ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নৌকা ও নদীবিষয়ক দুই গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নৌকা ও নদীবিষয়ক দুই গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপরিহার্য ও অনন্য সুন্দর এক বাহন নৌকা। জলের বুকে গড়িয়ে চলা দেশের ঐতিহ্যের অংশ এই নৌকার রয়েছে নানা গড়ন। বৈচিত্র্যময় কাঠামোর সেসব নৌকা ও নদীভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এবার উঠে এলো বইয়ের পৃষ্ঠায়। এনায়েতউল্লাহ খান ও ইভ মার যৌথভাবে লিখেছেন ‘বোটস এ ট্রেজার অব বাংলাদেশ’। আর ফরাসী নৌ-অভিযাত্রী ইভ মার এককভাবে লিখেছেন ‘বার্জ ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ। বর্ণনার সঙ্গে আলোকচিত্রের সম্মিলনে চমৎকার প্রচ্ছদে মোড়া বই দু’টি প্রকাশ করেছে কসমস বুকস। রবিবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে এ দুই গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অবার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন লেখক ইভ মার। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মজাচ্ছলে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ দুই বই নিয়ে আলোচনা করার মতো বিশেষজ্ঞ নই আমি। উপরন্তু আমি আমার নৌকা চড়তে ভয় পাই। কারণ, সাঁতার জানি না। এ অনুষ্ঠানে এসে মনে পড়ছে আমার শৈশবের স্মৃতি। সেসময় দিনভর নৌকায় চেপে নানাবাড়ি যেতাম। এমনকি দুপুরের আহারও ওই নৌকাতে বসেই সম্পন্ন করেছি। গ্রন্থ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলপথ পাড়ি দিয়ে ইভ মার এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় পরিচালনা করেছেন জলে ভাসমান ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। নৌকা ও নদীকে ঘিরে তার জীবনের সেই বিচিত্র অভিজ্ঞতার বয়ান উঠে এসেছে এ দুই গ্রন্থে। এতে শুধু নৌকাই নয়, বাংলাদেশের জলপথের নানা প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। ইভ মার বাংলাদেশে থেকে এদেশকে ভালবেসে এ বই লিখেছেন। সব মিলিয়ে পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো চমৎকার নৌকা ও নদীবিষয়ক চমৎকার দু’টি বই। আলোচনায় সংস্কৃতিমন্ত্রী ইভ মারের সহযোগিতায় একটি পৃথক নৌজাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান। অনুভূতি প্রকাশ করে ইভ মার বলেন, নৌপথ ও নৌকার প্রতি রয়েছে আমার বিশেষ রোমাঞ্চ। জলপথের সেই ঘোরাঘুরিতে যমুনার চরে দেখা পেয়েছি প্রান্তিক মানুষের। ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা সহায়তায় দিয়েছি। এমন অনেক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছে এই দুই বইয়ে। গ্রন্থ দুটি প্রকাশনার মাধ্যমে আমার স্বপ্ন রূপ পেল বাস্তবে। বই দু’টি পাঠ করলে পাঠকরাও সেই স্বপ্নের সন্ধান পাবে। সোফি আবের বলেন, ২৩ বছর আগে ইভ মার নৌকায় চড়ে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষকে সে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে নৌকা নিয়ে প্রদর্শনীও করেছে ইভ। তুলে ধরেছেন এদেশের নৌকার ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তার এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি আরও দৃঢ় হয়েছে। এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, ২০১৪ সালে ‘বোটস এ ট্রেজার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইটি প্রথমে প্যারিসে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে আমাদের অপেক্ষা ছিল বাংলাদেশে এই গ্রন্থের মোড়ক উšে§াচন অনুষ্ঠান করার। ইভ মারের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব বহু বছরের। সে বন্ধুত্ব থেকে আমাদের স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে বই প্রকাশ করার। সে স্বপ্ন থেকেই বাংলাদেশে একসঙ্গে দুই গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। এনায়েতউল্লাহ খান ও ইভ মার রচিত ‘বোটস এ ট্রেজার অফ বাংলাদেশ’ বইয়ে উঠে এসেছে এই অঞ্চলের সংস্কৃতির এক বিশাল ভা-ার। বাংলাদেশের নৌকা, জলপথ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে আলোকচিত্রের সমন্বয় ঘটেছে এই বইয়ে। যুক্ত হয়েছে এদেশের নৌকা-নির্মাতাদের কারিগরি পা-িত্য। আছে নৌ-সংক্রান্ত কুশলী ব্যক্তিত্ব ও প্রকৃতি বিশারদদের সাক্ষাতকার। নদীমাতৃক সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে এদেশের জলযাত্রার অনন্য অভিজ্ঞতা মেলে ধরা হয়েছে অনুরাগী পাঠকদের জন্য। অন্যদিকে ইভ মার রচিত ‘বার্জ ফর বাংলাদেশ’ বইয়ে উঠে এসেছে এদেশে স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করতে এসে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার বয়ান। ১৯৯৪ সালে লেখক বাংলাদেশে আসেন একটি ভাসমান হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। মাত্র দুইজন সহকর্মী নিয়ে এক স্বপ্নচারী মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণের বিবরণ পাওয়া যাবে এ গ্রন্থে।
×