ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখানেই শেষ নয় সুন্দরী প্রীতির ক্যারিয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এখানেই শেষ নয় সুন্দরী প্রীতির ক্যারিয়ার

যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান প্রমীলা টেনিস খেলোয়াড় আফরানা ইসলাম প্রীতির ক্ষেত্রে প্রবাদটির নতুন সংস্করণ হতে পারে, ‘যে টেনিস খেলে, তাকে সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও দেখা মেলে!’ হ্যাঁ, ব্যাপারটা ঠিক তাই। বাগেরহাটের সপ্তদশী এই সুদর্শনা টেনিসকন্যা কদিন আগেই নাম লিখিয়েছিলেন বেসরকারী স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এনটিভির সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মমতাজ সুন্দরীতমা’য়। এতে অংশ নেন ১৯ সুন্দরী কন্যা। এদের মধ্যে ছিলেন প্রীতিও। এদের মধ্যে অনলাইনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া ১০ জন উন্নীত হন প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে। তারপর? ‘জানেন, আমি দ্বিতীয় হয়েছি এনটিভির মমতাজ সুন্দরীতমা প্রতিযোগিতায়!’ এই প্রতিবেদককে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানান প্রীতি। গত ১২ আগস্ট দৈনিক জনকণ্ঠের খেলার পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘টেনিস খেলোয়াড় প্রীতি যখন সুন্দরী প্রতিযোগিতায়...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এরপর থেকেই ক্রীড়াপ্রেমীদের উৎসুক নজর ছিল টেনিসকন্যা আফরানা ইসলাম প্রীতির দিকে। অনেকেই জানতে চাইতেন প্রীতির শেষ পর্যন্ত কি হলো। জবাব হচ্ছেÑ ওই প্রতিযোগিতায় ১৯ প্রতিযোগী থেকে সেরা ১০ জনকে বেছে নেয়ার সময় সপ্তদর্শী প্রীতি অনলাইনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে প্রথম হন এবং চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হন। গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বে প্রীতি হন প্রথম রানারআপ। চ্যাম্পিয়ন হন সানজিদা ইসলাম আর দ্বিতীয় রানারআপ হন নুসরাত জাহান মিথিলা। প্রথম গ্র্যান্ড বিজয়ী ১ লাখ টাকা, প্রথম রানা?রআপ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় রানারআপ পান ২৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে থাকছে মমতাজ হারবালের স্পন্সর করা টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনে এক বছর কাজ করার সুযোগ। বাকিদের জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় গিফট হ্যাম্পার। এ ছাড়া ফাইনালে অংশ নেয়া ১০ জনের জন্য স্বীকৃতির সনদ তো ছিলই। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে প্রীতি জানান, ‘তবে ফাইনাল রাউন্ডে সেরা তিন বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু ভোটিং সিস্টেম ছিল না। বেছে নেয়া হয় র‌্যাম্প শোর মাধ্যমে। এই বিউটি কনটেস্টে জিতে আমি অনেক খুশি। সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়েছে। এখন মনে হচ্ছে আমাকে দিয়ে সবই সম্ভব।’ ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? মডেলিং-ফ্যাশন শো-অভিনয়, নাকি টেনিস? কোন জগতে বিচরণ করবেন? যদি সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেই বেছে নেন, তাহলে কি প্রীতির টেনিস খেলার এখানেই ইতি? ‘না, তা হবে কেন? আগামীতে যাই করি না কেন, টেনিসকে পাশে রেখেই সব করব ইনশাল্লাহ। এখানেই নয় আমার টেনিস খেলার ইতি।’ প্রীতির আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠ। দ্বিতীয় হবার পর পরিবার, বন্ধুমহল ও স্বজনদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জানান বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতি, ‘আমার পরিবারের জন্যই আজ আমি এখানে। তাই আমার সাফল্যে তারা ভীষণ খুশি। তাদের সমর্থন-সহযোগিতা ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না।’ প্রীতির এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে মিডিয়াগুলোর মধ্যে একমাত্র জনকণ্ঠই নিউজ করেছিল। তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশে প্রীতির জন্য ভোট পেতে বা প্রচার পেতে সুবিধা হয়েছিল বলে জানান তিনি, ‘অনেক সাহায্য পেয়েছি জনকণ্ঠের মাধ্যমে। এজন্য জনকন্ঠকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’ ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া প্রীতি ২০১৫ সালে বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেরেনা উইলিয়ামকেই আদর্শ মানেন প্রীতি। তবে ভাল লাগে মারিয়া শারাপোভাকেও। এ পর্যন্ত সাত বছরের ক্যারিয়ারে সব মিলে এককে প্রীতি শিরোপা জিতেছেন ৪২টি। টেনিসে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এবং খেলতে প্রীতি ভারত, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে গিয়েছেন। এই বিউিটি কনটেস্টের বিশেষত্ব ছিলÑ সব প্রতিযোগীর মধ্যে প্রীতিই ছিলেন একমাত্র খেলোয়াড়। এ প্রসঙ্গে প্রীতির ভাষ্য, ‘আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত। যেহেতু সব প্রতিযোগীর মধ্যে আমি একাই খেলোয়াড়, তাই ক্রীড়াঙ্গনের মানুষদের ব্যাপক কৌতূহল ছিল আমাকে নিয়ে। এছাড়া ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের মানুষদের কাছ থেকেও অনেক ভোট পেয়েছি। তাদের ভোট পেয়েই আমি সেরা দশে যেতে পেরেছি।’ উল্লেখ্য, দর্শকের ভোট ও বিচারকদের নম্বরের ভিত্তিতে সেরা যে ১০ প্রতিযোগী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় উন্নীত হন, তাদের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞরা গ্রুমিং করান। দর্শক ভোট ও বিচারকদের নম্বরে প্রতিযোগীকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় (গ্র্যান্ড ফিনাল) সেরা সুন্দরী নির্বাচিত করা হয়। এ পর্যন্ত সাত বছরের ক্যারিয়ারে জুনিয়র, সিনিয়র, জাতীয় ও অন্যান্য সব টুর্নামেন্ট মিলে এককে প্রীতি শিরোপা জিতেছেন ৪২টি। তারপরও তৃপ্ত নন প্রীতি। বরং আছে একরাশ হতাশা ও ক্ষোভ, ‘এত কষ্ট করে খেলি ও নিজেকে হাইলাইটস করি, অথচ ফেডারেশন থেকে সে রকম সুযোগ-সুবিধা পাই না! যে প্রাইজমানি দেয়া হয়, তা দিয়ে একজোড়া জুতোও কেনা যায় না! এমন অঙ্কের প্রাইজমানি দেয়া উচিত, যাতে এটা কাজে লাগে এবং সবাই খেলতে আগ্রহী হয়।’ সেই সঙ্গে যোগ করেন, ‘টেনিস ফেডারেশন সবসময়ই আমাদের অনেক দেরি করে এবং হঠাৎ করেই টুর্নামেন্ট শুরুর দিনক্ষণ জানায়। এতে আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারি না।’ সারা বছর যে পরিমাণ টুর্নামেন্ট হয়, তা নিতান্তই অপ্রতুল। এর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে বলে জানান প্রীতি, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে খেলে তো লাভ হচ্ছে না। এতে স্কিল বাড়ছে না। এজন্য ফেডারেশনের উচিত আমাদের বিদেশের টুর্নামেন্টে খেলতে পাঠানো (কমপক্ষে ৪-৫টি টুর্নামেন্টে) এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো। অথবা দেশে যদি খেলোয়াড় বাছাই করে বছরে অন্তত দু’বার যদি কমপক্ষে এক-দুই মাসের জন্য আমাদের ট্রেনিং দেয়া হতো, তাহলেও অনেক উপকৃত হতাম।’ টেনিসে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রীতি অবশ্য বিদেশ সফর করেছেন অনেকবারই। থাইল্যান্ডে ৩ এবং ভিয়েতনামে ২ বার। তবে সেটা বিকেএসপির মাধ্যমে। ফেডারেশনের মাধ্যমে একবার ১বারই ভারতে গেছেন এসএ গেমস খেলতে। ক্যারিয়ারে স্মরণীয় ঘটনা? ‘শারদা আলম দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ২০১৪ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিতে তিনি আমার কাছে হেরে যান। এরপর তিনি আর কোনদিন টুর্নামেন্টই খেলেননি এবং খেলাই ছেড়ে দেন! তবে কেন, সেটা আমার জানা নেই। তবে মজাটা এখানেইÑ আমার কাছে হেরেই তার ক্যারিয়ারের ইতি!’ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে কোথায় রাখতে চান? প্রীতির ভাষ্য, ‘সিনিয়র লেভেলে এককে দেশে আমিই এখন নাম্বার ওয়ান। তবে এতে আমি সন্তুষ্ট নই। কেননা আমি চাই আরও ভাল খেলতে। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাউকেই মনে করি না। সবাইকেই সমান সমীহ করি।’ ২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া প্রীতি এত খেলা থাকতে টেনিসকে বেছে নিলেন কেন? খুলনার বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতির ব্যাখ্যা, ‘টেনিস অনেক স্মার্ট খেলা। আমাদের দেশে হয় তো এ খেলাটির কোন মূল্য নেই, কিন্তু পাশ্চাত্যে খেলাটির অনেক মূল্য। টেনিসই আমার লাইফ পার্টনার, আমার সবকিছু।’ নিজের স্বপ্নের কথা জানান প্রীতি, ‘আমার স্বপ্ন-টেনিস খেলে বাংলাদেশকে টেনিস বিশ্বে সুপরিচিত করা এবং বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে একদিন নিজের অবস্থান করে নেয়া।’ এর জন্য টেনিস ফেডারেশনের সাহায্য, নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্পন্সরদের এগিয়ে আসা ব্যাপারগুলোও যে সম্পৃক্ত, সেটিও জানান প্রীতি। বাবা জাহিদুল ইসলাম (বাগেরহাটের পৌরসভায় চাকরিরত) এবং মা শামীমা আক্তার (গৃহিণী) যথেষ্ট উৎসাহ জোগান প্রীতিকে টেনিস খেলতে। বিকেএসপির কোচ রোকনউদ্দিন আহমেদের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন দুই বোনের মধ্যে বড় প্রীতি। টেনিস স্মরণীয় ঘটনা? ‘২০১০ সাল। তখনও আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হইনি। বাগেরহাটের একটি ক্লাবে টেনিস অনুশীলন করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাতে ভীষণ ব্যথা পাই। পাঁচ মাস লেগেছিল সারতে।’
×