ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একটি সার্থক জীবনের প্রথম সোপান হতে পারে একটি স্বপ্ন- যে স্বপ্ন আশার পথ দেখায়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশকে নিয়ে। পৃথিবীতে যারা বড় হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের অনেকের নাম আজ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। স

আলো ছড়াচ্ছে ‘আলো’ স্কুল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আলো ছড়াচ্ছে ‘আলো’ স্কুল

সুমন্ত গুপ্ত আমাদের সমাজটা যদি একটা নদী হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম সেই নদীর স্রোত। তাদেরকে যে দিকে পথ করে দেওয়া হবে সেদিকেই তাঁরা প্রবাহিত হবে। সব বাধা বিপত্তি এড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলবে। নিজের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেকে বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে পারবে না। এখনকার তরুণ প্রজন্ম দেশকে নিয়ে ভাবে প্রতিনিয়ত। কিছু করতে চায় অবহেলিত মানুষদের জন্য। ঠিক তেমনি কিছু উদীয়মান তরুণদের প্রয়াসে নিয়ে সিলেট শহরে গড়ে উঠেছে ‘আলো’র। সময়টা তখন ২০১২ সালে, সিলেটের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের সদস্যরা গড়ে তুলে ‘আলো’ স্কুলের। লিডিং ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব সূচনালগ্ন থেকেই ‘ঞযব ংড়ষব সবধহরহম ড়ভ ষরভব রং ঃড় ংবৎাব যঁসধহরঃু’ এই সেøাগানকে বুকে আঁকড়ে ধরে আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছিল। কাজ করে যাচ্ছে এই ক্লাবেরই একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ। রোজায় নিয়মিত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ঈদের নতুন কাপড় বিতরণ, মেহেদী উৎসব, এতিম বাচ্চাদের নিয়ে ইফতার মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচী, শীতবস্ত্র বিতরণ, যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এসবই ছিল ক্লাবের নিয়মিত কর্মসূচীর তালিকায়। কিন্তু শুধুমাত্র এ টুকুতেই দমে যাওয়ার পাত্র ছিল না মানবতার সৈনিকরা। তাদের ইচ্ছা এবং লক্ষ্য ছিল আরও বড়। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই একদিন তাদের মাথায় এলো আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সমাজের বিভিন্ন মানুষজনের জন্য তো কাজ করছি। হঠাৎ করেই ওদের মাথায় এলো যে, ভার্সিটির ক্লাসের পর সবাই ফ্রি থাকে। আর সেই সময়টা যদি ভাল কোন কাজে লাগানো যায় তা হলে মন্দ নয়। তা হলে কেননা আমরা ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বিকালে সমাজের অবহেলিত বাচ্চাদের পড়াই না! যেই ভাবা সেই কাজ। সেই চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে ক্লাবের সদস্যরা। সঙ্গে সব সময় ছায়ার মতো ছিলেন সবার প্রিয় স্যার জাহাঙ্গীর আলম। খোঁজাখুঁজির পর বেশ ভাল একটা জায়গাও মিলে গেল। যেহেতু সবাই পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত তারা বেছে নিল বিকেল বেলার সময়টা। তাছাড়া সকাল বেলায় ক্লাস থাকে বাচ্চাদের। তাই সময় নির্ধারিত হলো বিকেল বেলা। কিন্তু কি নাম হবে স্কুলের। শুরু হলো সুন্দর একটি নাম খুঁজে বের করার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক হলো আলো, যেহেতু মূল উদ্দেশ্য অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের জীবনকে আলোকিত করতে আলোর যাত্রা। আলো স্কুল পরিচালিত হয় আলোর অভিযাত্রীদের দ্বারা। সিলেটের রায়নগরে অবস্থিত সরকারী শিশু পরিবারে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক এতিম বাচ্চা। একটি সার্থক জীবনের প্রথম সোপান হতে পারে একটি স্বপ্ন- যে স্বপ্ন আশার পথ দেখায়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশকে নিয়ে। পৃথিবীতে যাঁরা বড় হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁদের অনেকের নাম আজ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই মূলত তরুণ প্রজন্ম কাজ যে ভাবে করে যায় ঠিক তেমনি কাজ করছে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাবের সদস্যরা। প্রতিটি শিশুর মুখে আলো ফোটাতে কাজ করছে ক্লাবের সদস্যরা। এর ফলে পিএসসি, জেএসসিতে পাসের হার শতভাগ। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলত পাঠদান। শুরুর দিকে শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা কম থাকলেও, কয়েকদিন পর ক্লাবের সদস্যদের এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন দেখে বিশবিদ্যালয়ের বাকি শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হলো একাজে। তারাও যোগ দিতে চাইল ‘আলো’ স্কুলের শিক্ষকতার কাজে। সময় গড়িয়ে চলতে লাগল। ধীরে ধীরে লিডিং ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের ব্যাপ্তি আরও বড় হয়ে উঠল। সেই সঙ্গে বাড়ল সদস্য সংখ্যা। সেই সুবাদে ২০১৬ সালে বাগবাড়ীতে অবস্থিত সরকারী শিশু সদনে গড়ে তোলা হল ‘আলো’র দ্বিতীয় শাখা। সেই শাখাতেও বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করছে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী। শুরুর দিকে তাদের শতভাগ পাস করানোর লক্ষ্য থাকলেও, গত কয়েক বছর ধরে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এই দুটি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের পাশাপাশি একাধিক সর্বোচ্চ গ্রেড (এ+) নিয়ে আসছে ‘আলো’র শিক্ষার্থীরা। দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছাগুলো ততো বড় হচ্ছে। আগামীতে লিডিং ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের লক্ষ্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীকে ‘আলো’র পাঠদানের আওতায় নিয়ে আসা। যাতে করে তাদের পড়াশোনার ভিত্তিটা আরও মজবুত হয়। কে জানে! হয়ত অদূর ভবিষ্যতে এদের মধ্যে থেকেই কেউ হয়ে উঠতে পারে দেশ সেরা চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী!
×