ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুতেই অগ্নিপরীক্ষা কৃষ্ণা-সানজিদাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শুরুতেই অগ্নিপরীক্ষা কৃষ্ণা-সানজিদাদের

জাহিদুল আলম জয় ॥ সাফল্যের সোনারোদে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল। গত বছর দেশে শেষ হওয়া এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্তপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশের কিশোরীরা। কৃষ্ণা, সানজিদা, মৌসুমী, তহুরারা দেখিয়ে দিয়েছে চেষ্টা আর পরিশ্রম করলে অসাধ্য সাধন করা যায়। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এশিয়ার সেরা আটটি দেশের একটি। তাক লাগানো সাফল্যের পর সবাই বলছেন, এই দলটিকে ঘষেমেজে ঠিক রাখতে পারলে মহিলাদের বিশ্বকাপ ফুটবলেও খেলা সম্ভব। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণের ময়দানী যুদ্ধে নামছে বাংলার কিশোরীরা। ২০১৮ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফিফা অনুর্ধ-১৭ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার লক্ষ্যে বাছাইপর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে লাল-সবুজের দেশ। রবিবার থেকে এশিয়ার সেরা আট দলের অংশগ্রহণে ‘এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে’র মূলপর্বের খেলা শুরু হয়েছে থাইল্যান্ডের চনবুুরিতে। এই আসরে প্রথমবারের মতো খেলছে বাংলাদেশ দল। আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে শুরুতেই অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে কৃষ্ণা-সানজিদা, তহুরাদের। কেননা বাংলাদেশের আজকের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া। ম্যাচটি হবে থাইল্যান্ডের চনবুরি স্টেডিয়ামে। আজ গ্রুপের আরেক ম্যাচে মুখোমুখি হবে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশের সোনালী প্রজন্মের মেয়েরা বাছাইপর্বে ইতিহাস রচনা করেছিল চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে। ওই ম্যাচ ৪-২ গোলে জিতে এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দেশ। বাছাইপর্বে পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই জয় পায় ছোটনের দল। কৃঞ্চা, মগিনি, সানজিদা, মৌসুমীরা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ায় ২৬ বার। এবার মূল লড়াইয়ে মাঠে নামছে বাংলার বাঘিনীরা। বাংলাদেশের গ্রুপে উত্তর কোরিয়া ছাড়াও আছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। উত্তর কোরিয়া বর্তমান চাম্পিয়ন। বাকি দুই দলও হট ফেবারিট। জাপান তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান রানার্সআপ। অস্ট্রেলিয়া বাছাইপর্বে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। আর ২০০৯ সালে চূড়ান্তপর্বে চতুর্থ হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের পর বৃহস্পতিবার জাপান ও রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে বাংলার মেয়েরা। থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে সিঙ্গাপুর, চীন ও জাপানে গিয়ে অনেকগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে কৃষ্ণবাহিনী। এই আসরে শীর্ষ তিন দলের মধ্যে থাকতে পারলে অনুর্ধ-১৭ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা। এটা হলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে সেরা সাফল্য রচিত হবে। কেননা যে কোন পর্যায়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলা বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত স্বপ্নের। সেই স্বপ্ন যদি এবার ধরা দেয় সেটা হবে গৌরবময় অর্জন, ইতিহাস। স্বপ্নের মিশনে যাওয়ার আগে দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, গত এক বছর আমরা অনেক হার্ডওয়ার্ক করেছি। অনেকগুলো প্রীতি ম্যাচ খেলেছি। টুকটাক যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠতে কাজ করেছি। এই আসরে যেন দল ভাল খেলে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ঠিকই। তাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে একটু ভয় করবে। কিন্তু ভয়কে অবশ্যই জয় করতে হবে। তারকা এই ফরোয়ার্ড বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে নিজেদের প্রস্তুত করেছি। এখানে (থাইল্যান্ড) এসে ভাল খেলার জেদটা আরও বেড়েছে। ভাল লাগছে যে প্রতিপক্ষরাও আমাদের সমীহ করছে। সবমিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের আগে ভাল করার সংকল্পের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কান্ডারি। দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, গত বছর ঘরের মাঠে কোয়ালিফাই করেই আমরা কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিলাম। তার ওপর ডেথ গ্রুপ। গত এক বছরে আমাদের দলের উন্নতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ফিটনেসের ক্ষেত্রে। মূলপর্বে খেলতে যাওয়ার কারণে অন্য দেশগুলো আমাদের সম্পর্কে জেনেছে। খেলায় হারজিত থাকবেই। তবে আমরা কম্পিটিটিভ ফুটবলই খেলব। চেষ্টা করব সমানতালে খেলার। সর্বস্ব উজাড় করেই খেলব। ম্যাচ বাই ম্যাচ প্রতিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা বুঝেই ফর্মেশন সাজাব। বাংলাদেশের জাতীয় দলের চেয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে বয়সভিত্তিক দলগুলো। ‘এফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়নশিপে’র শিরোপা জিতেছে দু’বার। ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ কোয়ালিফায়ার্সে’ ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে উন্নীত হয়েছে। এবার শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ নিশ্চিতের মিশন।
×