ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আড়তদারদের কাছ থেকে ট্যানারিগুলোর চামড়া কেনা শুরু

৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ আড়তদারদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু করেছে ট্যানারিগুলো। এবার ৮০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হবে। নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে অতিরিক্ত ৫-১০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনছেন ট্যানারি মালিকরা। শনিবার থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম আগামী দেড় মাস চলবে। ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। দেশব্যাপী বন্যা ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যার কারণে এবার আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ পশু কম কোরবানি হয়েছে। এ বছর এক কোটি পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষমাত্রা থাকলেও ৮০ লাখ সংগ্রহ হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ৫০ লাখ গরুর, মহিষ সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ এবং ২৫ লাখের মতো ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রয়েছে। এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, শনিবার থেকে আমরা লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছি। নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি দেয়া হচ্ছে। যেসব কাঁচা চামড়ায় লবণ ভালভাবে লাগানো হয়েছে এবং মান ভাল সেগুলোতে বেশি দাম দেয়া হবে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ত পোস্তাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চামড়া সংগ্রহ করা হবে। তবে নিয়ম অনুসারে প্রতি বছর কোরবানির চামড়া ১০ শতাংশ বাড়ে কিন্তু এবার কোরবানি কম হওয়ায় তা বাড়েনি। এবার ৮০ লাখ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার লক্ষমাত্রা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সব সময় আমরা কোরবানি ঈদের পর ১৫ থেকে এক মাসের মধ্যে কাঁচা লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করি। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে এবার এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করব। কাঁচা আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিনস মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক হাজি টিপু সুলতান বলেন, এবার কোরবানি ২০ শতাংশ কম হয়েছে, তাই ব্যবসা কম। এছাড়া এবার অর্থ সঙ্কটের কারণে কাঁচা চামড়া কিনতে পারিনি। অনেক বেপারি ও মহাজন নিজেরাই চামড়া সংরক্ষণ করেছেন। গত বছর যেখানে ১০ লাখ কাঁচা চামড়া পোস্তায় লবণ দেয়া হয়েছিল, এবার তা নেমে এসেছে সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখে। তিনি বলেন, শনিবার থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করেছেন। নির্ধারিত দামের চেয়ে একটু বেশি দিচ্ছেন। তবে গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দাম কম বলে জানান তিনি। জানা গেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে এবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে চামড়া বেঁচাকেনা হয়েছে। কোরবানি পশুর চামড়ার প্রকৃত হকদার এতিম, মিসকিন ও গরিবদের ঠকিয়ে মুনাফা নিচ্ছে ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা। এবার সরকারীভাবে কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৫০-৫৫ এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০-২২ এবং বকরির ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত দামের চেয়ে অর্ধেক দামে কাঁচা চামড়া কিনেছেন বেপারি, ফড়িয়া, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। বিটিএর তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়। চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে সঙ্কট নেই ॥ চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে বড় কোন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন। তিনি বলেন, ছোট ছোট যে সমস্যা রয়েছে তা আমরা ম্যানেজ করে নিতে পারব। মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, এবার কোরবানির ঈদে সারা দেশ থেকে যে চামড়া সংগ্রহ করেছি তা সংরক্ষণে আমাদের তেমন কোন সমস্যা হবে না। কারণ সব চামড়া লবণ দেয়া। আর এ অবস্থায় চামড়াগুলো আমরা তিন মাসের ওপর রাখতে পারি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করে চামড়া প্রায় আট মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তিনি বলেন, আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা, সংকট মোকাবেলা করেই সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর ব্যবসা করতে গেলে সংকট মোকাবেলা করতেই হবে। তা মেনেই আমরা ব্যবসা করছি। তবে আমরা বর্তমানে যে সঙ্কটে ভুগছি তা হচ্ছে আর্থিক। কারণ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পরে সাভারে আমাদের যে জায়গা দেয়া হয়েছে সেখানকার জমিগুলো এখনও মালিকদের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়নি। যার ফলে কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না এবং বেশিরভাগ ট্যানারি কারখানা ঠিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। তাই আমরা সরকারের কাছে আবারও আবেদন জানাচ্ছি, যাতে দ্রুত আমাদের জমিগুলো রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়। যশোরে ৪ কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা ॥ যশোর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে গত শনিবার হাটে প্রায় ৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। তবে ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এদিন গরুর চামড়া ৬৫-৭০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৩০-৩৫ টাকা বর্গফুট হারে বিক্রি হয়েছে। এখানে আরও অন্তত দুই হাট কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। মাগুরার শালিখার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চাঁন বিশ্বাস বলেন, গত হাটের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। হাটে চামড়াও বেশি উঠেছে। দাম আরও বাড়ার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো দাম পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, আড়তদার ও হাট মালিকরা বাইরের ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে দিচ্ছেন না। তারা নিজেরাই চামড়া কিনে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে চান। ঝিনাইদহের শৈলকুপার পাইকার ব্যবসায়ী কাজী ইকবাল বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনও গত বছরের দুই লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। বেশি দামে চামড়া কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজকের হাটে ৬৫-৭০ টাকা বর্গফুট দরে চামড়া কিনেছি। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল মজিদ পলাশ বলেন, বেশি দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। গত হাটের তুলনায় বেশি চামড়া এসেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে সীমিত সংখ্যক চামড়া বেচাকেনা হলেও আজকের হাটে প্রায় ৪ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে।
×