ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে আলী কলেজ

গলাচিপায় নির্মাণের আগেই ভবনঝুঁকি পূর্ণ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গলাচিপায় নির্মাণের আগেই ভবনঝুঁকি পূর্ণ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ চরবিশ্বাস কে আলী কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম। একদিকে এর নির্মাণ কাজ চলছে, আরেকদিকে দেয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিচ্ছে। প্লাস্টার খুলে পড়ছে। ব্যালকনির ড্রপওয়াল ভেঙ্গে পড়ছে। ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। ভবন নির্মাণে নেই কোন তদারকি। মোট কথা ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ভবন নির্মাণে কলেজ কর্তৃপক্ষের এসব অভিযোগের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্ধতনরা সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি। উপরন্তু এভাবেই ভবনটি বুঝে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস কে আলী কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। কাজটি সম্পন্নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্থানীয় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক রেনু আক্তারকে। কার্যাদেশে দেড় বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষে সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কার্যাদেশের সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, সবেমাত্র তিনতলা পর্যন্ত ভবনটি অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকেই ভবন নির্মাণে চলছে চরম অনিয়ম-অব্যবস্থা ও লাগামহীন দুর্নীতি। ব্যবহার হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। মাটির ৮ ফুট গভীর থেকে বেজ ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৩-৪ ফুট গভীরে। বেজ ঢালাইয়ে ব্যবহার হয়েছে মরিচা ধরা রড। মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট। ব্যবহার হয়নি প্রয়োজনীয় পাথর। ফলে শুরু থেকেই ঝুঁকি নিয়ে ভবনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অর্ধ সমাপ্ত এ ভবনের দেয়ালের প্লাস্টার খুলে পড়ছে। দেয়ালের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় আকারের ফাটল হা করে তাকিয়ে আছে। কয়েকটি বিমেও ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও সিমেন্ট দিয়ে ফাটল ঢেকে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় তলার ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। ব্যালকনির ড্রপওয়াল যখন তখন খুলে পড়ায় এর আশপাশ দিয়ে লোকজন সাবধানে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী। ভবনের যেখানে সেখানে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। এখন পর্যন্ত সৌরপ্যানেল বসানো হয়নি। কলেজ অধ্যক্ষ মুঃ আঃ জব্বার খান অভিযোগ করেন, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই গোটা ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা যখন তখন ধসে পড়তে পারে। জেনে শুনে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে কোনক্রমে কলেজ চালু করা যাবে না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ বছরের মার্চ মাসে ভবন নির্মাণের প্রতিটি ধাপের দুর্নীতির সচিত্র প্রমাণসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনও দুর্নীতির তদন্ত এবং প্রতিকারের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত টিম সরেজমিন তদন্ত করে। ওই সময়ে দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য প্রমাণ তদন্ত টিমকে দেয়া হয়। কিন্তু তদন্ত টিম ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু ভবনটি অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় বুঝে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভবনটি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে ভবন নির্মাণ কাজের তদারক কর্মকর্তা পটুয়াখালী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাদিউজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ভবনটির চারতলা অন্য কোন ঠিকাদারকে দিয়ে সম্পন্ন করার চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। ঠিকাদার রেনু আক্তার জানান, তার অসুস্থতার কারণে নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। তবে শীঘ্র নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। ভবন নির্মাণে কোন দুর্নীতি হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
×