ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরের জঙ্গী আস্তানার রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্যোগ

এবার ‘ডন’ ভাইয়ের খোঁজে নেমেছে র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এবার ‘ডন’ ভাইয়ের খোঁজে নেমেছে র‌্যাব

শংকর কুমার দে ॥ কে এই ‘ডন ভাই’? এই ডন ভাইয়ের কথাই র‌্যাবকে জানিয়েছিল মিরপুরের মাজার রোডে আত্মসমর্পণের কথা বলে আত্মঘাতী হওয়া শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লাহ। জীবিত ধরার জন্য তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল র‌্যাব। মোবাইল ফোনে র‌্যাবের কাছে তখন সে যেই নামটি বলেছিল তার নামই ডন ভাই। কিন্তু সেই ডন ভাই গ্রেফতার না হওয়ায় তা এখনও রহস্যাবৃত। ডন ভাইয়ের সঙ্গে আরও অন্তত চার জঙ্গীকে খোঁজা হচ্ছে যাদের যাতায়াত ছিল মিরপুরের মাজার রোডের শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লার জঙ্গী আস্তানায়। তবে ডন ভাইকে আটক করা গেলে মিরপুর মাজার রোডের জঙ্গী আস্তানা, আত্মসমর্পণের কথা বলে আত্মঘাতী হওয়ার নেপথ্য কাহিনীসহ নব্য জেএমবির জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে অনেক অজানা রহস্য উদঘাটিত হবে বলে র‌্যাবের দাবি। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, মিরপুর মাজার রোডের জঙ্গী আস্তানায় অবস্থানকারী শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণের কথা বলে কেন আত্মঘাতী হলেন তার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তার জঙ্গী আস্তানায় পাঁচ থেকে ছয় জন জঙ্গীর যাতায়াত ছিল বলে র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু আবদুল্লাহ আত্মঘাতী হওয়ার পর যে অজ্ঞাতপরিচয় সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয় তার মধ্যে আবদুল্লাহ, দুই স্ত্রী ও দুই সন্তান বাদ দিলে বাকি থাকে অপর নিহত দুই জন। ্এই দুই জন যে জঙ্গী ছিল না তারই বা নিশ্চয়তা কি ? নিছক ওই দুই জনসহ জঙ্গী আস্তানাটিতে যে ছয় জঙ্গীর যাতায়াত ছিল বলে ধরা হলে আরও অন্তত চার জঙ্গী রয়েছে, যারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে ডনও অন্যতম হতে পারে। তবে ডনকে শনাক্ত করাসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) মনিরুল ইসলাম বলেছেন, র‌্যাবের সন্ধানে থাকা ‘ডন ভাই’ এর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীর মধ্যে আনোয়ার হোসেন নামের এক জঙ্গীর। তার সঙ্গে যোগাযোগ থাকা ‘জঙ্গী ডন’ একই ব্যক্তি কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেনসহ আটক হয়েছে দুই নব্য জেএমবির জঙ্গী। এর মধ্যে একজন ‘হোয়াইট কলার জেএমবি’ সদস্য আনোয়ার হোসেন। যার সঙ্গে নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা ‘জঙ্গী ডন’ নামেরও একজন ছিল বলে জানায় সিটিটিসি। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটা পর্যন্ত মিরপুরের মাজার রোডের ২/৩-বি নম্বর বাড়ি ‘কমল প্রভা’য় অভিযান চালায় র‌্যাব। বাড়িটি ঘিরে রাখার পর আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ চালিয়ে মারা যায় নব্য জেএমবি বলে পরিচিতি সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘আল-আনসার’ সদস্য আবদুল্লাহসহ সাত জন। র‌্যাবের পক্ষ থেকে অভিযানকালে জানানো হয়, আব্দুল্লাহ ‘হোয়াইট কলার জেএমবি’। সে সরাসরি নাশকতার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত। তার বাসায় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শীর্ষ নেতা সারোয়োর জাহান, তামিম আহমেদ চৌধুরী, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ অনেক বড় বড় জঙ্গী আশ্রয় পেয়েছিল। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার আগে তাকে জীবিত অবস্থায় ধরার জন্য আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করে র‌্যাব। র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে তখন তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা হয়। আর তখনই আত্মঘাতী জঙ্গী আবদুল্লাহর মুখ থেকে বের হয়ে আসে ‘ডন ভাই’ নামের একজন জঙ্গী নেতার নাম। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আত্মসমর্পণের চেষ্টার সময় আমরা আব্দুল্লার সঙ্গে কথা বলেছি। তখন সে ‘ডন ভাই’ নামের একজন ব্যক্তির নাম বলেছে। আমরা ‘ডন ভাই’ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। তার কোথায়, কী সংশ্লিষ্টতা আছে, তা খোঁজার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আব্দুল্লাহর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আরও পাঁচ থেকে ছয় জন কাজ করত, তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজএম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, শুক্রবার খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় নাঈম আহমেদ ওরফে আনাস ওরফে আবু হামজা ওরফে আরিশা কুনিয়া (৩২) ও আনোয়ার হোসেন (৩০)। তাদের হেফাজতে থাকা ৩০টি ডেটোনেটর (বিস্ফোরক) ও উগ্রবাদী মতাদর্শের কিছু বই উদ্ধার হয়েছে। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীর সঙ্গে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও প্রধান সারোয়ার জাহান মানিক, রিপন, নোমান, আল বানী, সিরিয়ায় নিহত আইএসের আইটি বিশেষজ্ঞ সাইফুল হক সুজন ছাড়াও ডনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরে জঙ্গী আস্তানায় আত্মঘাতী হয়ে সাত জনের মৃত্যুর আগে ওই জঙ্গী আস্তানায় ডন নামে যেই জঙ্গী যাতায়াত ছিল র‌্যাবের দাবি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হওয়া নাঈম ওরফে আনাস ও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও ডন নামের একজনের যোগাযোগ থাকার নাম এসেছে। র‌্যাবের তদন্তে আসা জঙ্গী ডন আর পুলিশের তদন্তে আসা ডন একই জঙ্গী কিনা তার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
×