ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রহিম আবদুর রহিম

সংঘবদ্ধ সুদৃঢ় সমাজই পারে...

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সংঘবদ্ধ সুদৃঢ় সমাজই পারে...

প্রায় তিন যুগ পর আমরা এবার ঈদে একত্রিত হয়েছিলাম। প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ব্যাংকার। সবার মাঝেই এক ধরনের হতাশা। এই সমাজের কি হবে? আমরা কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি, কোথায় যাব? ইত্যকার। আলোচনা-পর্যালোচনা, গবেষণায় মাদকযুক্ত প্রজন্মকে, কিভাবে মাদকমুক্ত সুবোধ সভ্য মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়? এমন আলোচনা, যুক্তিতর্ক, উদাহরণ-উপমা ঢেড় হয়েছে। সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে, লেখাপড়ার পাশাপাশি সমান্তরাল ক্রীড়া-কালচার উজ্জীবিত করতে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা,পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিবেকতাড়িত দায়বদ্ধতাই জরুরী। এই জরুরী কাজটি কে বা কারা, কখন, কোথা থেকে কিভাবে শুরু করবেন সেটাই মুখ্য। ব্রিটিশ-পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে যে যুব সমাজ, ইস্পাতসম শক্তি নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন করেছেন; যে লৌহমানবরা ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অগ্নিমশাল জ্বালিয়ে সোনার বাংলা উপহার দিয়েছেন, সেই সমাজ কেন আজ নেশার রাজ্যে পরিণত! বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ গোলাম সরওয়ারের উপমা, ‘পুড়ে যাওয়া রুটি’ উতলে যাওয়া দুধ, বাবা-মা’র বখাটে সন্তান এই তিনের মধ্যে প্রচ- মিল আছে। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের উদাসীনতাই সকল অপরাধ এবং পাপের জন্ম। সংঘবদ্ধ সুদৃঢ় সমাজই পারে সকল প্রকারের অন্যায়-অনাচার নির্মূল করতে। আর এই সমাজ গড়ে ওঠে ক্রীড়া কালচারের মাধ্যমে। অথচ আজকের সমাজ নিথর, নীরব, মৃত্যুপুরী। নেই শৈশব, কৈশোর। না আছে পাড়া-প্রতিবেশীদের মানবিক বন্ধনের অভূতপূর্ব ষাট-সত্তর দশকের গ্রামীণ উৎসব, পার্বণ। সবাই যেন যান্ত্রিক সভ্যতার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। শিশু-কিশোর কি অদ্ভুত! শিক্ষা নামক প্রতিযোগিতার বার্ধক্যে পড়ে জীবন পার করছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে সমাজকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ধ্বংসের দিকে। পরিবেশ পরিস্থিতির বাস্তবতায় মনে হয় মাদক গ্রহণ, মাদক বিক্রিই যেন আমাদের আদি সংস্কৃতি। আমরা কোন ক্রমেই ভুলে যেতে চাই না, ‘হাজারো খারাপ মানুষ একটি সমাজ ধ্বংস করতে পারে না, সমাজ ধ্বংস হয় তখন, যখন সমাজের ভাল একজন মানুষ নীরব থাকে।’ বর্তমান সরকারের বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান তাঁকে আমি কোনদিনই দেখিনি, চিনি না, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এবং তার থানার ওসি মোঃ সিরাজুল ইসলাম সম্পর্কে বন্ধুবর কৃষিবিদ আবদুল কুদ্দুস যা শোনালেন, তা শুধু প্রশংসনীয় নয়, তাঁদের কর্মকা-ের আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানানো বিবেকতাড়িত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের মাদক সম্রাটরা এলাকায় মাইক ফুঁকিয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য, ‘আমি অমুক, তমুক দলের নেতা বলছি। আমি মাদক বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি, আমি ভাল হয়ে গিয়েছি, আপনারা ভাল হয়ে যান।’ মাদকের স্বর্গরাজ্য। মাদকমুক্তকরণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার ওসি মোঃ সিরাজুল ইসলাম তাঁর এলাকার নির্বাচিত এমপির কাছে গিয়ে সহযোগিতা কামনা করেন। কৃষিবিদ আবদুল মান্নানও মাদকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ওসিকে জানিয়ে দেন। মাদকবিরোধী যে কোন কর্মকা-ে তাকে সহযোগিতার বাণী শোনান। আর যায় কই? ‘বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া।’ মাদকের স্বর্গরাজ্যের মাদক সম্রাটরা কুপোকাত। প্রতিদিন চলছে অপারেশন, ঘরে ঘরে ওসির নাম ধাম, এসপি আসাদুজ্জামান পিপিএমের প্রশংসা কম নয়। এমপি, এসপি, ওসির প্রশংসা যখন সুধী মহলে, ঠিক তখনই এদের বিরুদ্ধে বদনামের ঢোল পিটাচ্ছে মাদক রাজ্যের সম্রাট ও প্রজারা। বগুড়ার সারিয়াকান্দির মাদকবিরোধী পদক্ষেপের ভিশনটি ওই এলাকার এমপি, ডিসি, এসপির নয়। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টির সোপান ধ্বংসে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত এই ভিশন। এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি এক অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সারিয়াকান্দির মাদকবিরোধী কৌশল, নীতি-আদর্শ সারা বাংলার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, সিভিল সোসাইটি ও প্রশাসনের মধ্যে প্রতিফলিত হলে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশ মাদক মুক্ত করার সম্ভব বলে বিশ্বাস অভিজ্ঞতার নায়ক বন্ধুবর আব্দুল কুদ্দুছের। মাদকমুক্ত সারিয়াকান্দির সুন্দর পরিবেশ স্থায়ীকরণে যে সমস্ত কর্মকা- পরিচালনা এখন জরুরী তা কে করবে? কে নিবেন ওই এলাকাটির ক্রীড়া- কালচার বিনোদনের দায়ভার। আমরা ভাল করেই জানি, একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যেমন ওষুধ সেবন করতে হয়, তেমনি তাকে পথ্যাদি খাওয়াতে হয়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মতো দফতরটির কোন প্রয়োজন আছে বলে কেউ মনে করছে না। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যা করছে তাও সমাজ উপকৃত হচ্ছে না। এসমস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত গবেষণালদ্ধ কর্মকা- মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ঝিমিয়ে পরা ক্রীড়াঙ্গন জাগিয়ে তুলতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও সময়ের দাবি। রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় না করে সরকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া সংস্কৃতির উন্নয়নে অর্থ, শ্রম মানসিকতা ব্যয় করুক এমনটিই চাচ্ছে বাস্তবতার শিকার অসংখ্য জনমানুষ। খেয়াল রাখা উচিত আবেগতাড়িত বিবেক সাহিত্য নির্মাণ করতে পারে, কিন্তু সভ্যতা নির্মাণ সম্ভব না। লেখক : শিক্ষাবিদ
×