ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপে কার্গো রফতানি

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ইউরোপে কার্গো রফতানি

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম বা ইডিএস মেশিন। উল্লেখ্য, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই বোমা, বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র শনাক্ত করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য মেশিন বসানো হয়েছে শাহজালালে। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে। তদুপরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই দরজা খুলবে শাহজালাল থেকে যুক্তরাজ্য ও ইইউতে সরাসরি কার্গো রফতানির। উল্লেখ্য, এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয় বিধায় যুক্তরাজ্য হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল কার্গো রফতানিতে। ব্রিটিশ সরকার গত বছরের মার্চে ঢাকা হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঘাটতির অজুহাত দেখিয়ে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল কার্গো ফ্লাইটের চলাচল। তখন এমনকি ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচলেও আরোপিত হয়েছিল সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। সে সময় যুক্তরাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়। ফলে তখন সমূহ বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে, যাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন। পরে ঢাকার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে তদন্ত দল প্রেরণ করে। এ নিয়ে দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনাও হয়। পরে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুটো ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় শাহজালালে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষা, তল্লাশি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রায় শত কোটি টাকার বিনিময়ে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে অজ্ঞাত কারণে ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল ও হৃদ্যপূর্ণ, ঐতিহাসিকও বটে। সেক্ষেত্রে নিছক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় হতে পারে না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি বরং বিশ্বব্যাপী একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সম্প্রতি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সারাবিশ্বের জন্যই একটি অব্যাহত হুমকি। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে আইএস এই হুমকি ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ সরকার বরং বরাবরই দেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে এবং স্থানীয় যেসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গীগোষ্ঠী জেএমবি, নব্য জেএমবি নামে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, সেসব মোকাবেলা ও নির্মূল করেছে দক্ষতার সঙ্গে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের এহেন তৎপরতা হয়েছে প্রশংসিত। তদুপরি বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে সাম্প্রতিককালে কোন জঙ্গী হামলার উদাহরণ নেই। সে অবস্থায় নিছক নিরাপত্তার অজুহাতে কার্গো ফ্লাইট চলাচলের সাময়িক নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করাই হবে যুক্তিসঙ্গত ও সময়োচিত পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে যে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তৃতীয় একটি দেশের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ও রফতানি সর্বদাই ঝামেলার এবং ব্যয়সাপেক্ষ। ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে হলে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হবে এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অবশ্যই পছন্দনীয় হতে পারে। সে দেশে বাংলাদেশীরা দীর্ঘদিন থেকে সততা ও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। সে অবস্থায় ইডিএস মেশিন স্থাপনের পর যত তাড়াতাড়ি কার্গো ফ্লাইট চলাচল করতে পারে ততই মঙ্গল।
×