ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবার পাতে ইলিশ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সবার পাতে ইলিশ

সর্বশেষ অর্থবছরে চার লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হলেও চলতি অর্থবছরে তা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও এখনও চড়া দাম ইলিশের। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে কিছুটা বঞ্চিতই হচ্ছেন। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা হালিতে আর ৮০০ থেকে ৯৫০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিতে। একই ওজনের ইলিশ হালিতে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। অথচ গত বছর আকারের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২২০০ থেকে ৩০০০ টাকা হালিতে। দারুণ রুপালি ঝিলিক, লোভনীয় রসনা তৃপ্তকর স্বাদ এবং অতিথি আপ্যায়নে বাঙালীর বিশেষ খাদ্য-ঐতিহ্য সব মিলিয়ে জাতীয় মাছ ইলিশের বিশেষ কদর রয়েছে। শর্ষে ইলিশ, ইলিশ পাতুড়ি, ইলিশ ভাজা জিভে জল আসার মতোই সব রেসিপি। বাঙালীর ইলিশপ্রেম নিয়ে নানা কথা চালু রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় বাড়ানো এবং আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য ইলিশের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎসই হচ্ছে ইলিশ। প্রায় পাঁচ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণে নিয়োজিত। ২০-২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে এর সঙ্গে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর তীরের ভারত-মিয়ানমার, আরব সাগর তীরের বাহরাইন-কুয়েত, পশ্চিম মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মেকং অববাহিকার ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া, চীন সাগরের পাশে চীন ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিচরণ কমছে। আর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতি বছর আট থেকে দশ শতাংশ হারে বাড়ছে। এখন বিশ্বের মোট ইলিশের শতকরা ৬৫ ভাগই উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। ইলিশের বিচরণক্ষেত্র সম্প্রসারণের বিষয়টি বেশ ক’বছর যাবত আলোচনা হচ্ছে। আগে চারটি জেলার মাত্র ২০টি উপজেলায় ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম থাকলেও এখন তা ২৯টি জেলার ১৫০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মাছটির উৎপাদন বাড়াতে নতুন অভয়াশ্রম চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলোর সুরক্ষা কাজও চলছে। ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে নতুন বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করে সেগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে। ইলিশ উৎপাদন ও আহরণ বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য প্রজনন পয়েন্ট ও অভয়াশ্রম এলাকা প্রয়োজনে বাড়াতে হবে। জেলে, স্থানীয় প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হচ্ছে এসব অভয়াশ্রম। বিদ্যমান অভয়াশ্রমগুলোয় বছরের নির্দিষ্ট সময় ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকায় কয়েক বছর ধরেই দেশে মাছটির উৎপাদন বাড়ছে। তবে ইলিশের এ উৎপাদন আরও বাড়াতে অভয়াশ্রমের কোন বিকল্প নেই। উৎপাদন বাড়াতে বৈজ্ঞানিক সব পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে চলেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় ৯৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় মৎস্য ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ুক এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে আসুক এটাই প্রত্যাশা।
×