ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য ॥ বিড়ম্বনায় বিনোদনপ্রেমীরা

রাজশাহীর পদ্মাপাড় ঘিরে ‘চেয়ার ফাঁদ’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাজশাহীর পদ্মাপাড় ঘিরে ‘চেয়ার ফাঁদ’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অনেকটা পরিচ্ছন্ন ও নির্মল শহর হিসেবে খ্যাত রাজশাহী নগরীর মানুষের বিনোদন কেন্দ্র বলতে সেই পদ্মা নদীর পাড়। নির্মল বাতাসে ভ্রমণপিপাসু রাজশাহীর মানুষ একটু অবসর পেলেই ছুটে যান সেখানে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হন সকাল কিংবা বিকেলে। তবে সেই পদ্মার পাড় ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উৎপাতে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। পদ্মা নদীর পাড় ঘিরে গড়ে ওঠা সব স্থাপনায় এখন চলে গেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দখলে। চেয়ার পেতে পুরো নদীর পাড় দখলে নিয়েছে তারা। দেখে মনে হবে মিনি হোটেল সাজিয়ে দোকান বসানো হয়েছে সর্বত্র। রাজশাহী নগরীর যে কয়টি বিনোদন স্পট রয়েছে তার মধ্যে ফ্রি চলাচলের জন্য পদ্মা নদীর বিশাল পাড়জুড়ে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে। তবে সেই সাজানো স্পটে এখন আর দর্শনার্থী ও বিনোদনপ্রেমীদের পা ফেলার জায়গা নেই। চটপটি, বাদামওয়ালা, চা-কফির দোকান, ভ্রাম্যমাণ হকারদের উৎপাতে নদীপাড় ঘিরে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। যেন কারও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের পাতানো চেয়ারে না বসলে সহজে ফিরে আসায় এখন মুশকিল। আর চেয়ারে বসলেই গুনতে হয় বিল। নদীপাড় ঘিরে এখন বসানো হয়েছে ‘চেয়ারফাঁদ’। বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরীর পদ্মা নদীর পাড়ের টি-বাঁধ (টি- গ্রোয়েন) এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাঁধ ঘিরে চেয়ার পাতা। দূর থেকে সাজানো কোন রেস্তরাঁ মনে হলেও আসলে সেগুলো হকারদের পাতা চেয়ার। এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা নেই। টি-বাঁধে পায়ে হেঁটে যাওয়ার কোন পথই নেই। কেই যেতে চাইলে চেয়ার ডিঙিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থা বিরাজ করছে বেশ কিছুদিন থেকে। ঈদের মৌসুমে নদীতীর ঘিরে এসব ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য আরও বেড়েছে। ফলে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে মানুষ পদ্মাপাড়ে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ছাড়াও শিশুপার্ক রয়েছে এখানে। দূরের বিনোদনপ্রেমীরা প্রতিদিন আসেন নির্মল বিনোদনের আশায়। এরপর পদ্মা নদীর নির্মল বাতাসের নদীপাড়ে পা রাখলেই পড়েন নানা ধরনের বিপত্তিতে। পদ্মা নদীর পাড়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ নির্মল বাতাস প্রাণভরে গ্রহণ করার জন্য আসেন। সারাদিন কাজ করার পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে অনেকে আসেন টি-বাঁধ থেকে শুরু করে লালন শাহ পার্ক, বড়কুঠি কিংবা পদ্মা গার্ডেনে। কিন্তু কোন খানেই স্বস্তি মেলে না। হকার আর ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যে। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় সবশ্রেণীর মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু নিরিবিলিভাবে চলতে পারেন না হকার ও ব্যবসায়ীদের দাপটে। শুধু টি-বাঁধ নয়, পদ্মা নদীর ধার ঘেঁষে চটপটি ওয়ালাদের দৌরাত্ম্যে এখন অসহায় ভ্রমণপিপাসুরা। বসে থাকা তো দূরের কথা হেঁটে যাওয়ার মতো রাস্তাও মেলে না। রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার সামনেও একই অবস্থা। পদ্মা নদীর বাঁধে বেড়াতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলেজছাত্রী মাহফুজা খাতুন, নগরীর রফিকুল ইসলাম, বাগমারার আরিফ, বাদল, নাজমুলসহ বিভিন্ন এলাকার ভ্রমণপিপাসুরা আক্ষেপ করে বলেন, পদ্মা নদীতীরে কারও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো দখল করে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে। তাদের অভিযোগ বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কিংবা বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না চটপটিওয়ালাদের অবৈধভাবে দখলের কারণে। তারা বলেন, চেয়ারে বসলেই তাদের চটপটি ও ফুচকাসহ কিছু না কিছু খেতে হয়। না খেলেই তুলে দেয়া হয় চেয়ার থেকে। চেয়ারে না বসলে তো সেখানে তো আর বসার জায়গা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে অনেক দেশী-বিদেশী পর্যটক আসেন। তবে পদ্মাপাড়ের পরিবেশ দেখে তারা অস্বস্তি বোধ করেন। অনেকে ক্ষোভে ফিরে যান। অনেকে অবৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গ-গোলও বাধান। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের টহল দল থাকলেও তারাও অসহায় স্থানীদের দৌরাত্ম্যে। সেখানে দায়িত্বরত নগরীর রাজপাড়া থানার এসআই মোতালেব বলেন, অবৈধ ব্যবসা উচ্ছেদে তাদের কোন নির্দেশনা নেই। তারা (পুলিশ) শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখেন। তবে নির্দেশনা পেলে তারা একদিনের মধ্যে চটপটিওয়ালাদের উচ্ছেদ করে টি-বাঁধের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবেন বলে তিনি জানান। এদিকে শুধু টি-বাঁধ নয়, নদীতীর ঘেঁষা শিমলা পার্ক, বিজিবি পার্ক, লালন শাহ পার্ক ও পদ্মা গার্ডেন এলাকাতে একই অবস্থা। সবখানেই যেন রেস্তরাঁ খুলে ব্যবসার ফাঁদ পাতা হয়েছে। পদ্মার টি-বাঁধের চটপটি ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন, সাহেব, ওবায়দুল, মজিবুর, শহিদুল, মিলন ও নুরুলের দাবি পদ্মা পাড়েই তাদের চেয়ারেই ব্যবসা চলে। এই ব্যবসা করে তাদের সংসার চলে। সামনের দিকে চেয়ার না দিলে বেড়াতে আসা লোকজন চেয়ারে বসে না এবং তাদের চটপটিও খায় না। এই জন্য তারা বাঁধের সামনের দিকে চেয়ার বসিয়ে ব্যবসা করছেন। তারা বলেন, মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখার মতো সময় তাদের নেই। টি-বাঁধসংলগ্ন রৃজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন শেখ বলেন, তিনিও দ্রুত টি-বাঁধ দখলমুক্ত চান। তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়ীরা নেতাদের মদদে, তাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছেন। এ কারণে তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা সিটি কর্পোরেশন থেকেও এসব ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনিও অভিযোগ পাচ্ছেন। নদীতীরের ব্যবসায়ীদের একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
×