ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাত্র ১১ বছর বয়সে একজন শরণার্থী হিসেবে দারা খোশরোশাহী যুক্তরাস্ট্রের মাটিতে পা রাখেন। নিউইয়র্কে তিনি তার চাচার বাসায় ওঠেন। সেখানে দারা তার চাচাত ভাইদের সঙ্গে হ্যাকলি স্কুলে ভর্তি হন। তার অপর চাচা হাসসান খোশরোশাহী কানাডায় পাড়ি জমান, যেখানে তিনি একজন বিলিয়ন

দারা খোশরোশাহী উবারের প্রধান নির্বাহী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দারা খোশরোশাহী উবারের প্রধান নির্বাহী

ধ্রুব হাসান দারা খোশরোশাহী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তার জন্ম হয়েছে ইরানে। ইরানের সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দারা খোশরোশাহী। ইরানে তাদের পরিবারের ওষুধ, রাসায়নিক, খাদ্য ও সরবরাহকারীর ব্যবসা ছিল। ইরান বিপ্লবের সময় তাদের সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্র কর্তৃক বাজেয়াফত হয়। এরপর তার পরিবার ইরান ত্যাগ করে। সম্প্রতি বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় স্মার্টফোন এ্যাপ্লিকেশন (এ্যাপ) নির্ভর ট্যাক্সি পরিবহনসেবা উবারের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দারা খোশরোশাহী। স্মার্টফোন এ্যাপ্লিকেশন (এ্যাপ) নির্ভর ট্যাক্সি পরিবহনসেবা উবারের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) খোঁজ করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড কর্মকর্তারা। অবশেষে মার্কিন ট্রাভেল কোম্পানি এক্সপেডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দারা খোশরোশাহীকে সিইও হিসেবে নির্বাচন করেছেন তারা। গত জুন মাসে বোর্ড সদস্যদের চাপে বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টার্টআপ উবারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিককে প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যেতে হয়। নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুঁজে বের করতে অনেকের সঙ্গে আলাপ করেন বোর্ড সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত ৩ জনকে তালিকায় রাখা হয়। শেষ তিনে ছিলেন জেনারেল ইলেকট্রিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ ইমেল্ট। তবে গত মাসে তিনি সরে দাঁড়ান। শীর্ষ তিনজনের মধ্যে ছিলেন হিউলেট প্যাকার্ডের (এইচপি) প্রধান নির্বাহী মেগ হুইটম্যান। উবারের সিইও হবেন না বলে গত মাসে সরাসরি ঘোষণা দেন তিনি। তবে তিনি উবারের বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দিন আগে সাক্ষাত করেন। উবারের সিইও অনুসন্ধানের শীর্ষ তালিকায় খোশরোশাহী ছিলেন- এটি সহজে কেউ বুঝতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনিই নির্বাচিত হন প্রধান নির্বাহী হিসেবে। মাত্র ১১ বছর বয়সে একজন শরণার্থী হিসেবে দারা খোশরোশাহী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখেন। নিউইয়র্কে তিনি তার চাচার বাসায় ওঠেন। সেখানে দারা তার চাচাতো ভাইদের সঙ্গে হ্যাকলি স্কুলে ভর্তি হন। তার অপর চাচা হাসসান খোশরোশাহী কানাডায় পাড়ি জমান, যেখানে তিনি একজন বিলিয়নিয়ার। দারা খোশরোশাহীদের পারিবারিক বন্ধন খুব দৃঢ় বলেই এক্সপেডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান গড়তে পেরেছিলেন। রক্তে ব্যবসা মিশে থাকা এ পরিবারের প্রায় সবাই ব্যবসার সাথে য্ক্তু। দারা খোশরোশাহীর বয়স যখন ১১ বছর তখন তার পিতা আবার ইরানে গেলেন। উদ্দেশ্য তার পিতা অর্থাৎ দারা খোশরোশাহীর দাদাকে সেবা-যতœ করা। আবার যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে চাইলেন, তৎকালীন ইরান সরকার তাকে ৬ বছর আটকে রাখল। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আইভি লীগ স্কুল থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিগ্রী নেওয়ার পর দারা খোশরোশাহী অ্যালেন অ্যান্ড কোং-এ যোগদান করেন। এ প্রতিষ্ঠানে থাকাকালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ ‘সান ভ্যালি কনফারেন্সে’ অংশ নেন। এরপর দারা মিডিয়া আইকন হিসেবে পরিচিত ব্যারি ডিলারের সঙ্গে যৌথভাবে ১.৩ বিলিয়নের বিনিময়ে মাইক্রোসফটের কাছ থেকে এক্সপেডিয়া কিনে নেন। দারা খোশরোশাহী প্রতিষ্ঠানটির সিইও হন আর চেয়ারম্যান হন ব্যারি ডিলার। দারা খোশরোশাহীর নেতৃত্বে গত ১২ বছরেই এক্সপেডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০০৫ সালে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সেখানে ২০১৬ সালে এসে তা দাঁড়াল ৮.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলারে। ২০১২ সালে দারা খোশরোশাহী সিডনি স্যাপারিওকে বিয়ে করেন। তারা নিজেদেরকে ‘সাই-ফাই দম্পতি’ হিসেবে বলে থাকে। ইতিমধ্যে তাদের ঘর আলোকিত করে এসেছে চারটি সন্তান।
×