ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দোকলান নিয়ে চীন-ভারত বিরোধ কি মিটল

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দোকলান নিয়ে চীন-ভারত বিরোধ কি মিটল

ভারত-চীন ভুটানের সীমান্ত সংযোগস্থল দোকলান নিয়ে চীন-ভারতের সীমান্ত যুদ্ধ বেধে যাওয়ার যে একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল আপাতত তা দূর হয়েছে। দুই দেশ তাদের মধ্যে একটা ঐকমত্য হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং উভয় দেশের সৈন্যরা বিরোধীয় এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। তবে দোকলান নিয়ে এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে তা এই দুই দেশের মধ্যকার গভীরতর উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের পরিচায়ক। তাই এ থেকে ভবিষ্যত দুদেশের মধ্যে বৃহত্তর উত্তেজনা ও সংঘাতের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রায় দু’মাস ধরে দোকলান এলাকায় দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলার পর শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষ বিরোধীয় অবস্থান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। অবশ্য দু’দেশের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট নয় যে নিজ সৈন্য সরিয়ে নেয়ার বিনিময়ে ভারত চীনকে কোন ছাড় দিয়েছে কিনা কিংবা চীন দোকলান এলাকায় তার সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বন্ধ করছে বা তা থেকে সরে আসছে কিনা। চীনের বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিসিং বলেছেন, চীন সন্তোষের সঙ্গে নিশ্চিত করছে যে সকল ভারতীয় লোকজন ও স্থাপনা সীমান্তের ভারতীয় দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপের জবাবে চীনও সেখানে তার সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। তবে তিনি বলেন, ঐ এলাকার চীন টহলদান অব্যাহত রাখবে এবং নিজ সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রয়োগ করতে চীনের গ্যারিসনও থাকবে। অবশ্য যে সড়ক নির্মাণ নিয়ে এত উত্তেজনার সূত্রপাত তা চীন বাদ দিয়েছে কিনা সে প্রশ্নে মুখপাত্র নীরব থাকেন। শুধু এটুকু বলেন যে, বিরাজমান পরিস্থিতির সঙ্গে চীন সামঞ্জস্য বিধান করবে। চুনিয়াং ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারকেই বড় করে দেখান। চীনের দিক থেকে পিছু হটা হয়েছে কিনা তিনি সে ধারণা দিতে চাননি। ব্রিকস্্ সম্মেলনের আগেই চীন-ভারতের সঙ্গে এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সম্মেলনে যোগদানের পথ সুগম হলো। ভারতীয় বিশ্লেষক মানস যোশী বলেন, ব্রিকস বৈঠকের আগে বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে মোদি চীনের চাপ সামলে নিয়েছেন এবং চীনকে পিছু হটতে বাধ্য করেছেন। ব্রিকস বৈঠক দুপক্ষের মতপার্থক্য দূর করার উত্তম সুযোগ এনে দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে দান ওয়াং নামে এক চীনা পর্যবেক্ষক হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, এতে দুপক্ষের আবার সামরিক সংঘাতে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি দূর হয়নি। আগামীতে চীন ও ভারতের মধ্যে আবারও বিরোধের কারণ ঘটবে। সেই বিরোধ থেকে সরাসরি সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা খুব একটা না থাকলেও দুই দেশ একে অপরকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা চালাবে। ভারত তার চারপাশের ছোট ছোট দেশগুলোকে নিজের স্বাভাবিক স্বার্থের বলয়ের অন্তর্গত বলে মনে করে। তাই এসব দেশে চীনের নাক গলানোর ব্যাপারটি তার কাছে বড়ই স্পর্শকাতর। ভারত এটাকে চীনের অনধিকার চর্চা হিসাবে দেখে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতার কোন তুলনা নেই। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে কাছে টানতে চীন সাহায্য এবং বাণিজ্য দুটোকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তবে ভুটানকে কাছে পেতে এ পর্যন্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ভুটান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ। সেদিক থেকে ইতিহাসগতভাবে তিব্বত ভুটানের নিকট আত্মীয়। তাই চীনের তিব্বত গ্রাস ভুটান ভালভাবে নেয়নি এতে এ নিয়ে চীনের প্রতি দেশটির সর্বদাই একটা অস্বস্তির ভাব আছে। অন্যদিকে ভুটানের ৮০ শতাংশ বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে হয়ে থাকে। দেশটির প্রধান রফতানি পণ্য জলবিদ্যুতের একমাত্র গন্তব্য ভারত। ভারতের এক শ’ কোটি ডলারের বার্ষিক বৈদেশিক সাহায্য বাজেটের সিংহভাগ ভোগ করে ৮ লাখ লোকের দেশ ভুটান। ভারতের সেনাবাহিনী ভুটানের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে এবং ট্রেনিংয়ের নামে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় সৈন্যও সেদেশে আছে। ভারতের প্রতি আনুগত্যের পরিচয় দিয়ে ভুটান চীনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বিরত থেকেছে। ভারত-ভুটান চুক্তিতে আছে যে দুদেশের কেউই একের ভূখ- অন্যের ক্ষতিকর ক্রিয়াকলাপ চালানোর কাজে ব্যবহৃত হতে দেবে না। গত ৩০ বছরে ভুটান-চীন তাদের সীমান্ত চিহ্নিত করার জন্য ২৪ দফা বৈঠকে বসেছে। কিন্তু তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। সূত্র : টাইম
×