ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব জনমত সৃষ্টি প্রয়োজন ॥ তোফায়েল

কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এখন মানবিক কারণে তাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে বিশ্বনেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যত যাইহোক, মিয়ানমারের সঙ্গে এ মুহূর্তে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করা কোন সমাধান নয় বরং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জে ওয়ার্নানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হবে। এই সময়ে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ যদিও বলেছে, ২ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, আসলে সেই সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগে থেকেই ৬ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী আজ (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে যাবেন। আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, তা গণহত্যার শামিল। তোফায়েল আহমেদ বলেন, খবর বেরিয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের যে এলাকায় বসবাস করত সেই এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে দিয়ে তারা শিল্প কারখানা করবে। বিশ্ববাসীর উচিত হবে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা। মানবিক এই বিপর্যয় রোধকল্পে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হওয়া উচিত। মিয়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তাতে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে সম্মানিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু উত্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের বিশ্বাস, কোফি আনান কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেটি বিবেচনায় নিলেই এই গণহত্যা বন্ধ হবে। আমাদের মধ্যে সভ্যতা আছে, মানবতা আছে। আর এ কারণেই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি। ১৬ কোটির বাংলাদেশে আরও ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় আমরা দিতেই পারি। কারণ শরণার্থীদের দুঃখ-কষ্ট আমরা বুঝি। একাত্তর সালে এক কোটি বাঙালী শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমরা তখন গৃহহীন হয়ে পড়েছিলাম। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির মন্তব্যের কথা তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমাদের সব কাজের মধ্যেই ‘না’ খোঁজে। আমরা যেকোন কাজ সুষ্ঠুভাবে করি। দেশের ও দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য করি। তারপরও বিএনপি তার সমালোচনা করে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও এই দলটি প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। মিথ্যাচারের কারণে এদেশের মানুষ এখন বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, আজ সংসদে সুপ্রীমকোর্টের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমরা পৃথিবীর নানা দেশের আইন-কানুন মাথায় রেখেই এ নিয়ে আলোচনা করব। এটা যে সঠিক হয়নি সেই বিষয়ে সংসদে আমাদের যুক্তিতর্কগুলো তুলে ধরব। সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছে। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আইএফসি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তাদের মূল্যায়নে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দশটি দেশের মধ্যে এখন বাংলাদেশ প্রথম দিকে রয়েছে। দেশের রফতানি ও বিনিয়োগ বাড়ছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার রেডিসন হোটেলে আইএফসির উদ্যোগে একটি বড় সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তোফায়েল আহমেদ বলেন, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৬০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬০ বিলিয়ন রফতানি আয় হবে। এছাড়া রফতানি বাড়াতে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পোশাক রফতানির পাশাপাশি আইটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, লেদার, জুট, প্লাস্টিক এবং ফার্নিচার সামগ্রী রফতানি বাড়ানোর কৌশল নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমমান ইস্যুতে এ্যাকর্ড এ এ্যালায়েন্স যে চাপ সৃষ্টি করেছিল তা এখন আর নেই।
×