ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপের রাজনীতি টালমাটাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মালদ্বীপের রাজনীতি টালমাটাল

মালদ্বীপের রিসোর্টগুলো প্রশান্তির স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। সেগুলোর শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনের জন্য। তবে দেশটির রাজধানী নগরী মালে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার স্থান। এমনিতেই মালেতে লোকবসতির ঘনত্ব অত্যধিক এবং ট্রাফিকও চরম বিশৃঙ্খলাময়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মালদ্বীপের রাজনীতিও ঝঞ্ঝা ও টালমাটাল হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি শাসক দলের এমপিরা স্বপক্ষ ত্যাগ করে বিরোধী দলে যোগ দেয়ায় সরকার মজলিকা বা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। তথাপি ক্ষমতা আটকে থাকতে সক্ষম হয় এক অভিনব কৌশলে। প্রথমে চেম্বার থেকে বিরোধী দলের কিছু সদস্যকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করে। তারপর তারা যাতে ফিরে না আসতে পারে তার জন্য সেনা মোতায়েন করে। ক্ষমতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত নিয়মবিধি নতুন করে রচনা করছে। আদালতও তাদের রায়ে কতিপয় বিরোধীদলীয় সদস্যকে অযোগ্য ঘোষণার দ্বারা তাদের সদস্যপদ হরণ করে এবং বাহ্যত সংবিধান পরিপন্থী হলেও প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করার প্রশ্নে চূড়ান্ত রায় দেয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সরকারকে সাহায্য করেছে। ভারত মহাসাগরে ৪ লাখ লোক অধ্যুষিত দ্বীপদেশ মালদ্বীপের রাজনীতি লৌহমানব মামুুন আবদুল গাইয়ুমের বিদায়ের পর থেকে সর্বক্ষণ অস্থিরতার মধ্যে আছে। ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গাইয়ুম ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেন। ওই নির্বাচনে তিনি গণতন্ত্রপন্থী মোহম্মদ নাশিদের কাছে হেরে যান। নাশিদ ২০১২ সালে চাপের মুখে পদত্যাগ করেন এবং তারপর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গাইয়ুমের সৎভাই আবদুল্লাহ ইয়ামিনের কাছে পরাজিত হন। ইয়ামিন এখন পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে চতুর্থ বছরে আছেন। তিনি গুপ্তহত্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দস্তরমত বিরোধ হয়েছে। বিশাল দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতেও তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। গত বছর নিজের সৎভাই গাইয়ুমের সঙ্গে তার রীতিমতো ঝগড়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গাইয়ুম গত মার্চ মাসে তার সাবেক শত্রু নাশিদের সঙ্গে জোট বাঁধেন। সন্ত্রাসবাদের বানোয়াট অভিযোগে ১৩ বছর কারাদ-ে দ-িত হবার পর তিনি এখন স্বনির্বাসনে আছেন। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে নতুন বিরোধী জোট ভাল সাফল্য পেয়েছে। সরকারপন্থী যেসব সভা সমাবেশ হয় তাতে মূলত সরকারী কর্মচারীরা এবং পয়সা দিয়ে ভাড়া করে আনা তরুণরাই যোগ দেয়। গাইয়ুম সম্প্রতি বলেছেন, ‘একনায়কতন্ত্রের সর্বদাই পতন ঘটে।’ কথাটা অবশ্য তার চেয়ে ভাল আর কারও জানার কথা নয়। তবে ইয়ামিনের ক্ষমতার অবস্থান এখনও শক্তিশালী। বিরোধী দল অভিযোগ প্রতিকারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়। তথাপি তাদের হালে পানি নেই বললেই চলে। মালদ্বীপে পার্লামেন্ট সদস্যদের দলবদল অতি সচরাচর ঘটনা। তবে সুপ্রীমকোর্ট সম্প্রতি রায় দিয়েছে যে এরপর থেকে দলবদল করলেই এমপিদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে কিছুদিন আগে গাইয়ুমের ছেলে কারিস সরকারী দলের এমপিদের বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার জন্য ঘুষ দিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী ভূমিকার পাশাপাশি এই শান্ত নিস্তরঙ্গ দ্বীপপুঞ্জে সহিংসতার ঘটনাও বাড়ছে। সম্প্রতি এক সপ্তাহে দু’দুটি খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে ইয়ামিন রশিদ নামে এক স্পষ্টবাদী ব্লগারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ব্লগার এর আগে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তার নিরাপত্তায় কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এই হত্যাকা- বহির্বিশ্বেও নিন্দিত হয়েছে। পুলিশ এজন্য মুসলিম চরমপন্থীদের দায়ী করেছে। অভিযোগ যদি সত্যিও হয় এর কোন প্রতিকার হবার সম্ভাবনা নেই। রশিদ তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আহমেদ বিলওয়ালের জন্য ন্যায়বিচার আদায়ের প্রচারাভিযানের সম্মুখ সারিতে ছিলেন। বিলওয়ার একজন সাংবাদিক। তিন বছর আগে তাঁকে তার ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে অপহরণ করা হয়। তারপর থেকে তার আর সন্ধান মেলেনি। তাঁর খুনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি কানিয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুজনেরা সম্প্রতি এক সমাবেশ করলে পুলিশ মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে তাদের হটিয়ে দেয়। অনেককে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে বিরোধী দলের দুই এমপিও ছিল। এই ভাবেই চলছে মালদ্বীপ। এই ভাবেই চলছে সেখানকার গণতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×