ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী একনেক সভায় চূড়ান্ত হবে

চট্টগ্রাম শহরের সড়ক সংস্কারে ৮০৪ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রাম শহরের সড়ক সংস্কারে ৮০৪ কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ জোয়ার ও ভারি বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সড়কগুলোর সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি প্রকল্পে প্রায় ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০৭টি সড়কের সংস্কারে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি ব্রিজও নির্মাণ করা হবে। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকেও ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি সিটি কর্পোরেশন এলাকার সড়ক ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাত, জোয়ার এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে শহরের রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে সাধারণ যান চলাচলেরই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে এসব সড়কের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প এটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা শেষে একনেকে এটি উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৮০৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছেÑ ১৩৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১০৭টি রাস্তার উন্নয়ন, ৩৬টি ব্রিজ নির্মাণ, ১৩৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার বিদ্যুতায়ন, চারটি এক্সিলেটেরসহ (চলন্ত সিঁড়ি) ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন, চারটি ড্রাম ট্রাক, দুটি ১০ টন ওজনের রোড রোলার, দুটি পে-লোডার, একটি কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ল্যাব যন্ত্রপাতি এবং একটি পানিবাহী ট্রাক ক্রয় করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্ট্র্যাটেজি ফর লোকাল গবর্নমেন্ট এ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই বন্দর আমদানি, রফতানি ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসে। এ বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি সিটি কর্পোরেশন এলাকার সড়ক ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং শহর রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা অপরিহার্য। চট্টগ্রাম এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নত সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং চট্টগ্রাম শহর এলাকার পরিবেশগত উন্নতি, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেরামত ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সামগ্রিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাযথভাবে বজায় রাখতে কাজ করে থাকে। কিন্তু শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান নগর সুবিধার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম গত এক দশকে অনেক গুণ বেড়েছে। তাই নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করা সিটি কর্পোরেশনটির পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিলের সঙ্গে সরকারী তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
×