছে অত্যন্ত ধনী এক শ্রেণীকে ঘিরে। এদের সংখ্যাও নেহায়ত কম নয়। এদের অনেকের ঘরেই আছে অতিরিক্ত আদরের দুলাল। এরা ধনী বাবা-মার কাছ থেকে এত বেশি মাসোহারা পায় যে খরচ করার জায়গা পায় না। তাই বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদ তৈরি করে ফাইভ স্টার হোটেলে এরা ধর্ষণের কর্মটি বেশ আরাম আয়েশের সঙ্গে সমাধা করে। নোংরা চলন্ত বাসে কাজটি সারার দরকার হয় না। যাই হোক, যদি আমরা মনে করি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার করে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে, তা ঠিক নয়। আমাদের সমস্যার মূলে যেতে হবে। তারপর খুঁজে বের করতে হবে গ্রহণযোগ্য সমাধান। আর এ সমস্যা তো কোন একা মানুষের নয়, পুরো সমাজের। এ সমস্যার সমাধান হয়ত সময় সাপেক্ষ কিন্তু এর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এখনি। মহাখালী, ঢাকা থেকে
×