ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতিত গৃহবধূ সেই তাসলিমা দেড় মাসেও সুস্থ হননি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নির্যাতিত গৃহবধূ সেই তাসলিমা দেড় মাসেও সুস্থ হননি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ টানা দেড় মাসের চিকিৎসার পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি রাজধানীর পল্লবীতে ধর্ষণ চেষ্টার পর সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ তাসলিমা। এখনও তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। মাঝে মধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া ও বমির ভাব হয়। মাথায় প্রচ- আঘাতের কারণে প্রায়ই আবোল-তাবোল বকেন। মামলার বাদী গৃহবধূর স্বামী সোহেলের দাবি, সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার কথা থাকলেও তা হয়নি। উপরন্তু মামলা তুলে নিতে আসামি জলিল তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হুমকির কারণে তারা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। তার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক, স্ত্রীকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক রাখতে তাকে ময়মনসিংহে পরিবারের কাছে রাখা হয়েছে। অবশ্য হুমকি দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আসামি জলিল। গত ২০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে পল্লবী থানাধীন বাউনিয়াবাদের ই ব্লকের ১৮ নম্বর লাইনের ৭ নম্বর বাড়িতে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীরা জোটবদ্ধ হয়ে তাসলিমা নামে এক গৃহবধূকে বেধড়ক মারধর করে। মামলার বাদী তাসলিমার স্বামী সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, তারা ও আসামিদের পরিবার সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। আসামি জলিল স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চোরাই রিক্সা, বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ দেয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। জলিল দীর্ঘদিন ধরেই তার স্ত্রীসহ অনেক নারীকেই বিরক্ত করতে আসছিল। নয় বছর আগে তাসলিমার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে সাব্বির নামে সাত বছরের ছেলেও আছে। তারপরেও পিছু ছাড়েনি জলিল। ঘটনার দিন সে তার মুদি দোকানে ছিল। ছেলে পাশের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় জলিল মাতাল অবস্থায় তার বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে জাপটে ধরার চেষ্টা করে। তার স্ত্রী চিৎকার করলে জলিল তার স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে বেধড়ক মারধর করে। রক্ত বমি করতে করতে তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে মিরপুর আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত শেরেবাংলা নগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিন দিন পর তার রক্ত বমি থামে। এ ব্যাপারে গত ২৩ জুলাই পল্লবী থানায় একটি শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে জলিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সোহেল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাওসার সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, আসামি জলিল ওই মামলায় জামিনে রয়েছে। সোহেল জানান, দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে খানিকটা স্বাভাবিক হয় তার স্ত্রী। তবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মাঝে মধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। বমি বমি ভাব থাকে সারাক্ষণ। আর মাথায় প্রচ- আঘাতের কারণে মাঝে মধ্যেই মাথা বিগড়ে যায়। আবোল-তাবোল বকতে থাকে। এরই মধ্যে আসামির অব্যাহত হুমকির মুখে তার স্ত্রী মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক, স্ত্রীকে ময়মনসিংহে তার পরিবারের কাছে রাখা হয়েছে। যাতে পরিবারের সঙ্গে থাকলে মানসিকভাবে কিছুটা স্বাভাবিক থাকে। সোহেল বলছিলেন, স্ত্রীর মৃত্যু হলে তার ছেলেকে দেখার মতো কেউ নেই। জলিলের অত্যাচারে আশপাশের অভিভাবকরা তাড়াতাড়ি তাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মারধর করার পর জলিল উল্টো তাদের নামেই মামলা করতে পল্লবী থানায় গিয়েছিল। বিষয়টি জানার পর পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির জলিলকে ধরার চেষ্টা করলে সে থানা থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। জলিলের অব্যাহত হুমকির মুখে পল্লবী থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানান সোহেল। পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির জনকণ্ঠকে বলেন, আসামি জলিল পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী। বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত আসামি জলিল। আসামি জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ওই মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। তিনি মামলা তুলে নিতে কাউকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন না। চোরাই বিদ্যুত সংযোগ দেয়া, মাদক ব্যবসা ও চোরাই রিক্সার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
×