ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে ১৫৭ ব্রিটিশ এমপির আহ্বান

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে ১৫৭ ব্রিটিশ এমপির আহ্বান

ব্রিটেনের ১৫৭ জন এমপি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের ওপর অরও চাপ সৃষ্টির জন্য তাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে বুধবার লেখা এক পত্রে তারা বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মানবিক সঙ্কট নজিরবিহীন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ফলে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন। খবর বাসস’র শনিবার বাসসের কাছে আসা অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ডেমোক্রেসি ইন বার্মা’র কো-চেয়ার রুশনারা আলী এমপি স্বাক্ষরিত পত্রে ব্রিটিশ এমপিগণ আশা প্রকাশ করেন যে, অতীতের মতোই ব্রিটিশ সরকার মিয়ানমারের জনগণের বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় নেতৃত্ব প্রদর্শন করবে। পত্রে বলা হয়, এতে প্রতীয়মান হচ্ছে ২৫ আগস্ট সরকারী ভবনসমূহে হামলায় জড়িত আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির জঙ্গীদের গ্রেফতারের পরিবর্তে বরং সেদেশের সেনাবাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বিশাল এলাকা জনশূন্য করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে ওই হামলাকে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও রোহিঙ্গা সংগঠনসমূহের রিপোর্ট থেকে আমরা দেখছি যে, মিয়ানমারের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওই পত্রে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে, লোকদের সারিবদ্ধভাবে জোরপূর্বক শোয়ানো হয় এবং অতঃপর তাদের মাথার পেছনে গুলি করা হয়, শিরñেদ ও ধর্ষণ করা হয়, লোকদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং শিশুদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানো হয়। এতে বলা হয়, সরকারীভাবে যে কয়েকশ’ লোকের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য রোহিঙ্গা সংস্থাগুলোর হিসেবে এই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি এবং তা দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ওই হামলায় ১০ হাজারের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে মিয়ানমার ও প্রতিবেশী বাংলাদেশে একটা বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘দুটি অগ্রাধিকার এখন দরকার। একটি রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং অপরটি জরুরী মানবিক চাহিদা পূরণ করা। আমরা মনে করি, সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান মিন অং হ্লায়িংকে ব্যাপকভাবে চাপ দেয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ চিঠিতে বলা হয়, ‘সেনা হামলা বন্ধে সামান্যতম বিশ্বাসও যদি না সৃষ্টি হয়, তাহলে প্রভাব খাটাতে হবে, অবশ্যই প্রভাব খাটাতে হবে।’ ব্রিটিশ আইন প্রণেতাগণ বর্তমানে ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্মিজ সেনাবাহিনী যেভাবে মারাত্মক আকারে সহিংসতার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তা পর্যালোচনা করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন। তারা বর্তমানে চলমান বার্মিজ সেনাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী স্থগিত করার জন্যও সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে শর্তাবলী ও অঙ্গীকার পুনর্গ্রহণ ও সেদেশে আর কোন প্রকার সামরিক সরঞ্জাম রফতানি বন্ধ করতে হবে।’ তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কাউন্সিলে জরুরী প্রস্তাব গ্রহণ ও আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন প্রদানের জন্যও ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
×