ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে হঠাৎ বড় ধস

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে হঠাৎ বড় ধস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দ্রুত অর্থ স্থানান্তরের জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় হঠাৎ বড় ধরনের ধস নেমেছে। যেখানে গত জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক গড় লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল সেখানে জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ কমে ৭৫৩ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। একইভাবে মোট লেনদেন, অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের অর্থ স্থানান্তর, নগদ টাকা উত্তোলন ও জমা, বেতন-ভাতা প্রদান এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর যাবত রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। অভিযোগ আছে, হুন্ডিওয়ালার অর্থ পাঠাতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা হ্রাস পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নির্দেশনায় বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও কমানো হয়। এতে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে সর্বমোট লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। যা এর আগের মাস তথা জুনে ছিল ৩০ হাজার আট কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। যদিও ওই মাসে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে দুই কোটি ৮৩ লাখ ১৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আর মোট গ্রাহক সংখ্যা হয়েছে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সাত কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। যা এর আগের মাসে ছিল আট কোটি ৩১ লাখ টাকা। সে হিসেবে জুলাই মাসে রেমিটেন্স আসার হার কমেছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। জুলাইতে নয় হাজার ৫০২ কোটি টাকার নগদ অর্থ জমা করা হয়েছে, যা জুন মাসে ছিল ১২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এতে করে এক মাসে নগদ জমা কমেছে ২২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ মাসে নগদ উত্তোলন করা হয়েছে নয় হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল ১১ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে নগদ অর্থ উত্তোলন কমেছে ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির লেনদেন ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে তিন হাজার ৬১৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করার হার কমেছে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে ৬৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বেতন দেয়া হয়েছিল, যা জুলাইতে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯৮ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ইউলিটি বিল পরিশোধে ২০৩ কোটি দেয়া হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায়, যা জুন মাসে ছিল ২৩২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে জুলাই মাসে সরকার ২৩৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিভিন্ন ভাতা পরিশোধে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। ঢাকার কাওরানবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, লেনদেনে নতুন সীমা আরোপ করায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর থেকে লেনদেন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ টাকার লেনদেন করতেন, এখন তা ৫০ হাজার টাকা নেমে এসেছে। এভাবে সারাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের একই পরিস্থিতি। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি হুন্ডি এবং অপব্যবহা রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশে বলা হয়, এখন থেকে কোন মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি নগদ অর্থ জমা বা উত্তোলনে গ্রাহককে পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে, যা এজেন্ট তার রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্ট্রার গ্রাহকের সই বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনের টাকা উত্তোলনের সীমা ২৫ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়; তবে দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা দেয়া যাবে। মাসে ১০ বারের বেশি অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। এক মাসে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাবে। আর জমা মাসে সর্বোচ্চ ২০ বার বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়া যাবে।
×