ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাতে অচল বিমানের এয়ারবাস

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বজ্রপাতে অচল বিমানের এয়ারবাস

আজাদ সুলায়মান ॥ হঠাৎ বজ্রপাতের আঘাতে অচল হয়ে পড়েছে বিমানের একটি এয়ারবাস। এতে বিমানের রিয়াদ ফ্লাইট ২০ ঘণ্টা বিলম্বের শিকার হয়। রবিবার সিলেট থেকে ঢাকায় আসার পথে এ ধরনের অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। অচল উড়োজাহাজটি বর্তমানে বিমানের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে। এটি স্পেন থেকে ৮ মাসের জন্য লিজে আনা এয়ারবাস ৩৩০। এয়ারবাসটিতে কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি বিমান। প্রাথমিকভাবে একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। এটি অচল হওয়ায় বিমানের সিডিউলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার সকালে ওই এয়ারবাসটি সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল পৌনে দশটায় অবতরণ করার আগ মুহূর্তেই প্রায় দশ হাজার ফুট ওপরে থাকাবস্থায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে। এক পর্যায়ে বজ্রপাত আঘাত করে এটিকে। এতে একটি ইঞ্জিন তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় অবতরণের পর ক্যাপ্টেন দেখতে পান ইঞ্জিনটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক এটাকে নেয়া হয় বিমানের হ্যাঙ্গারে। সেখানে পুরো উড়োজাহাজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা মেরামত করার চেষ্টা চলে। প্রকৌশলীদের ধারণা ছিল- ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মেরামত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তা সারাদিনেও সম্ভব হয়নি। বজ্রপাতে কোন উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বিমানে এই প্রথম বলে জানা যায়। এটি লিজের উড়োজাহাজ হওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ এককভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে আজকালের মধ্যে তা গঠন করা হবে বলে জানা যায়। উড়োজাহাজটিতে কি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে প্রকৌশল শাখার একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, উড়োজাহাজের একটা ইঞ্জিন স্টল হয়ে গেছে অর্থাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট থেকে আসার সময় ঢাকা থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরেই এটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে অপর ইঞ্জিন দিয়ে অবতরণ করে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এটা মুহূর্তেই মেরামত করা সম্ভব হবে। কিন্তু দিনভর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোন সিদ্বান্ত নিতে পারেনি প্রকৌশলীরা। বিমান জানিয়েছে, স্পেন থেকে এয়ারবাসটি লিজে আনার পর এর রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বও পায় লিজ কোম্পানি। বিমান চাইলেও একক সিদ্ধান্তে এটা মেরামত বা রক্ষণা-বেক্ষণ করার এখতিয়ার রাখে না। এ কারণে কবেনাগাদ এটাকে উড্ডয়নযোগ্য করা সম্ভব হবে সেটাও অনিশ্চিত। বজ্রপাতে এয়ারবাস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় বিস্ময় সৃষ্টি করেছে বিমানের পাইলটদের মাঝে। এ বিষয়ে রবিবার রাতে একজন পাইলট বলেন, সাধারণত বজ্রপাতে এ ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নজির খুব একটা নেই। কারণ প্রতিটি উড়োজাহাজেই বজ্রপাত নিরোধক স্ট্যাটিক ডিসচার্জ সিস্টেম থাকে। যার কাজই হচ্ছে আকাশে বড় ধরনের ঝড়, বজ্রপাত ও বিদ্যুত চমকানোর মতো বিপর্যয় নিরোধ করা। এই চার্জারই বজ্রপাতের বিদ্যুত নিস্ক্রিয় করে। এতে উড়োজাহাজটি বড় ধরনের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়। বিমানের এই এয়ারবাসটিতে এই সিস্টেম ছিল কিনা তা দেখতে হবে। এদিকে শনিবার রাতে অপর একটি বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা থেকে রিয়াদ ফ্লাইট অপারেট করার সিডিউল থাকলে তা বহরে না থাকায় সিলেট থেকে আসা এই এয়ারবাসটিকেই সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে বিমানবন্দরে আটকে পড়া রিয়াদগামী চারশতাধিক যাত্রীকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাদের বিমান থেকে বলা হয়, বেলা এগারোটায় রিয়াদ ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যাবে। কিন্তু এয়ারবাসটি তার আগে সকাল পৌনে দশটার দিকে বজ্রপাতের শিকার হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে যাত্রীদের দিনভর বিমানবন্দরেই অপেক্ষায় কাটাতে হয়। শেষ পর্যন্ত অপর একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে রিয়াদ ফ্লাইট অপারেট করা হয়। এভাবে ২০ ঘণ্টার বিলম্বের শিকার হয় রিয়াদের ফ্লাইট। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় বলেন, দুই যুগ ধরে এভিয়েশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কাজ করছি কোনদিন দেখিনি বজ্রপাতে এভাবে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন নষ্ট হয়। সব উড়োজাহাজেই তো বজ্রপাত নিরোধক থাকে। এই এয়ারবাসটিতে থাকলে তো এমন সমস্যা হতো না। এ ছাড়া পাইলট সিলেট থেকে মাত্র পঁচিশ মিনিটের পথ পাড়ি দেয়ার আগে আবহাওয়া রিপোর্ট না দেখেই ফ্লাই করেছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। বজ্রপাত এড়ানোর মতো দক্ষতা থাকলেও এভাবে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে বন্ধ হতো না। কারণ আকাশে বজ্রপাত হওয়াই স্বাভাবিক। তার মধ্যে দিয়েই সব উড়োজাহাজকেই ফ্লাই করতে হয়। এজন্য নির্মাতা কোম্পানিগুলো প্রতিটি জাহাজেই বিশেষ সেফটি সিস্টেম রাখে। এই এয়ারবাসটিতে কেন তা ছিল না সেটা দেখতে হবে।
×