ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নানা আয়োজনে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সম্মিলন

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নানা আয়োজনে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সম্মিলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের আগমনে দুপুর থেকেই মুখর হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির আঙিনা। সমাগম ঘটে সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের। পারস্পরিক ভাব-বিনিময় ও আলাপচারিতায় জমে ওঠে সঙ্গীতের নেপথ্য শিল্পীদের নির্মল আড্ডা। সেই সঙ্গে ছিল শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান ও মনোমুগ্ধকর মিউজিং জ্যামিং। শ্রোতাদের সুরের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে গান শুনিয়েছেন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পীরা। এভাবেই নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সম্মিলন। বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের (বিএমএফ) আয়োজনে এটি ছিল সংগঠনের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন। সোমবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত দুই যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীকে জানানো হয় সম্মাননা। বাঁশরিয়া ওস্তাদ বাসুদেব দাস এবং বেহালাবাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন মিয়াকে পেয়েছেন এ সম্মাননা। সম্মেলনের সূচনা হয় দুপুরে। শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের করা হয় শোভাযাত্রা। সারাদেশের বর্নাত্যদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বের করা হয় এ শোভাযাত্রা। তাই শোভাযাত্রায় ছিল না রং ছড়ানো আনন্দের প্রকাশ। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তন থেকে বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে আবারও শিল্পকলায় এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা। সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আলোচনাসভার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বের উদ্বোধক ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিএমএফের সভাপতি বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অসুস্থ তবলাশিল্পী প-িত মদনগোপাল দাসের চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা। আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আয়োজনের শুরুতেই চমৎকার একটি মিউজিক জ্যামিং উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন মানাম আহমেদ, লাবু রহমান, ফুয়াদ নাসের বাবু, গাজী আবদুল হাকিম, জালাল, মিলন ভট্টাচার্য, পল্লব সান্যাল প্রমুখ। বাদ্যযন্ত্র ড্রাম, গিটার, পিয়ানো, তবলা, কি-বোর্ড ও বাঁশির সুরেলা ধ্বনির সম্মিলনে উপস্থাপিত হয় পরিবেশনাটি। সুরের মূর্ছনা শেষে ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা। একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন শ্রোতানন্দিত কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, ফরিদা পারভীন, ফেরদৌস আরা, তপন চৌধুরী ফকির শাহাবুদ্দীন, দিনাত জাহান মুন্নী, মৌটুসী ইসলামসহ অনেকে। কালিকাপ্রসাদের জন্মদিনে ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের বাড়ি আসামের শিলচর হলেও বাংলাদেশের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা। তাই এদেশের যেকোনো অনুষ্ঠানে ডাক পেলেই ছুটে আসতেন। কেবল দুই বাংলারই নন, গোটা উপমহাদেশের লোকগানের শক্তিমান গবেষক ছিলেন তিনি। রাধারমণ দত্ত, শাহ আবদুল করিমের গানসহ বাংলাদেশের অসংখ্য লোকগানকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’ সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন। সোমবার ছিল এ শিল্পীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে শিল্পীকে স্মরণ করা হয়। পাশাপাশি তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রদর্শিত হয় ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রটি। চলতি বছরের মার্চে মুক্তি পেয়েছিল ‘ভুবন মাঝি’। সরকারি অনুদানে তৈরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিটি বিনা দর্শনীতে দেখার সুযোগ করে দেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক-প্রযোজক ফাখরুল আরেফিন খান। প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রটির পরিচালক-প্রযোজক ফাখরুল আরেফিন খান। আয়োজনের শুরুতেই কালিকাপ্রসাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন অতিথি ও দর্শকরা। মিলনায়তনে এ সময় আবহে বাজছিল কালিকাপ্রসাদের গান। এরপর প্রদীপ প্রজ্বলন করেন অতিথিরা। রামেন্দু মজুমদার বলেন, কালিকাপ্রসাদ সুরের বাঁধনে বেঁধেছিলেন দুই বাংলার মানুষকে। কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে বাঙালী জাতিকে এক করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি লাকসঙ্গীতের সুরের আশ্রয়ে আলিঙ্গন করেছিলেন এই বাংলার লোক ঐতিহ্যকে। ফাখরুল আরেফিন খান বলেন, ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসাহের অন্ত ছিল না কালিকাপ্রসাদের আসলে তিনি নিজেই যেন ছিলেন সেই ভুবন মাঝি, যিনি নাও ভাসিয়েছিলেন দেশ-কালের সীমান্তহীন সুরের দরিয়ায় যে মাঝির গানে এক হয়ে যায় গঙ্গা আর পদ্মার চর। প্রসঙ্গত, ১ মার্চ কালিকাপ্রসাদ ঢাকা এসেছিলেন ভুবন মাঝির প্রিমিয়ারে। এর কিছুদিন পর ৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের শিউড়িতে একটি লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে হুগলিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লোকগানের দল ‘দোহার’-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বরিশালে বাউল সঙ্গীতসন্ধ্যা স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাউল ও ধর্মীয় সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ত্রিকালদর্শী শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ২৮৭তম আবির্ভাব উৎসব উপলক্ষে জেলার গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর হরগবিন্দ সাধুর আশ্রম কমিটির উদ্যোগে এ সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার মহোৎসব ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গীতা ও বাজনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকালে আলোচনা সভায় আশ্রম কমিটির সভাপতি ননী রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা পরিষের সদস্য রাজু আহম্মেদ হারুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদীন, ইটালী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম দিলীপ, ব্যবসায়ী শেখর বণিক প্রমুখ।
×