ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় নদী খননে অন্তরায় অবৈধ দখলদার

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

খুলনায় নদী খননে অন্তরায় অবৈধ দখলদার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ডুমুরিয়া উপজেলার ভরাট হওয়া ভদ্রা ও সালতা নদী খননে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা। প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ওই শ্রেণীর মানুষের ছত্রছায়ায় শত শত স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নদী দুইটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে একনেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারী অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। জানা যায়, ডুমুরিয়ার ভদ্রা নদীটি এঁকেবেঁকে সাগরের সঙ্গে মিশেছে। অপর অংশটি ডুমুরিয়ার শোলগাতিয়া এলাকার বুড়িভদ্রার সঙ্গে মিশেছে। ভদ্রা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার স্রোতধারা হারিয়ে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ডুমুরিয়া বাজারের নিকট ভদ্রা নদীর সংযোগ থেকে বটিয়াঘাটার শৈলমারী নদীতে মিশে যাওয়া নদীটিও অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা যে যার মত করে ভরাট হওয়া ভদ্রার বুক দখল করেছে। দখলবাজ চক্র নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভরাট হওয়া জমিতে গড়ে তুলেছে রাইস মিল, স মিল, বাজার , বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। সালতা নদীর ভরাট হওয়া অংশও প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। ভরাট হওয়া ভদ্রার বুকে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। ভদ্রার বুকে একটি মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের চেষ্টাও চলছে। পানি উন্নিয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ভদ্রা ও সালতা নদী খননের জন্য প্রকল্প জমা দেয়া হয়। এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকের বৈঠকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১৬- ২০১৭ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০১৮-২০১৯ মোট ৩ অর্থবছরে শেষ হবে। ভদ্রা নদীর দুই প্রান্ত থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাপে খনন করা হবে। এর মধ্যে দক্ষিণ অংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া ( স্থানীয় নাম দিঘেলা) থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশের তেলিগাতি হতে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করা হবে। দিঘেলার ভদ্রার মুখে এবং তেলিগাতিতে সুইজ গেট নির্মিত হবে। এছাড়া সালতা নদীটি ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা নদী থেকে শুরু হয়ে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীতে সংযুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প প্রধান অহেদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, খোলা দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেক হাসান জানান, নদী দুইটির সীমানা নির্ধারণে সহযোগিতার জন্য তারা দাফতরিক চিঠি দিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি নদী দুইটি খননের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন । শেষ পর্যন্ত খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ নদী দুইটির খনন কাজ সম্পন্ন হলে বিলডাকাতিয়াসহ এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার নিরসন হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভদ্রার ভরাট জমিতে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রসঙ্গে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে নদী খননে কোন সমস্যা হবে না। ওই স্থান থেকে নদীটি পশ্চিম দিকে সরিয়ে খনন করা হবে বলে তিনি জানান।
×