ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি চেয়ারম্যান না থাকায় বিচারকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আইসিটি চেয়ারম্যান না থাকায় বিচারকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ

বিকাশ দত্ত ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান না থাকাতে বিচারকাজ সম্পূর্র্ণ বন্ধ রয়েছে। ৫৯ দিন ধরে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে- ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থী ও সাক্ষীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক সাক্ষী ও আসামি বয়সের কারণে মারা গেছে। আরও কিছু আসামি ও সাক্ষী অসুস্থ। নির্দিষ্ট সময়ে এদের বিচার না হলে তাদেরও মৃত্যু ঘটতে পারে। তখন কোন আসামি ও সাক্ষীকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান না থাকায় বিচারপ্রার্থী ও আসামি উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন,চিন্তার কোন কারণ নেই। হয়ে যাবে শীঘ্রই। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে। ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক মারা যাওয়ার পর বর্তমানে ৫৯দিন ধরে চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। ফলে ৩৩ মামলায় ১৪১ জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলছে না। এর আগে ২৮ মামলায় ৫৩ জনকে দ- দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম মূলত বন্ধ রয়েছে। বিচার যেভাবে চলছিল তার গতি হারাচ্ছে। আমরা চাই আবার গতি ফিরে আসুক। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর থেকে ১০ সাক্ষীকে ঢাকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে ট্রাইব্যুনালের কাজ না চলায় বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই ট্রাইব্যুনাল দ্রুত পুনর্গঠন করে বিচারকাজ আবারও শুরু হোক। বিচার দ্রুত হওয়াটাই বিচারপ্রার্থীদের দাবি। ট্রাইব্যুনালে এখন একটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ, বিচারাধীন ১৮ মামলা। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা প্রসিকিউশনে জমা পড়ে আছে। যারা বিচারপ্রার্থী তারা অনেক সময় হতাশা প্রকাশ করেছেন আমাদের কাছে। কারণ, তদন্তকালে সাক্ষী এবং ভিকটিমদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগটা হয় আমাদের। যা দুঃখ-বেদনা, ক্ষোভ বা আশা-হতাশা তারা আমাদের সঙ্গেই শেয়ার করেন। ফলে তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলব, যদি দুটি ট্রাইব্যুনাল করে দ্রুত মামলাগুলো সম্পন্ন করা হয়, তা হলে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘোষণা দিয়েছেন শেষ রাজাকার থাকা পর্যন্ত বিচার চলবে। আমরাও চাই শেষ রাজাকার থাকা পর্যন্ত বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে। তাই দ্রুত ট্রাইব্যুনালকে পুনর্গঠন করা হোক। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেন, এখানে কেন বেঞ্চ গঠন করা হচ্ছে না সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এমনিতেই বিচার শুরু করেছি ৪০ বছর পর। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কিছু রায় পেয়েছি। বর্তমানে কিছু মামলা পেন্ডিং। আমরা সাক্ষীদের হারিয়ে ফেলছি। তাদেরও অনেক বয়স হয়েছে। এই দীর্ঘসূত্রতার অবসান চাই। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম না থাকায় প্রসিকিউটরের সদস্যরা অলস সময় পার করছেন। অন্যদিকে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ আসামি রয়েছে, যারা বিচারহীনতার কারণে দিনের পর দিন কারাগারে রয়েছে। তাদের মামলার কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রসিকিউশনের অন্যতম প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা বিচার শুরু করেছি। দেশের শহীদ পরিবারগুলো আশায় বুক বাধে। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ২৯ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আমি মনে করি দ্রুত ট্রাইব্যুনালে চেযারম্যান নিয়োগ দিয়ে ট্রাইব্যুনালকে সচল করা হোক। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, হতাশ হবার কিছুই নেই। আশা করছি শীঘ্রই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হতে পারে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধানে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে তিন সদস্য নিয়ে। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। আর সদস্য থাকবেন দু’জন। চেয়ারম্যান যদি সাময়িক অনুপস্থিত থাকেন তা হলে ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে তিনি কোন মামলার রায় বা কোন মামলার অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন না। বতর্মান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় শূন্যতা দেখা দিয়েছে। বিচারপ্রার্থীদেরও দাবি এই শূন্যতা দূর করতে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নামে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর এ পর্যন্ত ২৮ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ২৮ মামলার রায় ঘোষণা করেছে। এই সমস্ত মামলায় ৫৫ আসামি ছিল। দ- দেয়া হয়েছে ৫৩ জনকে। রায় হওয়ার পূর্বে কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করে দুজন।
×