ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন শুরু

এবার সিটওয়ে অভিযান বর্মী বাহিনীর

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এবার সিটওয়ে অভিযান বর্মী বাহিনীর

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তিন জেলা- মংডু, বুচিদং, রাচিদং শহরে জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, গুম ও বিতাড়নের চূড়ান্ত মিশন শেষ পর্যায়ে এনে এখন বন্দর শহর সিটওয়েতে (সাবেক আকিয়াব) একই কায়দায় নারকীয় তা-ব শুরু হয়েছে। যাকে ‘অপারেশন সিটওয়ে’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এ বন্দর শহরটিতেও রয়েছে রোহিঙ্গাদের আধিক্য। সোমবার টেকনাফ থেকে সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন এলাকায় আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করেছে এপারের লোকজন। আন্তর্জাতিক মহলগুলো নিন্দাবাদ-প্রতিবাদ, অনুনয়-বিনয়, আহ্বান কোন কিছুই মিয়ানমার সরকার আমলে নিচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে আটক হয়েছে এক পাকিস্তানী টিভি সাংবাদিক। রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন ‘আরসা’ এক মাসের জন্য যে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা দিয়েছে তা মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অপরদিকে সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঘটনাকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলে চেষ্টা বলে অবহিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ঢাকা থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের কক্সবাজার নেয়া হচ্ছে বুধবার। এদিকে, সীমান্তের ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল পেরিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু দল কেবলই আসছে। রোহিঙ্গা ভারে টেকনাফ থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে আছে। বিশেষ করে উখিয়া টেকনাফের জনপদ এখন রোহিঙ্গা ভারে একেবারেই জর্জরিত। আবার এর মধ্যে উখিয়া অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী নিষ্ঠুর ও বর্বর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে ঢল নেমেছে তা যেন থামছেই না। তবে স্থল ও নাফ নদের তুলনায় সমুদ্রপথেই এখন বেশি আসছে। বিভিন্ন ধরনের নৌযানযোগে এরা আসছে। সঙ্গে ভেসে আসছে সারি সারি লাশ। বহু লাশ ইতোমধ্যে পচে-গলে সাগরের পরিবেশকেও দূষিত করে তুলেছে। আগেই বলা হয়েছে, সীমান্ত এলাকাকে সামরিক অপারেশন জোন ঘোষণা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রোহিঙ্গাবিরোধী যে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সোমবার নতুন করে রোহিঙ্গাদের আরও কয়েকটি পাড়া জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা হত্যাও অব্যাহত রয়েছে। নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বসতিতে সোমবারও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। রবি ও সোমবার সকালে টেকনাফ থেকে পরিষ্কারভাবে আগুনের ওই লেলিহান শিখা দেখা গেছে টেকনাফের এপার থেকে। সকাল থেকে মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ আগুনের কু-লী ছিল লক্ষণীয়। রাখাইন রাজ্যে এখনও অবস্থানগত রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে সামরিক বাহিনী মাইকিং করে আল্টিমেটাম দিয়েছিল আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত। কিন্তু তার আগেই নতুন করে সেনাসদস্যদের দমন-নিপীড়ন শুরু হয়ে গেছে। ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া এবং মংডুর উকিলপাড়া এবং মগনীপাড়ায় নতুন করে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। আরসার অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যাত রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) পক্ষ থেকে গত রবিবার এক মাসের জন্য যে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল মিয়ানমার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারি সূত্রে উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আরসা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা মিয়ানমারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তাদের সঙ্গে কোন ধরনের বৈঠক করবে না মিয়ানমার সরকার। আরসার পক্ষ থেকে অস্ত্রবিরতির যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে তাতে কোন মাথাব্যথা নেই। অর্থাৎ আরসার ঘোষণাকে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় সোমবার পর্যন্ত আরসার পক্ষ থেকে নতুন করে কোন ঘোষণা মেলেনি। ওপার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা যুবকদের দেখামাত্র গুলি অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয় গুলি করে রোহিঙ্গাদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। রবি ও সোমবার সকাল থেকে রাখাইন আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে সেখানকার পোয়াখালী, নাইচাদং, সিকদারপাড়া, নাইচাপ্রু, হাতিপাড়ায় রোহিঙ্গা বসতিতে নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে। দাউ দাউ করে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে আরও অসংখ্য বসতি। প্রাণ হারিয়েছে আরও বহু রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের (আরসা) সংগঠনের অস্ত্রবিরতির ঘোষণায় সেনাবাহিনী বা মিয়ানমার সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করার মতো কোন সিদ্ধান্ত নেই তাদের। মিয়ানমারের দাবি রয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী আরসাকে প্রতিরোধ করতে ক্লিয়ারেন্স অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির নেত্রী আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকার আরসাকে আগেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সীমান্তের ২২ পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২২টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদস্যরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সরাসরি বাধা দিচ্ছে না। এ সুযোগে রোহিঙ্গারা দলে দলে এপারে চলে আসছে। এরপরও সীমান্তের জিরো পয়েন্টগুলোতে রোহিঙ্গাদের অপেক্ষমাণ ঢল রয়েছে। অনিশ্চিত অবস্থায় একমাত্র বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর নেই। অনেকে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মিয়ানমারের যৌথ বাহিনীর আক্রমণে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, নতুন গড়ে ওঠা বালুখালী ঢালার মুখ, থাইনখালী হাকিমপাড়া, তেলখোলার তাজনিরমার খোলা, বাঘঘোনা বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করছে। অনুপ্রবেশ সাড়ে ৪ লাখ গত ২৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে বেসরকারী পরিসংখ্যা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ সংখ্যা তিন লক্ষাধিক বলে স্বীকার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এখনও পরিসংখ্যান নির্দিষ্ট করা যায়নি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এরপরই সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আর বসবাস করার সুযোগ রাখা হবে না। এ লক্ষ্য নিয়ে ক্রমাগতভাবে সামরিক অভিযান বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ অভিযানে ইতোমধ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। অনেকের হয়েছে গণকবর। গুলিবিদ্ধের সংখ্যা বাড়ছে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানে রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রায় একশ’য়ে পৌঁছেছে। এরা কক্সবাজার অঞ্চলের সরকারী- বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতেও আহত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ভর্তি হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে গঠিত মেডিক্যাল টিমগুলো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত যেসব এলাকায় নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে রবিবার বিকেলে ও সোমবার সকালে নতুন করে জ্বালানো শুরু করেছে মসজিদ-মক্তব ছাড়াও সিটওয়ে (সাবেক আকিয়াব) এলাকার রোহিঙ্গাদের বসতি পল্লীতে। সেখানকার নাজিরপাড়া ও চ্যাক্কিপাড়ার বাড়িঘর সোমবার দাউ দাউ করে আগুন জ্বলেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার রাচিদং জেলার ধইনচ্যাপাড়া, পোয়াখালী, বলিবাজার, বুচিদংয়ের তামাবিল, ইয়ানচিং, চিন্দিপ্রাং, লুদাম, মিইঝিপাড়া, গুপিপাড়া, কুয়াইংচং, রাইচং, মংডু জেলার কইল্যাভাঙ্গা, নারিনচং, মগ্নিপাড়া, সিকদারবিল, পেরামপ্রু, নাইছ্যাপুর, শীলখালী, ধুমছেপাড়া, কোয়াংসং, আন্দং, জাঙ্গাসা, চিন্দং, ওলাবেগ, ওয়ারিয়ং, চান্দিপ্রাং, ধাব্বিসং ও কোয়ান্দং এলাকা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। টেকনাফ সমুদ্র থেকে রোহিঙ্গা কিশোরীর লাশ উদ্ধার টেকনাফের বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত থেকে সোমবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে এক রোহিঙ্গা কিশোরীর লাশ। এ নিয়ে মিয়ানমার থেকে নৌপথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়ে উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি পাল বলেন, বাহারছড়া সমুদ্রসৈকতে সোমবার সকালে এক কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টায় লাশটি উদ্ধার করে। পোশাক দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে লাশটি রোহিঙ্গার। বর্ষণে একাকার রবি ও সোমবার থেমে থেমে বর্ষণ হওয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে সহায়-সম্বল হারিয়ে তারা এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তার ওপর বর্ষণে তারা আরও মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো ত্রিপল ছাউনি দিয়ে নির্মিত। এসব ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি তাদের অবস্থানকে কর্দমাক্ত করেছে। ভিজে একাকার হয়ে গেছে তাদের সঙ্গে থাকা সকল সামগ্রী। আজ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কাজ শুরু মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গা নিবন্ধন শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাইন উদ্দিন। অফিসিয়াল কিছু জটিলতার কারণে সোমবারের পরিবর্তে আজ থেকে রোহিঙ্গা নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আমরা সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়ার কুতুপালং-বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের রাখা হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত। ৭২ রোহিঙ্গা আটক কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী নৈশকোচে তল্লাশি চালিয়ে ৭২ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র‌্যাব। রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন নৈশকোচে তল্লাশি চালিয়ে ওসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়। র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন জানিয়েছেন, আটককৃত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে কৌশলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পালিয়ে যাচ্ছিল। আটককৃত রোহিঙ্গাদের কুতুপালংয়ে নির্ধারিত শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। লাশের নদী মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা মংডুর শাহাব বাজারে একটি লাশের নদীর সন্ধান মিলেছে। ওপারের সূত্রগুলো বলেছে, মংডুর বলিবাজার দিয়ে প্রবাহিত ‘সাতকাইন্না পাড়া’ নামের এ নদীতে রয়েছে শুধু লাশ আর লাশ। এসব লাশ ইতোমধ্যেই পচে পুতিময় গন্ধ ছড়াচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্বিচারে নিহত নিরীহ রোহিঙ্গাদের লাশ সেখানে ফেলা হয়েছে। এছাড়া নদীর পাড়েও রয়েছে সারি সারি লাশ। সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। নদীর পানি ও সংলগ্ন এলাকা পরিবেশ এখন বিভীষিকাময়। মিয়ানমারে পাকিস্তানী সাংবাদিক আটক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টিভিতে লাইভ কভারেজ করাকালে পাকিস্তানী আনসার আমির নামের এক সাংবাদিককে আটক করেছে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে আটক করার কোন কারণ জানায়নি মিয়ানমার সরকার। পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানের একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক আনসার আমির মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে লাইভ কভারেজ করছিলেন। এরই মধ্যে তাকে পুলিশ আটক করে ইমগ্রেশন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তিল ধারণের ঠাঁই নেই টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত জনপথে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পথে-ঘাটে-হাটে-বাজারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বত্র রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর ঢল নেমেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত প্রায় ২৫টি পাহাড়ে রোহিঙ্গারা সামরিক বস্তি গড়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের মাঝে নানা রোগে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনাহারে-অর্ধাহারে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পৌঁছার পর এরা একদিকে যেমন ক্লান্ত তেমনি অপরদিকে প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাবে বিপর্যস্ত। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রাণান্তকর প্রয়াস চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিওর সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে কম। সরকারের পক্ষে মনিটরিং ব্যবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা জাতি নির্মূল চেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বলপ্রয়োগে সেনা অভিযানের ঘটনাকে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলে চেষ্টা বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। সংস্থার হাইকমিশনার যাইদ বিন রাআদ আল হুসাইন সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় এ বক্তব্য দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যাইদ বলেছেন, গত মাসে সেখানকার বিদ্রোহীদের হামলার ঘটনার পর মিয়ানমার সরকারের পক্ষে সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যা চালাচ্ছে তা স্পষ্টতই বাড়াবাড়ি। এ ঘটনা একটি জাতিগোষ্ঠী নিপীড়নের প্রয়াস বলেই তিনি মনে করেন। যাইদ বিন রাআদ আল হুসাইন মিয়ানমার সরকারকে চলমান নৃশংস সামরিক অভিযান বন্ধ করার পাশাপাশি সংঘটিত ঘটনার জন্য জবাবদিহির আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মারাত্মক সুদূরপ্রসারী বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে বলেও তিনি মত ব্যক্ত করেন। পটিয়াতেও আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া থেকে জানান ॥ বায়োমেট্রিক ছাড়াই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কক্সবাজার পেরিয়ে এখন চট্টগ্রামের পটিয়াতেও আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কোন না কোনভাবে তারা দল বেঁধে সদর ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে পড়ছে। মূলত তাদের আত্মীয়-স্বজন আগে থেকেই পটিয়ায় বসবাস করার কারণে তারা দ্রুত কক্সবাজার থেকে পালিয়ে আসছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করে তাদের নির্ধারিত স্থানে রাখার কথা ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। সোমবার সকালে পটিয়া সদরের ডাকবাংলোর মোড় হয়ে একই সঙ্গে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ উপজেলার পশ্চিম হাইদগাঁও গ্রামে ঢুকে পড়েছে। সকালে তাদের দুদু মিয়া নামের আরেক রোহিঙ্গা নাগরিক ডাক বাংলার মোড় এলাকা থেকে হাইদগাঁও গ্রামে নিয়ে যায়। এভাবে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন পটিয়া ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, বোয়ালখালী ও সদ্য ঘোষিত কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ছে। এসব রোহিঙ্গাদের অন্তত কক্সবাজারে পাঠানোর কোন উদ্যোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলায় অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এতদিন বসবাস করে আসছিলেন। এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশিরভাগ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পৌর সদরের উত্তর গোবিন্দারখীল, দক্ষিণ গোবিন্দারখীল, পটিয়া মাদ্রাসার পিছনে, সুচক্রদন্ডী, মাতৃভান্ডার এলাকা, আমির ভান্ডার এলাকা, উত্তর হাইদগাঁও, পূর্ব হাইদগাঁও, পশ্চিম হাইদগাঁও আলীর দোকানের পশ্চিমে ছাড়াও উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে ভাড়া বাসা নিয়ে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে যাচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেখানকার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের কারণে এ পর্যন্ত তিন লাখ রোহিঙ্গা এদেশে ঢুকেছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকার কারণে রোহিঙ্গারা পটিয়াসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসন এখন নতুন করে চিন্তিত। রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজন যারা আগে থেকে এখানে বসবাস করতেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মূলত তারা (রোহিঙ্গা) কৌশলে ঢুকে পড়ছে। হাইদগাও গ্রামের নিবাসী দিদারুল আলম সুমন জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দল বেঁধে প্রথমে পটিয়া ডাকবাংলো ও পরে পশ্চিম হাইদগাঁও হংসীর পাড়া এলাকার রোহিঙ্গা দুদু মিয়ার ভাড়া বাসায় ওঠেন। আগে থেকেই দুদু মিয়াসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা নাগরিক পশ্চিম হাইদগাঁও এলাকায় বসবাস করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোঃ নেয়ামত উল্লাহ জানিয়েছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শেষ না করে যারা কক্সবাজার থেকে পালিয়ে পটিয়ায় আসতে শুরু করেছে তাদের পুনরায় কক্সবাজারে পাঠানো হবে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারীভাবে কক্সবাজারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক শেষ না করে পটিয়ায় আসলে তারা আইনশৃঙ্খলার বিঘœ ঘটাতে পারে। এলাকাবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
×