ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টানা বর্ষণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ অবর্ণনীয়

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টানা বর্ষণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ অবর্ণনীয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের ওপর আবারও ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, বর্তমানে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে রবিবার থেকে অবিরাম বর্ষণ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে সোমবার সকাল থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। টানা বর্ষণের কারণে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তুমুল বর্ষণের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে অফিসগামী যাত্রীদের নাকাল হতে হয়েছে। সৃষ্টি হয় যানজটের। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষকে গন্তব্যে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবারসহ চলতি মৌসুমে রাজধানী ঢাকা পাঁচবার পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতিবার জনগণের ভোগান্তি চরমে ওঠে। এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টিপাতের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়ে যাওয়ার কারণে আবহাওয়ার চরম বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতির আচরণ বদলে যাচ্ছে। আবহাওয়া এবং জলবায়ুর এ বৈপরীত্যের কারণে প্রকৃতি একেক সময় একেক আচরণ করছে। কখনও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে আবার কখনও বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছে না। আবহাওয়া অফিসের হিসাবমতে, সোমবারের আগে সর্বশেষ ৩ আগস্ট রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বর্ষার শুরুতে গত ১২-১৩ জুন ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ঢাকায়। ১৩ জুলাই বৃষ্টি রেকর্ড হয় ১০৩ মিলিমিটার। গত ২৬ জুলাই রাতে মাত্র ৬৭ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে নগরবাসীকে জলজট ও যানজটের তীব্রতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এ অবস্থায় আবারও সারাদেশে ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে তারা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ মঙ্গলবারও সারাদেশে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানায়, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ মি.মি-৮৮ মি.মি) থেকে অতিভারি (৮৯ মি.মি) বর্ষণ হতে পারে। ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টির কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ঘন কালো মেঘের কারণে সকালে সন্ধ্যার আবহ তৈরি হয়। সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় বৃষ্টি। সঙ্গে বজ্রপাত। একটানা চলে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঢাকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সন্দ্বীপে ৯২ মিলিমিটার। এদিকে রাজধানীতে একটানা বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েন অফিসগামী লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলে ধীরগতিতে। জলজটের কারণে রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ার কারণে হেঁটে যাওয়ারও কোন উপায় ছিল না। সিএনজিচালিত বাসগুলো জলাবদ্ধ রাস্তায় বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে যানজটের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর কোন কোন সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। রাজধানীর কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর, ধানম-ি ২৭, সোবহানবাগ, বসুন্ধরা সিটির পেছনে গার্ডেন রোড, পান্থপথ মোড় পার হয়ে গ্রীন রোডের কিছু জায়গা, পশ্চিম তেজতুরীপাড়া, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, মতিঝিল, পল্টনসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও শান্তিনগর, মালিবাগ, তেজগাঁও, পুরান ঢাকার আদালতপাড়া ও মিরপুরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তায় পানি জমে থাকায় মিরপুর রোড, মগবাজার থেকে মহাখালীগামী সড়ক, ডিআইটি রোড ও প্রগতি সরণিতে যানজট সৃষ্টি হয়। বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী আর জীবিকার তাগিদে পথে নামা মানুষকে যানবাহন না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গাড়িতে উঠতে পারলেও যানজটে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। সরেজমিন দেখা যায়, ধানম-ি ২৭ নম্বরে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এ রুটে চলাচলকারী সিএনজিচালিত যানগুলো পানির মধ্যে বিকল হয়ে রাস্তা আটকে যায়। ফলে গাবতলী-নিউমার্কেট হয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এছাড়াও এ রুটে মানিক মিয়া এভিনিউ-ফার্মগেট-গুলিস্তান এবং মহাখালী রুটে চলাচলাকারী পরিবহনগুলো একই অবস্থার মধ্যে পড়ে। ভারি বৃষ্টিতে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি জমে যায়। আবার কোথাও কোথাও বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বৃষ্টির কারণে হঠাৎ করেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা বাস সঙ্কটে বৃষ্টির মধ্যে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। দুপুরে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। আবার শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০ নম্বরে যাওয়ার পথে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। কোথাও কোথাও পরিবহন সঙ্কটের কারণে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে দ্বিগুণ/ তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। রিক্সাওয়ালারাও সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ২০ টাকার স্থলে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে রিক্সাওয়ালারা। তেজতুরীপাড়া বাজার এলাকার এক বাসিন্দা জানান, বৃষ্টির জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া বেশি চেয়েছে সব রিক্সাওয়ালা। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে কাওরানবাজারে তার অফিসে পৌঁছতে হয়েছে। আবার অনেকে ভারি বৃষ্টির কারণে অফিস-আদালতে পৌঁছতেই পারেননি। এ ধরনের অনেক ভুক্তভোগী জানান, অফিসের উদ্দেশে রাস্তায় নেমেই কাকভেজা হতে হয়েছে। তাই শরীর ভেজা অবস্থায় অফিসে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাসচালকরা দাবি করেছেন, বৃষ্টির মধ্যে তাদের ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে হয়েছে। ভাড়া বাড়িয়ে নিলেও পানিতে গাড়ি চলার জন্য ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ির অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তারা জানান, এর মধ্যে যারা রাস্তায় গাড়ি বের করেনি তাই অনেকটা শান্তিতে রয়েছে। তবে এ বৃষ্টিতে যাদের নিজস্ব পরিবহন আছে তাদের যানবাহন খোঁজার ঝক্কি পোহাতে হয়নি। গুনতে হয়নি বাড়তি ভাড়ার ঝামেলাও। তবে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এদিকে সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মাসের প্রথমার্ধে দেশের পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’-একটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান তিনি।
×