ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ চলন্ত বাসে নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ চলন্ত বাসে নারী নির্যাতন

ধর্ষণ কথাটা শুনলে গা শিউরে ওঠে। আজকাল ধর্ষণের প্রবণতা এতই বেড়েছে কোন নারী এখন আর নিরাপদ নয়। নারীরা আজ ধর্ষকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। ধর্ষণকারী ক্ষমতাবান হওয়ায় অধিকাংশ সময়ে ধর্ষিতা বিচার পায় না। আইনের আশ্রয় চাইতে গেলে সেখানেও নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক মা, অনেক যুবতী নারী আর একাকি চলাফেরা করতে পারছে না। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্বৃত্তরা। আমি স্বাধীনতা দেখিনি তবে স্বাধীনতার বাস্তব গল্প শুনেছি। শুনেছি ‘৭১-এর বর্বরতার নির্লজ্জ ঘটনার কথা। পাকিস্তানী সেনারা কিভাবে বাঙালী নারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। এদেশের মা-বোনদের ইজ্জত কিভাবে লুটে নিয়েছে। আজও আমরা সে বর্বরতার কথা স্মরণ করে আঁতকে উঠি। তবে বাস্তব রূঢ় সত্য পাকিস্তানীরা নারী লোলুপ ছিল বলে আমরা মুখে স্বাধীনতার সেøাগান দিয়ে পাকিস্তানীদের গাল দেই কিন্তু আমাদের চরিত্রকে সংশোধন করি না। আল্লামা শফী যেমনটা বলেছেন নারীরা তেঁতুলের মতো, দেখলেই জিভে জল আসে। তেমনই কিছু অসভ্য জানোয়ার নারীদের দেখলেই তাদের প্রতি লোভাতুর হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার এতটা বছর পরও কেন আমাদের দেশে মা-বোনদের ইজ্জত-সম্মান সুরক্ষিত হবে না। পাকিস্তানী দোসররা কিছু চরিত্রহীন বাঙালী রেখে গেছে যারা আজ মুখে স্বাধীনতার গান গেয়ে স্বাধীন দেশের মা বোনদের ইজ্জতের ওপর হানা দেয় বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে খাটো করার জন্য। এরা বাঙালী নয় এরা পাকিস্তানী ছায়া রূপী জাতীয় শত্রু। প্রমথ চৌধুরী তার ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’র এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, এদেশের লোক যে যৌবনের কপালে রাজটিকার পরিবর্তে তার পৃষ্ঠে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে সদাই প্রস্তুত, সে বিষয়ে আর-কোন সন্দেহ নেই। এর কারণ হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্বাস মানব জীবনে যৌবন একটা মস্ত ফাঁড়া, কোন রকম সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলেই বাঁচা যায়। এ অবস্থায় কি জ্ঞানী, কি অজ্ঞানী সকলেই চান যে, একলম্ফে বাল্য হতে বার্ধক্যে উত্তীর্ণ হন। যৌবনের নামে আমরা ভয় পাই, কেননা তার অন্তরে শক্তি আছে। অপর পক্ষে বালকের মনে শক্তি নেই, বৃদ্ধের দেহে শক্তি নেই, বালকের জ্ঞান নেই, বৃদ্ধের প্রাণ নেই। তাই আমাদের নিয়ত চেষ্টা হচ্ছে দেহের জড়তার সঙ্গে মনের জড়তার মিলন করা, অজ্ঞতার সঙ্গে বিজ্ঞতার সন্ধি স্থাপন করা। তাই আমাদের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ইচড়ে পাকানো, আর আমাদের সমাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জাগ দিয়ে পাকানো।’ ধর্ষক আজ এমনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে শিশু থেকে বয়ঃবৃদ্ধও রেহাই পাচ্ছে না। বাবার সামনে তার মেয়েকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতেও দ্বিধা করে না। কুমিল্লায় তনু হত্যার বিচার এখনও ঝুলে আছে আদালতে। কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলে রূপা ধর্ষণ হওয়ার পর ধর্ষকের হাতেই জীবন দিতে হয়েছে। মেয়েটি মৃত্যুর পূর্বে সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনের বিনিময়ে জীবন ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু নরপশুরা মেয়েটির করুণ আর্তনাদে সাড়া না দিয়ে নৃশংসভাবে ঘাড় মটকে হত্যা করে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে যায়। এমন নৃশংসতা আমাদের শঙ্কীত করে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব অতিবিলম্বে এমন একটা আইন তৈরি করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মাধ্যমে ধর্ষণের মতো মারাত্মক কাজকে জীবন্ত কবর দেওয়া হোক। যা দেখে ধর্ষকামীদের মন আতকে উঠবে এবং ভবিষ্যতে কোন ধর্ষণ করার সাহস পাবে না। হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে
×