ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা রাজু মিয়াকে চাকরির আশ্বাস স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

যমজ থেকে আলাদা হয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরল তোফা-তহুরা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

যমজ থেকে আলাদা হয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরল তোফা-তহুরা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ গোলাপী রঙের নতুন ফ্রগ, মাথায় ব্যান্ড, চুড়ি, জুতা পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে বাড়ি ফিরল তোফা-তহুরা। রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬৮ নম্বর কেবিন থেকে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি গেল দুই যমজ বোন। রবিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিদায় জানাতে ঢামেকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় তিনি তোফা-তহুরাকে কোলে নেন এবং তাদের বাবার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ছাড়পত্র তুলে দেন। সেই সঙ্গে তোফা ও তহুরার বাবা কৃষক রাজু মিয়াকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এই কৃষক পরিবার এখন কোথায় যাবে? আমার নানার দেশে তাদের বাড়ি। আমি অবশ্যই পরিবারটিকে দেখব। দীর্ঘ চিকিৎসকদের সাফল্যের এই দিনে ঢামেকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, আমরা চাই, তোফা-তহুরা ভাল থাকুক। তারা বড় হয়ে উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করুক। দুইজনের একজনও যাতে চিকিৎসক হতে পারে- সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তোফা-তহুরাদের মতো বিরল রোগ কিংবা সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমাদের আরও হৃদয়বান ডাক্তার দরকার। আমাদের হৃদয়বান ডাক্তার আছে বলেই তোফা-তহুরা নামটি আলাদা হয়ে তোফা ও তহুরা হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. শাহীনুর ইসলাম, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, ঢামেকের ওয়ার্ডবয়সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তোফা ও তহুরা, মুক্তামণি, আবুল বাজানদারদের মতো রোগীদের সুস্থ করে তুলে ঢামেকের চিকিৎসকরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এদের নিয়ে বই বের হয়েছে। ইতোমধ্যে তা প্রিন্ট হয়েছে। এই বইয়ে তোফা ও তহুরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে এটাও উল্লেখ রয়েছে। অবশ্যই এই বইটি জাতিসংঘে যাবে।’ ঢামেক হাসপাতালের অধ্যাপিকা ডাঃ শাহনূর ইসলাম প্রথম থেকেই তোফা ও তহুরার তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন। তিনি ছিলেন যমজ দুই বোনের ছায়াসঙ্গী। সুস্থ অবস্থায় তাদের হাসপাতাল থেকে বিদায় দিয়ে অনেকটা অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ‘তোফা ও তহুরার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা, এটা একটা টিমওয়ার্কের ফল। এ বিষয়ে সব চিকিৎসকদেরই অবদান রয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও প্রতি এক মাস অন্তর তাদের চেকাপের জন্য ঢামেকে আসতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক। দীর্ঘদিন পর সুস্থ মেয়ে দুটিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে ফিরতে পারছেন বলে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান তোফা ও তহুরার বাবা-মা। তোফা-তহুরার মা সাহিদা বেগম জনকণ্ঠকে, ‘বন্যার কারণে ঈদে আগে বাড়ি ফিরতে পারিনি। তাতে কোন আফসোস হয়নি। কারণ আমার মেয়েরা সুস্থ হয়ে আমার বুকেই আছে। সবার দোয়াতে ও চিকিৎসকদের চেষ্টায় তোফা ও তহুরা আলাদা হয়েছে। শনিবার বাড়ি যাওয়া উপলক্ষে তোফা-তহুরার চিকিৎসার তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শাহনূর ইসলাম আমাদের সবাইকে নতুন পোশাক উপহার দেন। আমরা ৪ জনই নতুন জামা পড়ে বাড়ি ফিরছি।’ তোফা ও তহুরার বিদায়ী ছাড়পত্র প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢামেকের শিশু সার্জন টাবলু। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ স্বাস্থ্য বিভাগের দুই সচিব সিরাজুল ইসলাম খান ও সিরাজুল ইসলাম এবং ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একএম নাসির উদ্দিন, নিউক্লিয়ার এ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ সানোয়ার হোসেন, বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম, সমন্বকারী ডাঃ সামন্তলাল সেন প্রমুখ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার জিনিয়া গ্রামে রাজু মিয়া ও সাহিদা বেগমের ৫ বছর বয়সী ছেলের পর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে কোলজুড়ে আসে তোফা ও তহুরা। কিন্তু শিশু দুটি কোমড়ে জোড়া লাগানো যা ‘পাইগোপ্যাগাস’ নামে অভিহিত একটি জন্মগত ত্রুটি। এরপর ৭ অক্টোবর তাদের ঢামেকে ভর্তি করা হয়। এবং ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে ২০ অক্টোবর ২০১৬ সালে তাদের পেটে অস্থায়ী পায়ুপথ স্থাপনের অস্ত্রোপচার করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে ৬ মাস পর তোফা ও তহুরাকে আলাদা করার অস্ত্রোপচার করবেন বলে জানান। ৬ মাস পর ঢামেকে আবার ভর্তি হয় তোফা ও তহুরা। এরপর মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ১ অক্টোবর টানা ৬ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর ‘পাইগোপ্যাগাসে’ আক্রান্ত জোড়া শিশু তোফা ও তহুরাকে আলাদা করেন চিকিৎসকরা। তাদের পৃথকীকরণ অস্ত্রোপচারের জন্য মোট ২টি দলে সিভিল সার্জন, প্লাস্টিক এ্যান্ড রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জন, নিউরো সার্জন, অর্থপেডিক সার্জন, রেডিওলজি এ্যান্ড ইমেজিং বিশেষজ্ঞগণ কাজ করেন।
×