স্টাফ রিপোর্টার ॥ মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ঘরে ফিরতে পারল না তাসলিম আলম তিশা (১২) নামে এক শিক্ষার্থী। রাস্তা পার হওয়ার সময় পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার মাঝামাঝি লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত জনতা ঘাতক বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিহত তিশা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
ট্রাফিক বিভাগ মিরপুর পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাকিকা পাশা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে কাফরুল কাজীপাড়া লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে রাস্তা পার হচ্ছিল তিশা। এ সময় মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁওয়ের দিকে যাওয়ার সময় ‘তেঁতুলিয়া পরিবহন’ নামের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১১৭৩৭০) তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তিশার মৃত্যু ঘটে। পরে তার লাশ কাফরুল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর বাসটিকে আটক করে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য সেখানকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। দুর্ঘটনার পর রাস্তার দুপাশেই যানজট সৃষ্টি হয়। পরে গাড়িটি রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। পরে বাসটি কাফরুল থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানান এসি সাকিকা পাশা।
এদিকে দুপুর দুইটার দিকে তিশার লাশ একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে কাফরুল থানায় নেয়া হয়। থানার সামনে রাখা এ্যাম্বুলেন্সে বিকেল চারটা পর্যন্ত তিশার নিথর দেহ পড়েছিল। সেখানে স্বজনের কান্নায় থানার ও এর আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। কাফরুল থানার করিডরে স্বজনদের জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন তিশার মা রিমা আক্তার। চিৎকার করে বলছিলেন, আমার তিশা, তুই কই গেলি? আল্লাহ, তুমি তো সব পার। আমার মেয়েটারে ফিরিয়ে দাও। ওর তো দুপুরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। পাশে স্বজনের কোল থেকে ৫ বছর বয়সী অবুঝ ছোট ভাই তাহমিদ আলম তার মৃত বোন তিশার নিথর দেহের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। পাশে তার বাবা খোরশেদ আলমও কান্নাকাটি করছিলেন। খোরশেদ আলম মিরপুর এলাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহন সরকারের সামনেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী মোহন জানান, বেলা একটার দিকে স্কুল ছুটির পর একটি রিক্সায় করে পূর্ব কাজীপাড়ার আল হেলাল হাসপাতালের কাছের বাসায় ফিরছিলেন তিশার মা, তিশা আর ছোট ভাই তাহমিদ আলম। রিক্সাটি লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে থামে। সেখান থেকে সড়ক বিভাজক পার হওয়ার জন্য এগিয়ে যায় তারা। মা ছেলের হাত ধরেছিলেন। মেয়ে তিশা পাশেই ছিল। মা ছেলেকে নিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর ওঠে যান। মেয়ে উঠতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যেই দ্রুতগতির বাসটি তিশাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিশার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপর চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কাফরুল থানার কোন কর্মকর্তা কিছু বলছেন না। বাসটি জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি জানান, তিশা তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে।
ছাত্র-ছাত্রীর আত্মহত্যা
রাজধানীর মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবনের নয়তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে শাহেলা হোসেন (২২) নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। মোহাম্মদপুর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, নিহত শাহেলা ওই কলেজে মার্কেটিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। তিনি জানান, সে দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যা ভুগছিল। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে শাহেলা কলেজে হোস্টেলে আসে। এরপর যে কোন সময় একাডেমিক ভবনের নয়তলার ছাদে গিয়ে নিচে লাফ দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের ছাত্রীরা জানায়। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে তার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শতাব্দি বর্মন (২৩) নামে এক কলেজ ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ উত্তর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার ২৬/ডি নম্বর বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিসুর রহমান জানান, শতাব্দি স্থানীয় একটি কলেজে অর্নাস ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করত। বিকেলে খবর পেয়ে উত্তর যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচায় ওই বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছে তা জানা যায়নি।