ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ঘোলাপানিতে মাছ শিকার’ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ গোয়েন্দাদের

বন্যা রোহিঙ্গা জঙ্গী- তিন দুর্যোগ মোকাবেলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বন্যা রোহিঙ্গা জঙ্গী- তিন দুর্যোগ মোকাবেলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

শংকর কুমার দে ॥ দেশের বন্যা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল, ভয়াবহ জঙ্গী তৎপরতা-এই তিন দুর্যোগ মোকাবেলায় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন সরকার। ভয়াবহ এই তিন দুর্যোগ মোকাবেলায় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। কিন্তু তিন দুর্যোগ মোকাবেলার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে যাতে কোন মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য মতামত ব্যক্ত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সারাদেশের ২০ জেলার ৫৮ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব বানভাসি ৫৬২ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। সরকারী পরিসংখ্যানে এই চিত্র ফুটে উঠলেও বেসরকারীভাবে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এবারের ভয়াবহ বন্যায় অনেক মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে কোন মানুষই অনাহারে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল টিমের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে সেবাকার্য চালিয়ে যায়। অতীতে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ শক্ত হাতে মোকাবেলার দৃষ্টান্ত নেই বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্যা কবলিত জেলা ও উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ১২ সহস্রাধিক মেট্রিক টন চাল, প্রায় ৪ কোটি টাকা ও লক্ষাধিক প্যাকেট শুকনা খাবার বিলি করেছে সরকার। এবারের বন্যাকবলিত মানুষের সাহায্যার্থে সরকার ছাড়াও বেসরকারীভাবেও বিভিন্ন সংগঠন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ সর্বস্তরের মানুষ চাঁদা তুলে অর্থ, অন্ন, বস্ত্র সংগ্রহ করে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা হয়। সফলতার সঙ্গে দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে সরকার। দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বক্ষণিক তদারকি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রত্যেকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সফলভাবে কাজ করেছে বন্যা, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সফলভাবে উত্তরনের পর সরকারের সামনে চলে আসে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল। মিয়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত রোহিঙ্গাদের আগমনের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্বরোচিতভাবে রোহিঙ্গা নির্যাতন অব্যাহত থাকার কারণে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা এখন বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্নস্থানে অবস্থান করছে। মিয়ানমার থেকে ইতোপূর্বে আসা ৪ লাখ রোহিঙ্গাসহ এখন প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা চলে আসায় তাদের আশ্রয়, খাদ্যসামগ্রীর জোগান দেয়া আরেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যে বার্তা পাঠিয়েছেন তাতেও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও নেতৃবৃন্দ ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। দেশের ভেতরেও বন্যার মতোই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্যসামগ্রীর সাহায্যার্থে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারীভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ ও অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটাও সরকারের দেশ-বিদেশে জনমত সৃষ্টির এক অভানীয় সাফল্য অর্জন বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার যখন দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল মোকাবেলা করে চলেছে তখন আবার দেশের ভেতরে ভয়াবহ জঙ্গী তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। মিরপুরের মাজাহার রোডে আত্মঘাতী হয়ে শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লাহসহ তার পরিবারের সাতজন নিহত হওয়া, জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেড-বোমা তৈরির উপকরণ নাশকতার ইঙ্গিত বহন করে। টাঙ্গাইলে দুই সহোদর জঙ্গী গ্রেফতার, রাজধানীতে দুই নব্য জেএমবি সদস্য ও এক হিযবুত তাহরীর সদস্য গ্রেফতারের ঘটনাসহ জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে সফলভাবে জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলা করছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার যখন একের পর এক বন্যা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা আগমন সমস্যা ও জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলা করে চলেছে তখন বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরোধী দল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে না। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির নেতারা সরকারের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার সমালোচনা করেছেন। এখন আবার তারা রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় কূটনৈতিক তৎপরতার ব্যার্থতাসহ নানা ধরনের সমালোচনা করছেন। আর জঙ্গী সমস্যা তো বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতেই তৈরি করে তা উস্কে দিয়ে গেছে। দেশের এই তিন ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবেলায় বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরোধী দলের সক্রিয় ভূমিকা তো নেই-ই, বরং তারা কেবলই সরকারের সাফল্যকে খাটো করতে সমালোচনা করে যাচ্ছেন। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সমস্যা ও জঙ্গী তৎপরতা সফলভাবে মোকাবেলা করা হলেও এসব পরিস্থিতি উত্তরণপূর্ব সময়ে যাতে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করতে পারে সেজন্য সরকারকে সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখার বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×