ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত রিপোর্ট

শাহজালালে এয়ার ইন্ডিয়া অফিসে অগ্নিকাণ্ড শর্ট সার্কিট থেকে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শাহজালালে এয়ার ইন্ডিয়া অফিসে অগ্নিকাণ্ড শর্ট সার্কিট থেকে

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে আগুন লাগার মূল কারণ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট। সিভিল এভিয়েশন ও দমকল বাহিনীর পৃথক পৃথক তদন্ত রিপোর্টে এ বিষয়টিই ওঠে এসেছে। উভয় তদন্ত রিপোর্টেই বিষয়টি নাশকতা নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সিভিল এভিয়েশনের তদন্ত রিপোর্টে একগুচ্ছ সুপারিশমালা রয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও আশপাশের স্থাপনায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার চরম দুরবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত দেড় বছরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ছয়বার অগ্নিকা- ঘটেছে। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা যথেষ্ট না থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় এ বিমানবন্দরে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ গত ৩১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয়। এর আরও আগেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের গঠিত কমিটির প্রধান পরিচালক প্রশাসন সাইফুল ইসলাম। বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর তৃতীয় তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে গত ১১ আগস্ট দুপুরে আগুন লাগে। এতে দমকল বাহিনীর ১০টি ইউনিট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৭ জন সদস্য আগুন নেভাতে কাজ করেন। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন তারা। এ ঘটনায় ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে দুই কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পায়। অগ্নিকা-ের ঘটনায় কোন ধরনের হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রায় দুই ঘণ্টা বিমান উড্ডয়নসহ টার্মিনাল ভবনে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক পথের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন হজযাত্রীসহ বিদেশগামী কয়েকশ যাত্রী। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস। কমিটির প্রধান ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন। ১৫ দিন বিমানবন্দরের মূল ভবন, কার্গো ভিলেজ, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। জানা গেছে, দুটো তদন্ত প্রতিবেদনেই কিছু অভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়- বিমানবন্দরের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, রেস্তরাঁয় ও অন্যান্য স্থাপনায় আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থাই নেই। আগুন নেভাতে ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম, ফায়ার ওয়াটার পাম্প সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই বিমানবন্দরে। এসব ব্যবস্থা স্থাপন ছাড়াও বিমানবন্দরটিতে স্থায়ী একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন, বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগুন প্রতিরোধ, নেভানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেস্টুরেন্টগুলোকে ফায়ার লাইসেন্স নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনাটি নাশকতা নয়। বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা বলা যেতে পারে। টার্মিনাল-১ ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি কক্ষ নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার কার্যালয়। এর একটি কক্ষে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিটে আগুন লাগে। এ আগুন কক্ষের ওপরের অংশে ছড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, শাহজালালে আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম যেমন নেই, যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলোও আধুনিক নয়। ১১ আগস্টের ঘটনার মাস খানেক আগে বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফায়ার সার্ভিসের উচ্চ পর্যায়ের একটি দল। তারা আধুনিকায়নের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছিল সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে। বিমানবন্দরে বর্তমানে একটি ফায়ার স্টেশন থাকলেও এর কর্মীরা উড়োজাহাজ ওঠা-নামার সময় অগ্নিনিরাপত্তায় কাজ করেন। উড়োজাহাজে আগুন নেভানোয় তারা দক্ষ হলেও বিমানবন্দরের অবকাঠামো রক্ষায় অভিজ্ঞ নন। বলা চলে টার্মিনালের অগ্নিব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের সুনজরের অভাব রয়েছে। যেমন বিমানবন্দরের অবকাঠামোর নিরাপত্তায় নিজস্ব কোন ফায়ার স্টেশন নেই। বর্তমানে বিমানবন্দরের আগুনের ঘটনা ঘটলে কুর্মিটোলা অথবা উত্তরা ফায়ার স্টেশন থেকে তাদের ইউনিট কাজ করে। এতে কাজ শুরু করতে সময় চলে যায়।
×