ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যানবাহনের টিকেট কালোবাজারে

বগুড়ায় ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বগুড়ায় ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তবে শুক্রবার ছিল বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা (ঢাকামুখী) মানুষের স্রোত। আর কর্মস্থলে ফিরতে পরিবহনের জন্য সাধারণ মানুষ পড়েন ব্যাপক দুর্ভোগে। বগুড়া থেকে ঢাকাগামী বাসের টিকেটের জন্য চলছে হাহাকার। বাসের টিকেট হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। নিম্ন আয়ের সাধারণ লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদ ও ট্রাকে বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে ফেরার যাত্রা শুরু করেন। বাসের টিকেট নিয়ে চলছে কালোবাজারি। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কালোবাজারিরা টিকেট বিক্রি করছেন। তারপরও মিলছে না টিকেট। অপরদিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান থেকে দেখা দিয়েছে ৪-৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। শুক্রবার সকালে এই যানজট ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। মহাসড়কে বগুড়ার মহাস্থান ব্রিজে প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে দেখা দেয়া ফাটলের কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পর থেকে সেখানে যানজটের ভোগান্তি শুরু। ঈদের পরে ফিরতি যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার তা মারাত্মক দুর্ভোগে রূপ নেয়। দ্রুত মহাস্থান ব্রিজ মেরামত করে স্বাভাবিক করার কথা থাকলেও মেরামত সম্পন্ন হয়নি। ফলে মহাস্থান ব্রিজের ওপর একই সঙ্গে দু’পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করা যাচ্ছে না। এক পাশের যানবাহন থামিয়ে দিয়ে অন্য পাশের যানবাহন ছাড়া হচ্ছে। এতে যানবাহন আটকে থাকছে দীর্ঘ সময়। অনেক ক্ষেত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক দুর্ভোগ। শুক্রবার দুপুর ১টা বগুড়ার বনানী মোড়ে ট্রাক চালক আশরাফ তার ট্রাক এনে থামালেন অনেকটা পণ্য তোলার মতো। তবে এর পরই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পণ্য নয় ট্রাকে উঠছে ঢাকায় কর্মস্থলমুখী নিম্ন আয়ের লোকজন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল গার্মেন্টসসহ বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হবে শনিবার বা রবিবার থেকে। এ জন্য শুক্রবার তারা ঢাকায় ফেরার জন্য বেছে নিয়েছেন। কিন্তু বাস টার্মিনালের কোন টিকেট কাউন্টারেই টিকিট নেই। শুধু শত শত কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড়। টার্মিনালে ঈদের জন্য নির্ধারিত সাড়ে ৪শ’ টাকার টিকিট কালোবাজারিরা বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত (ননএসি), বাসের ইঞ্জিন কভারের সিটে ৫শ’ টাকায়। এসব গাড়ি আবার প্রতিষ্ঠিত কোন যাত্রী পরিবহন কোম্পানির নয়। বিভিন্ন রুটের গাড়ি ঈদ উপলক্ষে যারা ঢাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে তারা আবার ছাদে যাত্রী তুলছেন ২শ’ টাকার বিনিময়ে। ভেতরের টিকেট ৬শ’ টাকা। ছাদের যাত্রী ফজলু জানালেন, টিকেট কেটে বাসে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ঢাকায় ফিরছেন বাসের ছাদে। টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল অনেক কাউন্টারে (নাম সর্বস্ব পরিবহন প্রতিষ্ঠান) প্রকাশ্যেই ৭-৮শ’ টাকা দরে টিকেট চাচ্ছেন তাদের কর্মীরা, তাও আবার সীমিত। আর টামিনালে টিকেটের এমন দামে সোনার হরিণের মতো অবস্থায় সাধারণ নিম্ন আয়ের লোকজন ছুটছেন মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যেখান থেকে বিভিন্ন রুটের বাস ও ট্রাক বাড়তি আয়ের জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন, সেসব পরিবহনের জন্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ উঠছেন ছাদে আবার কেউ ট্রাকে। এমনই চিত্র ছিল শুক্রবার সকাল থেকে বগুড়ার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। এদিকে মহাস্থান ব্রিজের জন্য কয়েক কিলোমিটার যানজটের বিষয়ে বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক বিকর্ণ চৌধুরী জানান, দুপুরে প্রায় ২ কিলোমিটার যানজট ছিল। তবে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান ১ কিলো মিটারের কিছু কম যানজট রয়েছে বলে দাবি করে বলেন, সকালে বগুড়ার শেষ সীমানায় রহবল এলাকায় মহাসড়কে ২টি ট্রাক অচল হয়ে পড়ায় কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি দাবি করেন মহাস্থান ব্রিজের কারণে ওই যানজট সকালে সৃষ্টি হয়নি। তবে তিনি স্বীকার করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ পানি বাড়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে ব্রিজটির মেরামত কাজ করা যাচ্ছে না। আরও ৬-৭ দিন লাগবে রোটার ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে পাইলিং এর ড্রিল করার জন্য। বরিশালে লঞ্চযাত্রীরা জিম্মি স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ-উল-আযহার পরে কর্মস্থলে ফিরতে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চযাত্রীরা দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সড়কপথে ফেরিঘাটে বিড়ম্বনার কারণে এবার অধিকাংশ যাত্রীরা নৌপথকে বেঁছে নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ও তার আগেরদিন বৃহস্পতিবার বেসরকারী লঞ্চের টিকেট মেলেনি কাউন্টারগুলোতে। তবে কালোবাজারে টিকেট পাওয়া গেলেও তার দাম তিন থেকে চার গুণ বেশি। যাত্রীরা জানিয়েছেন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চার গুণ বেশি দাম দিয়ে বিলাসবহুল লঞ্চের টিকেট কিনতে হচ্ছে কালোবাজার থেকে। বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল অফিসের সহ-মহাব্যবস্থাপক জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবারের সব টিকেট ঈদের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। শুক্রবার বন্ধের দিনে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে সরকারী ও বেসরকারী জাহাজে স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হলেও টিকেট মিলছে না। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবারের টিকেটের জন্য কাউন্টারগুলোতে ধর্ণা দিলেও বিশেষ সুপারিশ ছাড়া কেউই টিকেট পাননি। কাউন্টারগুলো থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ লঞ্চ টার্মিনালে চার গুণ বেশি দাম দিয়ে দালালের কাছ থেকে কালোবাজারে টিকেট ক্রয় করেছেন অধিকাংশ যাত্রীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১২শ’ টাকার স্থলে দালালের মাধ্যমে কালোবাজারে শুক্রবারের টিকেট বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৮শ’ টাকায়। শুক্রবারের টিকেট তিন হাজার টাকা হাঁকানো হলেও দরদাম করে ২০০ টাকা কম দিয়ে ২৮শ’ টাকায় ক্রয় করেছেন তানভির আহম্মেদ অভি নামের এক যাত্রী। এছাড়া ডাবল, ফ্যামিলি, ভিআইপি কেবিনের টিকেট যাত্রীদের কাছে ছিল সোনার হরিণের মতো।
×