ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট বিল পাস

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ব্রেক্সিট বিল পাস

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট মঙ্গলবার একটি বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। একে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রথম আইনী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিরোধীদের আপত্তির মুখে বিলটি পাস নাও হতে পারে- এমন আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৩২৬-২৯০ ভোটে বিলটি পাস হয়েছে। ১৯৭২ সালে পাস হওয়া যে আইনবলে ব্রিটেন ইইউতে যোগ দিয়েছিল, মঙ্গলবারের ভোটাভুটির ফল সে আইন বাতিল করার প্রথম পদক্ষেপ। বিদ্যমান ইইউর ১২ হাজার বিধি এখন ব্রিটিশ আইনের অধীনে আসবে। গত বছর অনুষ্ঠিত গণভোটে দেশটির জনগণ ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঐতিহাাসিক রায়টি দেয়। চলতি বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রাসেলসে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান তারা ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। এরপর আইন সভা শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট আইন পাস করল। মে’র নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে (ডিইউপি) সঙ্গে নিয়ে কোয়ালিশন সরকার পরিচালনা করছে। মঙ্গলবারের ভোটের পর মে একে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটি এখন ইইউ ছাড়ার পথ সুগম করল। তিনি আরও বলেন, ‘যদিও অনেক কিছু করা এখনও বাকি রয়েছে, তবে বিলটি পাস হওয়ায় সেটি ইউনিয়নের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ তিনি যুক্তরাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকে এখন এ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। বিরোধী দল লেবার পার্টি এ বিলের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইইউ বিধি ব্রিটিশ আইনে পরিবর্তন ঘটানোর প্রক্রিয়া সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বাড়াবে। বর্তমানে ‘হেনরি আট আইনে’ সরকারের মন্ত্রীরা যথেষ্ট ক্ষমতা ভোগ করছেন। পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে সরকারকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ তারা বিদ্যমান আইনেই পাচ্ছেন। লেবার পার্টির এমপি ক্রিস ব্রয়ান্ট বলেছেন, বিদ্যমান ইইউ বিধিগুলো যখন সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ক্ষমতাসীনদের হাতের মুঠোয় তখন একচ্ছত্র ক্ষমতা চলে আসবে। তিনি পার্লামেন্টে বলেন, আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে এ আইন রাষ্ট্রকে হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে কিন্তু বাস্তবে সেটি হবে না। বরং এটি আইনসভার ওপর সরকারের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে। গত ১শ’ বছরে (যুদ্ধকালীন সময় বাদ দিয়ে) শান্তিপূর্ণ সময়ে পার্লামেন্টের ওপর সরকারের এমন ক্ষমতা কখনও ছিল না। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে লেবার পার্টির সাতজন এমপি বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিলটি এমপিদের ভোটে পাস হলেও এটি পার্লামেন্টারি কমিটিতে আরও পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে মঙ্গলবারের ভোট থেকে এটি পরিষ্কার যে, ব্রেক্সিট বা ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে আসা যে এখন সময়ের ব্যাপার সেটি দেশটির এমপিরা মেনে নিয়েছেন। এছাড়া এ ভোট ব্রেক্সিট ইস্যুতে মে’র সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করবে। জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আগেরবারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এর ফলে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনায় সরকারের নৈতিক ভিত্তিটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পার্লামেন্টে বিলটি পাস হওয়ায় ক্ষমতাসীনরা তাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পেল। মে’র সরকার ব্রেক্সিটের ইউরোপের একক বাজার ও কাস্টম বাজারের সঙ্গে সম্পর্কছেদ ঘটাতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত বর্তমানে জোটের সঙ্গে যে সম্পর্ক আচ্ছে তার ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি করতে চায়। ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পর ব্রিটেন ইইউর সঙ্গে স্বাধীনভাবে নতুন চুক্তি করবে। -এএফপি
×