ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেক্সিকোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা বহু মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মেক্সিকোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা বহু মানুষ

মেক্সিকোতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে অনুভূত ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গত ৮৫ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। দেশটির পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জরুরী বিভাগের কর্মীরা শুক্রবার থেকে উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত রয়েছেন। খবর এএফপির। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে মেক্সিকোর দক্ষিণ উপকূলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের মেক্সিকো উপকূলে দুই দশমিক তিন ফুট উচ্চতার সুনামি হয়েছে। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল মেক্সিকোর পিজিজিআন শহর থেকে ৮৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৬৯ কিলোমিটার গভীরে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জুখিতান ও ওহাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভূমিকম্পে ওহাকা রাজ্যে ৪৫জন, চিয়াপাসে ১২ ও তাবাস্কোতে চারজন মারা গেছেন। একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে নিহত প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট চিয়াপাস রাজ্যেও যান। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে অন্তত দু’শ লোক আহত হয়েছেন। জুখিতান ও ওহাকা শহরেই ৩৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আতঙ্কিত লোকজন এখনও খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। তারা আরও ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কায় খোলা জায়গায় তাঁবু টানিয়ে থাকছেন। ভূমিকম্পের পর জারি করা সুনামি সতর্কতার কারণে চিয়াপাসের উপকূলীয় এলাকাগুলোর কয়েক হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরে সুনামি সতর্কতা তুলে নেয়া হয়। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য তাবাস্কো, ওহাকা ও চিয়াপাসে ব্যাপক উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরণ পেতে আরও সময় লাগতে পারে। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওহাকা রাজ্যের জুখিতান। এখানে অন্তত ১৭ জন মারা গেছে বলে বলে খবর পাওয়া গেছে। শহরটির টাউন হলসহ বহু ভবন ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরটির মেয়র গ্লোরিয়া স্যানচেজ জানান, জুখিতানের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। শহরটির ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্ত। প্রেসিডেন্ট পেনা নিয়েতো শুক্রবার শহরটি পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে কয়েক শ’ মাইল দূরে অবস্থিত রাজধানী মেক্সিকো সিটির লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। একই ভূমিকম্পে মেক্সিকোর প্রতিবেশী দেশ গুয়াতেমালায় একজন মারা গেছেন ও চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জিমি মোরালেস। শুক্রবার সারাদিন ধরেই পরাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো বারবার কেঁপে ওঠে। এদিকে কলম্বিয়া সফররত পোপ ফ্রান্সিস উন্মুক্ত এক গণপ্রার্থনায় ভূমিকম্পে নিহত লোকজন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘প্রার্থনা’ করেছেন। ১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটির কাছে আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এবারের ভূমিকম্পটি আরও শক্তিশালী হলেও কম জনবহুল এলাকা হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×