ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফসল উৎপাদনে আসছে সৌরশক্তি ও পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ফসল উৎপাদনে আসছে সৌরশক্তি ও পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধে সেচ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে ‘সৌর শক্তি ও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০০ উপজেলায় ১০০টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা হবে। এতে বিদ্যুত ও ডিজেলের খরচ বেচে যাওয়ায় কমবে কৃষি উৎপাদন ব্যয়। আর দেশে প্রথমবারের মতো মাটির নিচ দিয়ে পাইপ বসিয়ে ৫০০টি বারিড পাইপ সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ফলে পানির বিন্দুমাত্র অপচয় না হয়ে তা চলে যাবে নির্দিষ্ট ফসলি জমিতে। শুধু তাই নয়, পানির অপচয় আরও কমাতে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের ১২ সপ্তাহ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ফলে কৃষক বীজ বপন থেকে শুরু করে ধান কাটাসহ কোন সময় জমিতে কতটুকু পানি দিতে হবে- তা জানবে সর্বশেষ প্রযুক্তির সমন্বয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে কৃষি উৎপাদন ব্যয় কমার সঙ্গে সঙ্গে ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহারের ফলে রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়িত পাইলট এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ৭ বিভাগের ৪১ জেলার ১০০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে। সম্প্রতি একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক আদেশ পাওয়া যায়নি। তবে আগামী বোরো মৌসুমের শুরুতে মাঠ পর্যায়ে পাইলট এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওয়াতায় ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধে ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহার করা হবে। যেখানে নদ-নদী রয়েছে এমন এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। সেচ ব্যবস্থায় সৌর শক্তি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুত ও ডিজেল লাগবে না। ফলে সেচ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। কৃষকের খরচ কমায় কমবে কৃষি উৎপাদন ব্যয়। এছাড়া অল্প সেচে অধিক জমিতে পানি দেয়া সম্ভব হবে। কারণ প্রকল্পের আওতায় ড্রিপ বা বারিড পদ্ধতি মাটির নিচ দিয়ে পাইপ বসিয়ে পানি পরিবহন করা হবে। এতে পানির বিন্দুমাত্র অপচয় হবে না। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় সেচের ওপরে কৃষকদের ১২ সপ্তাহ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বীজ বপন থেকে ধান কাটাসহ কোন সময় ফসলি জমিতে কতটুকু পানি দিতে হবে- তার ওপরও বিস্তর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে; যা দেশে এবারই প্রথম। প্রকল্পের পটভূমি হিসেবে বলা হয়েছে, কৃষি কাজে এখনও প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার হওয়ায় একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে অন্যদিকে দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় হচ্ছে। সেচের পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এখন সময়ের দাবি। সেচ কাজে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত এবং ব্যবহারে উৎসাহিত করা আবশ্যক। প্রকল্পের উদ্দেশে বলা হয়েছে, কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার উৎসাহিত করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সেচ খরচ কমানোই এর মূল লক্ষ্য। আর সেচ কাজে সৌরশক্তি ব্যবহারের ফলে জ্বালানি তেল বা বিদ্যুত সাশ্রয় হবে। এছাড়া আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির (ড্রিপ, বারিড পাইপ ইত্যাদি) মাধ্যমে সেচ দক্ষতা উন্নয়ন করে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১০০টি সোলার সেচ স্থাপন করা হবে। এছাড়া ৫০০টি বারিড পাইপ সেচ, ৪০০টি ড্রিপ সেচ প্রদর্শনী স্থাপন ও সোলার সেচসহ ১০০টি পাতুয়া খনন করা হবে। কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে ৪০০টি কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করা হবে। মোট ৪০০ ব্যাচ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। একই সঙ্গে ২০ ব্যাচ মেকানিক, ১০ ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, সেচ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ৫০ ব্যাচ কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ ও ৮০০ মাঠ দিবস আয়োজন করা হবে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বোরো মৌসুমের আবাদ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোন কোন অঞ্চলে অতিরিক্ত ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের ফলে সেচ ব্যবস্থায়ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও। এমন পরিস্থিতে সৌর শক্তি ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থার আধুনিক এই প্রযুক্তি দেশের কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন আনবে।
×