ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অটোমেশন শিল্পের উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অটোমেশন শিল্পের উদ্যোক্তা

যখন ডেল্টা কন্ট্রোলসের প্রতিনিধি আসেন, তিনি আমাদের করা ওয়েস্টিনের কাজটি পুরোটা দেখে বলেছিলেন, আমি কতদিন বিএমএসের সঙ্গে জড়িত, আর আমি কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাকে যখন বললাম এটা আমার প্রথম কাজ আর আমি এই শিল্পে তেমন বড় কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই। এটা শুনে তিনি ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং প্রশংসা করেন। আমার প্রতিষ্ঠানের শুরুর জন্য যা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে ডিপ্রজন্ম-বিল্ডিং অটোমেশন সম্পর্কে জানতে চাই- সামদাদ তানভীর- বর্তমান পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এনার্জি এনভায়রনমেন্ট বা সেফটি এনার্জি, আমাদের দেশেও এটার ব্যতিক্রম নয়। মূলত বাণিজ্যিক ভবন, কারখানা, হোটেল, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মাসিউটিক্যালস সর্বত্র অতিরিক্ত শক্তি ব্যয়ের ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার সঙ্গে সঙ্গে সেফটি এবং সিকিউরিটি তো রয়েছেই, এসব বিষয়কে এক, অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আনে ইঁরষফরহম সধহধমবসবহঃ ংড়ষঁঃরড়হ (ইগঝ)। এপক্রিয়ার মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের হিটিং, এয়ার কন্ডিশনিং, ভেন্টিলেশন, সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্ট্রালি মনিটরিং, কন্ট্রোলিং, অপারেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট করা হয়। এসব কারণে যেমন শক্তি কম লাগে, পাশাপাশি সেখানের পরিবেশ উন্নত হয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক কাজগুলো মানুষের সাহায্য ছাড়া পরিচালিত হয় এখানে, বোঝার জন্য উদাহরণ দেইÑ আপনার অফিস সময় শেষ, এসি, লাইট বন্ধ করা লাগবে। আপনি বিএমএস প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণ করে রাখবেন কখন সব এসি, লাইট বন্ধ হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সব ফ্যান বন্ধ হবে, এটাই মূলত বিল্ডিং অটোমেশন। ডিপ্রজন্ম-সামদাদ তানভীর সম্পর্কে জানতে চাই- সামদাদ তানভীর-আমি ব্যক্তিজীবনে বাবার চাকরি সূত্রে ডেমরা করিম জুট মিল, বাওয়ানী জুট মিল এলাকায় বড় হয়েছি, প্রচ- ডানপিঠে ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। আমরা তিন ভাই, একজন থাকেন আমেরিকায় আরেকজন প্রাণ আরএফএলের নিরীক্ষক। আমি নিজে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএসইতে স্নাতক শেষে একটি প্রাইভেট ফার্মে ছিলাম দু’বছর, এরপর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সিস্টেম অপারেটর হিসেবে যোগ দেই, সেখানেই কেটেছে আট বছরের মতো। এর মাঝেই বার বার চিন্তা-ভাবনা করেছি নতুন কিছুতে আসা যায় কিনা, তবে নিজের প্ল্যাটফর্ম সিএসই থেকে সরে যাব না বিশ্বাস ছিল। একসময় ইস্ট ওয়েস্টের হেড অব আইটি হিসেবেও কাজ করেছি। ২০০৫-এর দিকেই মূলত আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এম্বট্রনিকস লিমিটেডের কাজ শুরু করি। ডিপ্রজন্ম-ছোটবেলার কোন মজার স্মৃতি- সামদাদ তানভীর-আমি মতিঝিল আইডিয়ালে পড়ছি তখন। বাসায় আসা যাওয়ার পথে দেখতাম সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে উশু (কারাতে) প্রশিক্ষণ, বাসায় জানালে ছোট মানুষ এসব করা লাগবেনা এ রকম কথা শুনতে হয়। লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস শেষে শিখলাম। দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক আসরে বিচারক হিসেবেও ছিলাম আমি। ডিপ্রজন্ম-নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানান পাঠকদের- সামদাদ তানভীর-আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এম্বট্রনিকস লিমিটেড। প্রথমে যেটা বলছিলাম, বিল্ডিং অটোমেশন, এ কাজটি করতে গেলে যে ইকুইপমেন্টগুলো দরকার তা এ দেশে সরবরাহ করে খুব কম প্রতিষ্ঠান। সারা পৃথিবীতে বিল্ডিং অটোমেশন নিয়ে নামকরা পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিমেন্স, হানিওয়েল, জনস কন্ট্রোল, স্নাইডার এবং ডেল্টা কন্ট্রোল। এর মধ্যে আমি কাজ করছি ডেল্টা কন্ট্রোলের সঙ্গে, তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ এবং তাদের ব্যবসায় বাংলাদেশে বড় আঙ্গিকে ছড়িয়ে দিতে আমার ভাই যিনি আমেরিকা থাকেন তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। আমরা যখন ডেল্টা কন্ট্রোলের সঙ্গে কথা বলি, তাদের একজন বৈশ্বিক কর্মকর্তা দেশে আসেন। আমাদের খিলগাঁও প্রধান অফিসে তিনি কথা বলেন, আমার করা কাজগুলো দেখেন এবং আমাদের অনুমোদন করে যান। এরপর থেমে থাকেনি পথচলা তবে প্রথমে পেছনে ফিরে যাই। ইস্ট ওয়েস্টের অফিসে তৎকালীন এক সহকর্মী জানালেন ওয়েস্টিন হোটেলে এ রকম একটি কাজ যা অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় আছে, ওটা শেষ করতে পারি কিনা দেখতে। আমি গেলাম, দেখলাম আর চিন্তা-ভাবনা না করে বলে দিলাম আমি পারব। সেটা করেছিলাম অনেক চিন্তা মাথায় রেখে,আমাদের করা বিল্ডিং অটোমেশনের প্রথম কাজ ছিল সেটা। বর্তমানে আল আরাফা ইসলামিক ব্যাংক ভবন, ইউনিক গ্রুপের হোটেল (ইলিমেন্ট বাই ওয়েলটিন), ইস্টার্ন হাউজিং এর কর্মাশিয়াল বিল্ডিং, ইম্পেরিয়াল হসপিটাল চট্টগ্রাম, এম এ্যান্ড জে গ্রুপের কলম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্টের, আর চট্টগ্রাম রেডিসন, ঢাকা রেডিসন, আবদুল মোনেম ভবন, সেভরন মানিকগঞ্জ এবং জিরাবো প্লান্ট, ইনসেপ্টার হেড অফিস আমাদের তৈরি করা বিএমএসে পরিচালিত হচ্ছে। খুব কম সময়ে বড় আকারে ব্যবসায়ে ভাল অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি আমরা। ডিপ্রজন্ম-বাংলাদেশে বড় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ করছেন, এমন কোন ঘটনা আছে যা সত্যি প্রেরণার বাতিঘর হয়ে কাজ করে? সামদাদ তানভীর-হ্যাঁ অবশ্যই। যখন ডেল্টা কন্ট্রোলসের প্রতিনিধি আসেন, তিনি আমাদের করা ওয়েস্টিনের কাজটি পুরোটা দেখে বলেছিলেন, আমি কতদিন বিএমএসের সঙ্গে জড়িত, আর আমি কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাকে যখন বললাম এটা আমার প্রথম কাজ আর আমি এই শিল্পে তেমন বড় কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই। এটা শুনে তিনি ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং প্রশংসা করেন। আমার প্রতিষ্ঠানের শুরুর জন্য যা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ডিপ্রজন্ম-সাফল্যের মূল্যায়ন যেভাবে করবেন- সামদাদ তানভীর-প্রতিযোগী পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী এজেন্টদের সঙ্গেই বেশ ভাল সম্পর্ক আমাদের। প্রথম তিন বছরে মোটামুটি কাজ পেলেও শেষ এক বছরের পরিসংখ্যান গর্বের সঙ্গে বলি, “ আমাদের এই সাফল্যের সম্ভব হয়েছে, আমাদের উপর ক্লায়েন্টের আস্থা আছে বলেই। আমরা সব সময় চেষ্টা করি ক্লায়েন্ট যেন তার ন্যায্য পাওনাটা পায়, শতভাগ সৎ থেকে ক্লায়েন্টের বেষ্ট ঝড়ঃঁঃরড়ৎটা দেই সব সময়। এই কারণেই রহফঁংঃৎু-তে অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় নতুন হয়েও আমরা নিজেদেরকে একটি ভাল অবস্থান তুলে আনতে পেরেছি। ডিপ্রজন্ম-বাংলাদেশে বিল্ডিং অটোমেশন শিল্পের ভবিষ্যত যেমন? সামদাদ তানভীর-পথিবীটা ছোট হয়ে আসছে, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যেখানে উন্নত বিশ্বে সময় সাশ্রয়ী, বিদ্যুত সাশ্রয়ী, ব্যবহার উপযোগী বিল্ডিং অটোমেশন ব্যবহার করে। আমি মনে করি, সংবাদ মাধ্যমওগুলো এই বিষয়ে আরও বেশি প্রতিবেদন করে দেশের মানুষকে এর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করবে, যাতে দেশ এবং দেশের মানুষ সমভাবে উপকৃত হয়। নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় বাংলাদেশে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ শিল্পটি, দ্রুত এটি আরও ব্যাপক প্রচার পাবে। অবশ্যই ডিপ্রজন্ম পরিবারকে ধন্যবাদ আজকের সাক্ষাতকারে বিল্ডিং অটোমেশন নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করায়, হয়ত খুব দ্রুত এভাবে সারা দেশের কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা এ শিল্প সম্পর্কে জেনে যাবেন ও শিল্পটির হালচাল এবং সুযোগ-সুবিধা মতো সবাই নিজের প্রতিষ্ঠানে এটি ব্যবহার করে লাভবান হবেন। ডিপ্রজন্ম-দেশের স্বাপ্নিক তরুণদের জন্য পরামর্শ- সামদাদ তানভীর-আজকে থেকেই শুরু করুন। নিজের শক্তির জায়গাটি চিহ্নিত করুন, হাল ছাড়বেন না। যদি বিল্ডিং অটোমেশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে স্বপ্ন থাকে, রিসার্চ করুন। বাইরের প্রচুর স্টাডি লিঙ্ক পাবেন, জানুন। আমার ইচ্ছা আছে এ ইন্ডাস্ট্রিতে যাতে তরুণরা আসতে পারে সে জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। সেমিনার বা যে কোন উপায়ে তরুণদের আকৃষ্ট করা, কারণ লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান সারাদেশে। প্রতিটি জেলায় উপজেলায় একসময় অনেকেই এই সুযোগ নিতে চাইবে, কিন্তু অত লোকবল কই? তাই যদি স্বপ্ন থাকে মনে, আজই শুরু হোক নতুন কিছুর চেষ্টা।
×