ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ ইউটার্ন নির্মাণ শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ ইউটার্ন নির্মাণ শুরু হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ যানজট কমাতে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণকাজ অতি দ্রুত শুরু হচ্ছে। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা আসবে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে। বাকি ২০ কোটি টাকা আসবে সরকারী অনুদান থেকে। প্রকল্পটি আগামী ৪ মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে এবং আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ইউটার্নগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। মূল প্রকল্প ছিল সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। এতে ২২টি ইউলুপের কথা বলা হয়েছিল। গত ২০১৫ সালের শেষ দিকে উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এসব ইউলুপ নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকা, ভূমির ছাড়পত্র না পাওয়া ও যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, এমআরটিসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। ঘোষণার পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় এসব ইউলুপ আদৌ নির্মাণ হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। এ সব প্রকল্পের সঙ্গে ইউলুপ প্রকল্পটি সাংঘর্ষিক হবে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সময় নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় স্থান পাওয়া কঠিন হবে। এছাড়া ইউলুপ (ফ্লাইওভারের ন্যায়) নির্মাণ করলে ট্রাফিক জ্যাম বিড়ম্বনা আরও বাড়তে পারে। এই আশঙ্কার কথা চিন্তা করেই ইউলুপের পরিবর্তে ইউটার্ন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ইউটার্ন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। প্রকল্পটি এখন দুই পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথমটি সাতরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন এবং বাকি অংশ আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মোট দশটি ইউটার্ন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রথম অংশ বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়ন করবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। ডিএনসিসির অংশে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই নির্মাণকাজ শুরুর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী ও ডিএনসিসি অংশের প্রকল্প পরিচালক খন্দকার মাহবুব আলম। উন্নত বিশ্বের ন্যায় শহরের রাস্তায় যাত্রী চলাচল নির্বিঘœ করা ও রাজধানীর চলমান যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব ইউটার্ন নির্মাণের পর সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীর যানজট প্রায় ১৫ শতাংশ কমে যাবে বলে ডিএসিসি কর্তৃপক্ষের করা গবেষণায় জানা গেছে। জানা গেছে, এসব ইউটার্নের জন্য দুই ধরনের নক্সা তৈরি করা হয়েছে। একটিতে ছোটবড় দুই ধরনের যানবাহন চলবে। অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউটার্ন থেকে আরেকটি ইউটার্নের সর্বনি¤œ দূরত্ব হবে ৮শ’ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউটার্ন দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। তখন বিভিন্ন মোড়ে কোন ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না। এতে রাজধানীর যানজট প্রায় ১৫ শতাংশ কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২৪ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসি তাদের সীমানায় ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ করবে। ইতোমধ্যেই টেন্ডার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ দরপত্র মূল্যায়ন কাজ করছে। সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রস্তাবনায় ২২টি ইউটার্নের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউটার্ন নির্মাণের কথা থাকলেও পর্যাপ্ত স্থান সঙ্কটের কারণে একটি ইউটার্ন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না তবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরার হাউসবিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি নির্মাণ করবে ডিএনসিসি। অপরদিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১০ টি ইউটার্ন নির্মাণ করবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি)। ইউটার্নগুলো নির্মাণ করতে ৩৭.০৯ বিঘা জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব জমি বর্তমানে অব্যবহৃত থাকায় কোন জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি তৈরি করা হলেও বাস্তবায়নের জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জমি নেই বললেই চলে। প্রকল্পে ইউটার্ন নির্মাণের জন্য যেসব স্থানের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই সরকারী বিভিন্ন সংস্থার। নাগরিকদের সুবিধার্থে ইউটার্ন তৈরির জন্য এসব জমি প্রয়োজন। তাই এসব জমি ব্যবহারের অনুমতি নিতে হয়েছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি পেতে দেরি হওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেও বিলম্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউলুপের মধ্যে এনেকের সভায় ১১টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ইউলুপ দেয়া হলেও প্রকল্প অনুমোদনের সময় কারিগরি দিক বিবেচনায় তা পরিবর্তন করে ইউটার্ন নাম দেয়ার নির্দেশ দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী মোস্তাফা কামাল। এরপরই সার্বিক দিক বিবেচনায় ইউলুপের পরিবর্তে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১০টি ইউটার্ন নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে স্থান নির্ধারণ করেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ (জিসিসি)। ইউটার্ন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই পরিকল্পিত উপায়ে গাড়ি পারাপারের জন্য ‘ইউ’ আকৃতির এসব ইউটার্ন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ডিএনসিসি। কিন্তু হাতিরঝিল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ডিএনসিসির সীমানায় থাকলেও আব্দুল্লাহপুর ব্রিজের ওপার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সীমানা থাকায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২ সিটি কর্পোরেশন থেকে পৃথক পৃথক ডিপিপি জমা দিতে বলা হয়। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী ২ সিটি কর্পোরেশন আলাদা দুটি প্রস্তাবনা জমা দেয়। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার যানজট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ইউলুপের জায়গা নির্ধারণ করতে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিন উত্তরার জসীমউদ্্দীন মোড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। ঐ বছরের ২৮ নবেম্বর ইউলুপ নির্মাণ বিষয়ক সভায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত করতে ২২টি ‘ইউ’ আকৃতির গাড়ি পারাপারের সেতু বা ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। জায়গা সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে এসব ইউলুপ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্পের ডিএনসিসি অংশের পরিচালক ও ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর যানজট কমাতে অতি দ্রুত আমরা এসব ইউটার্নগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করব। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। সকল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই আমরা ইউটার্ন নির্মাণকাজ আশা করি আগামী ২ সপ্তাহ পর শুরু করতে পারব। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকায় ও কারিগরি দিক বিবেচনায় এটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মতামত নেয়া ও তাদের জমি অধিগ্রহণে ছাড়পত্র ও মতামত নেয়া হয়েছে। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। এরপর সরকারের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ডিসেম্বরের আগেই আমরা এসব ইউটার্ন নির্মাণ শেষে জানুয়ারিতেই ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে।
×