ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশুর বর্জ্য যায় থাইল্যান্ড মিয়ানমার চীন ও জাপানে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কোরবানির পশুর বর্জ্য যায় থাইল্যান্ড মিয়ানমার চীন ও জাপানে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশুর কোন কিছুই এখন ফেলনা নয়। গরুর হাড়, শিং, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রনালি, চর্বি, রক্তের মতো বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করা গেলে এগুলো যেমন লাগতে পারে জীবন সাজানোর কাজে তেমনি জীবন বাঁচানোর কাজেও রয়েছে এগুলোর ব্যবহার। শুধু তাই নয়, এসব বর্জ্যের অধিকাংশই রফতানিযোগ্য, যা থেকে উপার্জিত হতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও। এসব বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার নিশ্চিত করা গেলেই কোরবানির পশুর বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি খাত। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পশুর বর্জ্য রফতানি করে আয় হয়েছে এক শ’ ৭০ কোটি টাকারও বেশি। আশা করা হচ্ছে, এ বছর এর পরিমাণ দু’ শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সমিতি বলছে, এ বছর কোরবানি হওয়া গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ও দুম্বা থেকে গত বছরের মতোই দেড় থেকে দুই হাজার মণ হাড়সহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। খাওয়ার পর ফেলে দেয়া হাড় ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহের জন্য কোরবানির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক নেয়া হচ্ছে গত বছর থেকে। এছাড়া, চামড়া থেকে আসা বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে বিভিন্ন ট্যানারি থেকে। জানা গেছে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, জাপান ও চীনে গরু-মহিষের যৌনাঙ্গ, পেনিস বা লিঙ্গ অত্যন্ত দামী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে পশুর একেকটি যৌনাঙ্গ ৬ থেকে ৭ ডলারেও বিক্রি হয়। এর বাইরে গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কভার। এদিকে, ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া দিয়ে তৈরি জুতার সোল ও প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। পশুর রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও যব মিলিয়ে তৈরি দানাদার মিশ্রণ ব্যহার করা হয় মুরগি ও পাখির খাবারের জন্য। পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় সাবান। আর শিং থেকে আগে অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরি হতো, ডিজিটাল ডিভাইসের বহুল ব্যবহারের কারণে যার চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এখন শিংয়ের মূল ব্যবহার বোতাম ও চিরুনি তৈরিতে। আবার মহিষের শিংয়ের ডগা ব্যবহার করে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানের জনপ্রিয় ও দামী ‘শোস্যাট রোল’ নামের খাবারটিও গরু ও মহিষের নাড়িভুঁড়ি দিয়েই তৈরি। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু কোরবানির পশু থেকে এক হাজার মণ হাড়, ছয় হাজার কেজি যৌনাঙ্গ ও পাঁচ শ’ মণ গোল্লা (নাড়িভুঁড়ি) সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাধারণভাবে সমিতি সারাদেশ থেকে মাসে আড়াই শ’ মণ হাড় সংগ্রহ করতে পারে। সেই হিসেবে বছরজুড়ে সংগ্রহ করা হাড়ের এক-তৃতীয়াংশই আসে কোরবানির সময়। এ কারণে এসময় বর্জ্য সংগ্রহে লোকবল বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এক শ’ ৭০ কোটি টাকার পশুর হাড়, যৌনাঙ্গ ও গোল্লা বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পশুর বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। জানা গেছে, রাজধানীতে রয়েছে পশুর বর্জ্যের বিশাল বাজার। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে রয়েছে এর দুটি বাজার: একটি জিঞ্জিরায়, অন্যটি হাসনাবাদ এলাকায়। আগে কেবল ঢাকার আশপাশ থেকে এই বাজারে শিং ও হাড় এলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই বাজারে আসছে গরু-মহিষের শিং ও হাড়। এখানে প্রতিমণ শিং ৬শ’ টাকা ও প্রতিমণ হাড় বিক্রি হয় ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা দরে। প্রথমদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডাস্টবিন ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা গরু-মহিষের হাড় ও শিং সংগ্রহ করে এ বাজারে বিক্রির জন্য আনত টোকাইরা। কেউ কেউ হাজারীবাগ ও পোস্তা এলাকা থেকেও এগুলো সংগ্রহ করত। তবে এখন টোকাইদের কাছ থেকে এসব হাড় ও শিং কিনে নেন মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
×