ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্জিন ঋণধারীদের মূলধন লোকসান ৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মার্জিন ঋণধারীদের মূলধন লোকসান ৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১০ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো মার্জিন ঋণের লোকসান নিয়ে সঙ্কটে রয়েছে। ২০১৭ সালের জুন শেষে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মার্জিন ঋণ হিসাবে মূলধনী লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুইটি) দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল ঋণ (প্রিন্সিপাল) ছয় হাজার ৯৪০ কোটি টাকা আর এক হাজার ৭৬০ কোটি টাকা সুদ। অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে মার্জিন ঋণ নেয়া বিনিয়োগকারীরাও লোকসানে রয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছেন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্জিন ঋণ নেয়া এবং মার্জিন ঋণ না নেয়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকরীদের লোকসান ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি হবে। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ১১৫ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের দেয়া মার্জিন ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ প্রদানকারী ৫৯ ব্রোকারেজ হাউসের মার্জিন ঋণ প্রায় নয় হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ৩০ মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে ছয় হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূলধনী লোকসানে থাকা মার্জিন ঋণ হিসাব নিয়ে গভীর সঙ্কটে আছে অন্তত ৪০ মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউস। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্সের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস পিএফআই সিকিউরিটিজ। তাদের দেয়া মার্জিন ঋণ হিসাবে মূলধনী লোকসান প্রায় ৮৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কাছে বকেয়া সুদসহ মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূলধনী লোকসান ৭৫০ কোটি টাকা। জানা গেছে, সুদের ৮০ শতাংশ মওকুফ করার প্রস্তাব দিয়েও তারা বিনিয়োগকারীদের সাড়া পাচ্ছে না। তাই কিছু হিসাবে ঋণ অবলোপন ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে সঙ্কট উত্তরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্জিন ঋণধারী বিও হিসাবে মূলধনী লোকসানের অর্থ- এ হিসাবগুলোতে থাকা সব শেয়ার এখন বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা এক টাকাও ফেরত পাবেন না। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর পুঁজির পুরোটাই লোকসান হবে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর হিসাবমতে, পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ নেয়া বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা হবে। অন্যদিকে জুন শেষে ঋণ প্রদানকারী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান হবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা, বকেয়া সুদ হিসাব করলে যা দাঁড়াবে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। এদিকে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মার্জিন ঋণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা স্থগিত করে মূলধনী লোকসানে থাকা বিও হিসাবগুলোতে শেয়ার লেনদেন করার সুযোগ দেয়া হয়। গত সাড়ে ছয় বছর এ সুবিধা প্রদান করে আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারও সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুব কম প্রতিষ্ঠানই শেয়ার কেনাবেচা করে এসব হিসাবে লোকসান কমাতে পেরেছে। অনেকে বলছেন, পুঁজিবাজার ধসের সাত বছর পরও যারা নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি, তারা আর এক বছরের মধ্যে পারবেন বলে মনে হয় না। এখন বিকল্প চিন্তা করতে হবে। ঋণ অবলোপন অথবা নতুন করে মূলধন যোগান দিয়ে সঙ্কট সমাধান করা যেতে পারে। আবার কেউ বলছেন, বর্তমানে বাজারে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। এ লেনদেন বৃদ্ধিতে মূলধনী লোকসানে থাকা হিসাবগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া এসব হিসাবে লেনদেনের সুযোগ প্রত্যাহার হলে বাজারে নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মার্জিন ঋণের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, মার্জিন ঋণে মূলধনী লোকসান সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করেছে। কমিশন বারবার সময় বৃদ্ধি করছে। এবারও সংশ্লিষ্ট সবার অনুরোধে সময় আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই সমাধান করতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে নতুন মূলধন যোগান বা ঋণ অবলোপন করেও তা করতে পারে। এরপর আইনী শর্ত মেনে আসতে পারলে বন্ড বিক্রি করেও মূলধন সংগ্রহের সুযোগ নিতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে পুঁজিবাজারে ধস নামার আগে যেসব বিও হিসাবে ঋণ দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই মূলধনী লোকসানে আছে। ধসের পরপর দেয়া মার্জিন ঋণের অবস্থাও একই। বাজার ধসে সর্বস্ব হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন এসব হিসাবের কোন খোঁজখবরই রাখেন না।
×