ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হবে ২০২১ সালে

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হবে ২০২১ সালে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতায় পড়েছে শিক্ষা এবং প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাইলটিংভিত্তিতে বেশকিছু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী চালু হলেও অর্থ সঙ্কট, অবকাঠামো ও শিক্ষক সঙ্কট আর শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষণœ রাখাই নীতি বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায় হয়ে সামনে এসেছে। এ অবস্থায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পিছিয়ে ২০২১ সালকে ‘টার্গেট বছর’ নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হলেও তার আগে আগামী তিন বছর চলবে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক সঙ্কট দূরীকরণের কাজ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষানীতিতে আগামী বছরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার কথা বলা হলেও দৃশ্যমান নানা সমস্যা সামনে চলে এসেছে। তাই আগামী দু’তিন বছর ধরে এ সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণীর জন্য প্রস্তুত করা হবে। এরপর ২০২১ সালে শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির এ অংশটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দেখছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ আবদুল মান্নান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেছেন, অবশ্যই শিক্ষানীতি অনুসারে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হবে। তবে আগামী বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা যাবে না বাস্তবতার কারণেই। নানা সমস্যা আছে। অবকাঠামোর অভাব আছে, শিক্ষক সঙ্কট আছে, আছে আরও নানা সীমাবদ্ধতা। এসব বাধা আমরা আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দূর করতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এরপরই ২০২১ সালে দৃশ্যমান হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা। দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে সারাদেশের হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভয়াবহ অবকাঠামো সঙ্কট। খোদ রাজধানীতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা বেহাল। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শিশুদের উপযোগী শ্রেণীকক্ষ। যাদের আছে তাও আকারে ছোট। অষ্টম শ্রেণীতো পরের কথা, ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষকসহ ৫৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমই পড়েছে সঙ্কটের মুখে। শিক্ষানীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সরকারী উদ্যোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন উদ্বেগজনক চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলসহ নানা সঙ্কটের কারণে বর্তমানের পঞ্চম শ্রেণী চালু রাখাই দায়। এমন জটিলতা উত্তরণের চিন্তা ছাড়াই এতদিন ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, যাকে ভুল চিন্তা বলেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা আপাতত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভাতেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছরও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকছে। মন্ত্রিপরিষদে নতুন কোন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা ও অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা চলবে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করতে এখনো যেসব বাধা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও কাজ করছে। কিন্তু কী কী সমস্যা আসলে সামনে চলে এসেছে? কেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে? জানা গেছে, নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে সারাদেশের হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভয়াবহ অবকাঠামো সঙ্কট। সঙ্গে আছে শিক্ষক সঙ্কট ও শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা চ্যালেঞ্জ। তবে এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করার কাজ শুরু করেছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৫০০ শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করানো হচ্ছে। কিন্তু এসব বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। কোন কোন বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষকও দেয়া হয়নি। ফলে অনেক বিদ্যালয়ে এসব শ্রেণী চালু রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। সাত বছর আগে শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। শিক্ষানীতির বিভিন্ন অংশ বাস্তবায়ন শুরু হলেও এর উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নির্ধারণ নিয়েই বেঁধেছে জটিলতা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব মোঃ নেসার আহমেদ সামনে চলে আসা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলছিলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে আগামী বছরের মধ্যেই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে কাজ করছে সরকার। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা, শিক্ষক সঙ্কটসহ নানা বিষয় আছে। যেগুলোর আগে সমাধান করতে হবে। নানা সমস্যা চিন্তিত করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের নানা সঙ্কটের চিত্র। এসব সঙ্কটই ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই অনেকে বলছেন, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে অবকাঠামো আছে তা দিয়ে কোনভাবেই প্রাথমিকে অষ্টম শ্রেণী বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আগে অবকাঠামোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যে শিক্ষক আছে তা দিয়েও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৩ হাজারের ওপর শিক্ষকের পদ শূন্য। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক পদ ২১ হাজার এবং সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৩২ হাজার। এছাড়া শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বর্তমানের পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আগামী কিছুৃ দিনের মধ্যেই আরও ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে বলছেন কর্মকর্তারা। শিক্ষকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষককে মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাফতরিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় অনেক স্কুলে সহকারী শিক্ষকেরা এই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে তাদের পাঠদান ও দাফতরিক কাজ দুটোই একসঙ্গে চালাতে গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় প্রায়ই। মাঝে মাঝেই দেখা যায় ভবন নেই, ‘শিশুরা ক্লাস করছে খোলা আকাশের নিচে’। আবার দেখা যায় ‘একজন শিক্ষক শিক্ষার্থী কয়েক শ’। কয়েক কিলোমিটার নৌকায় পাড়ি দিয়েও স্কুলে শিশুদের যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়। এই মুহূর্তেও দেশের দুই হাজার গ্রামে নেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়বিহীন দেড় হাজার গ্রামের জন্য দুই হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এসব এলাকায় ইতোমধ্যেই বিকল্প হিসাবে বাড়ছে কেজি স্কুলসহ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তবে প্রাথমিক শিক্ষার এ সঙ্কটের চিত্র দেখাতে গ্রামে যাওয়ার প্রয়োজন নেই কারও। খোদ রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থাই করুণ। সরকারী পর্যায়ে বহু অনুদান ও প্রণোদনা দেয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়গুলোর অবস্থায় কোন পরিবর্তন নেই। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্য এমনকি রয়েছে পানি, বিদ্যুতসহ টয়লেট সমস্যা গত কয়েকদিন ঢাকার অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে জানা গেছে, গত এক দশকেও এ বিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব, কোন বিদ্যালয়ের পাশে বিক্রি হয় মাদক দ্রব্য, অধিকাংশতেই নেই ঝাড়ুদার ও পিয়ন, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ঝাড়ু দেয় ক্লাসরুম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোদ ঢাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতিই নিম্নমানের, রয়েছে চরম শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষকদের মান নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। তার ওপর সারাদেশের মতো এখানকার শিক্ষকদেরও শিক্ষার বাইরে বিভিন্ন সরকারী কর্মসূচীতে নিযুক্ত করা হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী, শিশু জরিপ কর্মসূচী এবং নির্বাচনী ভোটার তালিকা তৈরিসহ নানা সরকারী কাজে ব্যস্ত রাখা হয় শিক্ষকদের। শিক্ষা বহির্ভূত অন্তত ২১ ধরনের কাজ করতে হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের। রয়েছে ভবন সঙ্কট ও শিক্ষা উপকরণ স্বল্পতা। ঢাকা মহানগরীতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৯৮টি। মোট শিক্ষার্থী সাত লাখ। যার মধ্যে বালক সাড়ে তিন লাখ, বালিকা সাড়ে তিন লাখ। শিক্ষক আছেন দুই হাজার ৪০০ জনের মতো। তবে ভূমিদস্যুরা কেবল বসতবাটি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমিই দখল করে না। স্কুলের জমিও দখলে নেয়। ঢাকার অন্তত ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা চলছে মামলা, দেন দরবার কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গত এক দশকে বেইলী রোডের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আদালতের রায়ের কারণে দখলমুক্ত করা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান রক্ষার নজির নেই। মামলা, দখলের সমস্যা আছে কাপ্তানবাজারে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহম্মদপুর টাউন হল সংলগ্ন শাহীন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিরাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরে বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামরাঙ্গীরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়ারীর এম এ আলীম প্রাথমিক বিদ্যালয়, গে-ারিয়া মহিলা সমিতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এফ কে এম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচকুঢ়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজী ইউসুফ আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা নিয়ে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্যে বাধ্যতামূলক করা হলেও নানান সমস্যায় ধুঁকছে এই স্তরের শিক্ষা। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শিশুদের উপযোগী শ্রেণীকক্ষ। যাও আছে তাও আকারে ছোট। সরকারী বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শ্রেণীকক্ষ ধুলাবালি ও ময়লা কাগজপত্রে অপরিচ্ছন্ন। বেসরকারী বিদ্যালয়ের ৮৪ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন। অনেক স্থানে পৌঁছে না শিশুদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ। সামঞ্জস্য নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যবই, শিক্ষণ-শিখন উপকরণ এবং শিক্ষাক্রমেও। অন্যদিকে প্রাক-প্রাথমিকেও অব্যাহতভাবে বাড়ছে শিক্ষা ব্যয়। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অনুপযোগী। প্রতিবেদনে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষা চার্ট, খেলনা, শারীরিক কসরতের উপকরণ, চিত্রাঙ্কনের উপকরণ এবং নাচ, গান ও নাটকের সরঞ্জামাদি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ৩৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব উপকরণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবই এবং শিক্ষণ-শিখন উপকরণের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্ডারগার্টেনগুলোতে নানা ধরনের বই পড়ানো হলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে শিশুদের শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষণের অংশ হিসেবে খেলাধুলা এবং আনন্দদায়ক কর্মকা- একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে প্রাথমিক শ্রেণীতে পড়ানোর পদ্ধতির সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে পড়ানোর পদ্ধতিতে কোন তফাৎ পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি প্রতিবছরই শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ কমানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্যে অর্থ যোগান দিতে পারলে মানবসম্পদ বিনির্মাণের অন্যতম সাঁকো শিক্ষা খাতে কেন বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না? তিনি আরও বলেন, শিক্ষা একমাত্র হাতিয়ার যার ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যত। সেই শিক্ষা খাতের বিনিয়োগের সঙ্গে অন্য খাতের বিনিয়োগ তুলনা করলে চলবে না। তারপরও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগে কার্পণ্য হচ্ছে। তবে এ খাতে যতটুকু বিনিয়োগ হচ্ছে তার থেকে প্রাপ্তি প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না।
×