ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাধান মাত্র ৬ কি.মি. রাস্তা নির্মাণ

জীবনের ঝুঁকি প্রতিদিন

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জীবনের ঝুঁকি প্রতিদিন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর, ১১ সেপ্টেম্বর ॥ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই নিজেরাই নৌকা চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। বিষাক্ত সাপের কামড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জোয়ার-ভাটার তীব্র স্রোত ও সামান্য ঢেউয়ে কিংবা অসাবধানতার কারণে নৌকা উল্টে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে জ্ঞানের আলো সঞ্চয় করে দেশ ও জনগণের সেবা করবে এমন স্বপ্ন এসব শিশুর মধ্যে। স্কুলের আশেপাশে খাবারের দোকান নেই। ক্ষুধা লাগলে পানি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে তারা। যুগযুগ ধরে এভাবেই শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে নাজিরপুর বিলাঞ্চলের মনোহরপুর এলাকার জনগণ। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে উত্তর-পূর্বকোণে এবং গাওখালী বাজার থেকে উত্তরদিকে ৫ কিলোমিটার দূরে মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি পিরোজপুর ভৌগোলিক সীমারেখার শেষ প্রান্তে। এর আশপাশে আরও ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে বিল ডুমরিয়া, বাঁশপাড়া মনোহরপুর, সোনাপুর ও ত্রিগ্রাম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিরা জানান, ছোট ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুগের পর যুগ স্কুলে আসা-যাওয়া করে তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারের উচ্চপদে চাকরি করছেন এখন অনেকেই। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত মনোহরপুর প্রাথমিক স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকরি করে অনেকে অবসর নিয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। এখনও অনেকে কর্মরত সরকারের উচ্চপদে। কিন্তু পরির্বতন হয়নি মনোহরপুর স্কুলসহ বিলাঞ্চলের অন্যান্য স্কুলের। মাত্র ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হলেই পাল্টে যাবে স্কুলের পরিবেশ। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মনোহরপুর প্রাথমিক স্কুলটি সরকারীকরণ করেন। এরপর থেকে সরকার আসে সরকার যায় স্কুলগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমেনি। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। আর শীতকালে তাদের কষ্ট হয় বেশি ওই সময় বিলে এবং খালে পানি থাকে না। খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। কোন বাহনই চলে না তখন। তখন জোয়ার-ভাটায় নির্ণয় করে ক্লাস নেয়া হয়। তারপরও স্কুলে যেতে হয় তাদের কাদা পেরিয়ে। শিক্ষার্থীরাসহ শিক্ষকদের এক সেট জামা কাপড় স্কুলে রেখে দিতে হয়। শনিবার নাজিরপুর গাউখালী বাজার থেকে নৌকায় সরেজমিনে মনোহরপুর স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করে বিদ্যালয়ের সামনের খালে রাখা ছোট ছোট নৌকায় উঠছে। এরপরই তারা নৌকায় চড়ে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মনোহরপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরণ রায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বছরের ১২ মাসই শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ৬ কিলোমিটার রাস্তা হলে এই দুর্ভোগ আর থাকে না। মনোহরপুর প্রাথমিক স্কুলে ৪ শিক্ষক রয়েছে। আরও দুজন শিক্ষকের পদ শূন্য। এছাড়া দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত আছে। কিন্তু এই স্কুলে বিদ্যুত নেই। মনোহরপুর মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিল বরাল জানান, স্কুলটি থেকে প্রতিবছরই শতভাগ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে। শিক্ষক মাত্র ১২ জন। টিনশেড স্কুলে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে। গত বছর ৩৫ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৩৫ জনই পাস করেছে। তিনি বলেন, এখানে একটি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কথা থাকলেও তা নির্মাণ করা হয়নি। সাইক্লোন সেন্টারটি নির্মাণ করা হলে পাঠদানে আর ঝুঁকি থাকে না। এছাড়া ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হলে স্কুলের পরিবেশটা পাল্টে যেত। এই স্কুলের সাবেক ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি বাবুল আকন জানান জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুলে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করে দেয়াসহ ভবন নির্মাণের। তাদের দেয়া আশ্বাস বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম শেখ বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকা চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে শুনে আমি নিজেই দেখতে গিয়েছি। সারাদিন নৌকায় ছিলাম। স্কুলগুলোর সমস্যা সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নেব।
×